দীর্ঘ ২৩ বছরের দাম্পত্যে প্রতিকূলতার কাছে হার মানেননি একদিনও। মুখে শব্দ নেই, কানে শব্দ পৌঁছায় না, কিন্তু চোখে-চোখে, ইশারায় চলে তাদের ভালবাসা, পরিশ্রম আর সংসারের হিসেব। দীনবন্ধু মঞ্চের সামনে ছোট্ট একটি গুমটি দোকানই তাদের জীবনের রূপরেখা বদলে দিয়েছে। দিনভর সেই দোকানে চা-বিস্কুট বিক্রি করেন উত্তম। পাশে আরেকটি ছোট ঠেলাগাড়িতে বসেন স্ত্রী উজ্জ্বলা। ক্রেতা এলে হাত ও চোখের ইশারায় বোঝেন— ‘কে কী চাইছেন’, ‘চিনি লাগবে কিনা’, ‘ক’টা বিস্কুট দিতে হবে’। আশপাশের মানুষও এখন অভ্যস্ত। অনেকেই বলেন, “ওদের হাসিটা যেন নিজের দিনটাকেও ভাল করে দেয়।”
advertisement
আরও পড়ুন: ‘বিহার ভোট থেকে নজর ঘোরানোর কৌশল,’ রাহুল গান্ধির ভোটচুরির অভিযোগে প্রতিক্রিয়া বিজেপির
দীর্ঘদিন ধরে উত্তম একাই দোকান চালাতেন। কিন্তু সংসারের ব্যয়, মেয়ের পড়াশোনার খরচ, আর প্রতিদিন বাড়তে থাকা মূল্যবৃদ্ধি— সব মিলিয়ে একা পেরে ওঠা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই বছর খানেক আগে উজ্জ্বলাও দোকানে নামেন। এখন দু’জনে মিলে প্রায় ছ’ থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার করেন। সেই আয়েই চলে সংসার, চলে মেয়ে প্রিয়ার পড়াশোনার খরচ। মাধ্যমিক শেষ করেছে প্রিয়া, বাবা-মায়ের স্বপ্ন— ও যেন আরও পড়ে, বড় হয়।
সকালে সাইকেলে চেপে বাজারে যান উত্তম। দোকানের জিনিসপত্র আনেন। কখনও ইশারায় উজ্জ্বলার সঙ্গে ব্যবসার পরিকল্পনা করেন— কীভাবে দোকানটা একটু বড় করা যায়, আর কী নতুন জিনিস আনা যায়। কথা বলতে না পারলেও তাদের চোখে-মুখে জ্বলজ্বল করে অদম্য জেদের আলো।শিলিগুড়ি দীনবন্ধু মঞ্চের পাশে থাকা ডিস্ট্রিক্ট লাইব্রেরি, মহকুমা আদালত আর বয়েজ হাইস্কুলের ভিড়ের মধ্যেও আলাদা করে চোখে পড়ে এই নীরব দম্পতির হাসিমুখ। কেউ এসে চা খান, কেউ বিস্কুট নেন— কিন্তু সবাই একবার অন্তত তাকিয়ে থাকেন ওদের দিকে। কারণ ওরা প্রমাণ করেছে— “ভালবাসা ভাষায় নয়, সাহসে বাঁচে।”





