এলাকার জোসেফ বুরের বাড়িতে দুটো বড় কাঠের খুটিতে লোহার পাইপে ঝোলানো রয়েছে একটি বড় পিতলের ঘণ্টা। ঘণ্টাটি এমন ভাবে লাগানো রয়েছে যাতে কাঠের প্লানকিং ঘরের জানালা থেকে রশি দিয়ে টেনে সহজেই এই ঘন্টা বাজানো যায়। রাতে এলাকায় হাতি ঢুকলেই জোসেফরা ঘর থেকে ঘন্টার রশি ধরে টান দিতেই ঢঙ ঢঙ করে ঘন্টা বেজে ওঠে। আর তাতেই গোটা পাম্পু বস্তি সতর্ক হয়ে যায়। যে যার বাড়িতে সাবধান হয়ে যায়। বাড়ির আলো জ্বেলে সজাগ দৃষ্টি রাখেন সকলে। আর এতেই হাতির হামলা থেকে এলাকার ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির হার ঘটনা কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।
advertisement
আরও পড়ুন - বউকে খরপোষের টাকা না দিয়ে মুম্বইয়ে আত্মগোপন, আর্থিক বিশ্লেষককে খুঁজে ঢোকানো হল জেলে
বন দফতরের পক্ষ থেকে দীর্ঘ সাত বছর আগে এই ঘণ্টা দেওয়া হয়েছে। জোসেফ বুর বলেন, “ আমরা বলা চলে বনাঞ্চলের ভেতরেই থাকি। এই এলাকায় হাতির হামলা নিত্যদিনের ঘটনা। কিন্তু সকলে সতর্ক থাকলে হাতি সাধারনত প্রান হানির ঘটনা ঘটায় না। সামান্য যা ফসলের ক্ষতি করে। এই ঘন্টা বাজালেই গ্রামের সকলে সতর্ক হয়ে যায়। সকলেই বুঝে যান গ্রামে গজরাজ ঢুকে পরেছে। ফলে সকলেই আলো জ্বেলে দেন। টর্চ দিয়ে ঘর থেকেই বাড়ির বিভিন্ন এলাকা দেখেন। এভাবে গত সাত বছরে আমাদের গ্রামে হাতির হামলায় কোন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
সামান্য ঘন্টা বাজিয়েই যেন গোটা ডুয়ার্সের বিভিন্ন বনাঞ্চলকে পথ দেখাচ্ছে রাজাভাতখাওয়ার পাম্পু বস্তি। ঘন্টা বাজিয়েই এই গ্রাম হাতির হামলা থেকে প্রান হানির ঘটনা আটকে দিয়েছে। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকর্তা অপূর্ব সেন বলেন, “ বন বস্তির ইতিহাস অনেক দিনের পুরনো। সব এলাকাতেই বুনো মানুষে অনেকটা একসঙ্গে থাকার মতো অবস্থা। ফলে বিভিন্ন জায়গায় বুনো জন্তুদের হামলা থেকে বাচতে নানান পরিবেশ বান্ধব কৌশলও অনেক দিনের পুরনো। এর ফলে পরিবেশের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। আবার মানুষও রক্ষা পাচ্ছে। বন দফতর এই ঘন্টা দিয়েছে শুনেছি। মানুষের কাজে লাগছে এটাই ভালো দিক। ” কিন্তু এই ঘন্টা জোসেফ বুরের বাড়িতেই কেনো? স্থানিয়রা জানাচ্ছেন জোসেফের বাড়ির পাশেই রয়েছে একটি চার্চ। আর হাতি প্রায় প্রতিদিন ঐ চার্চের পেছন দিয়ে গ্রামে ঢোকে। আর সেই কারনে গ্রামে হাতি ঢুকলে প্রথমেই টের পায় জোসেফরা। সেই কারনে জোসেফের বাড়িতে এই ঘন্টা বাধা হয়েছে।