স্নাতকোত্তর স্তরের চতুর্থ সেমেস্টারের ছাত্রী কণার গবেষণার সম্পূর্ণ বিষয় ‘‘গ্রামীণ চপশিল্প এবং সংসার পরিচালনায় তার প্রভাব৷’’ তাঁকে এই বিষয় নির্বাচনে সাহায্য করেছেন অধ্যাপক তাপস পাল ৷ ভূগোলের এই অধ্যাপকের কথায়, প্রান্তিক অর্থনীতি নিয়ে তাঁদের গবেষণা এই প্রথম নয় ৷ তাঁরা এর আগে মুচি, ক্ষৌরকার, ঠেলাচালক-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা করেছেন ৷ অসংগঠিত অর্থনীতিতে দেশের ৮৩ শতাংশ মানুষ কর্মরত৷ তাঁদের কথা তুলে ধরা হবে না কেন? প্রশ্ন তাপসের ৷
advertisement
গবেষণাপত্রে বিভিন্ন তেলেভাজার দোকানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাগত অবস্থানও দেওয়া আছে৷ রয়েছে এই শিল্প থেকে গড় আয়ের খতিয়ানও৷ গবেষণাপত্রে দাবি, তেলেভাজার দোকান থেকে মহিলাদের মাসে উপার্জন হয় গড়ে ৯ হাজার টাকা ৷ পুরুষদের ক্ষেত্রে এই অঙ্ক ৯ হাজার থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত ৷ দেশের অর্থনীতিতে এই অবদান সামান্য হলেও তা তুলে ধরা হবে না? সমালোচকদের কাছে জিজ্ঞাসা তাপসের৷ তবে সমালোচনাকেও স্বাগত জানিয়েছেন তিনি ৷ বলেছেন, সমালোচমা হলে সেটাই কোনও গবেষণার সার্থকতা ৷
আরও পড়ুন : জাতীয় সড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কারখানায় ঢুকে গেল বাস, নিহত ১, আহত ২০
ইউজিসি-র নিয়ম অনুযায়ী, স্নাতকোত্তর স্তরে কোনও কোনও বিষয়ে ডিসার্টেশন বা গবেষণাপত্র জমা দিতে হয় ৷ কার্যত প্রাথমিক স্তরে গবেষণায় হাতেখড়িও বলা যায় একে৷ সেই পর্যায়ে এক ছাত্রীর কাজ নিয়ে এত আলোচনা কেন নেটমাধ্যমে? কারণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তেলেভাজাকে উল্লেখ করেছিলেন চপশিল্প বলে ৷ কোনও কাজই যে ছোট নয়, সেই প্রসঙ্গে তিনি চপশিল্পের কথা বলেছিলেন ৷ ঘটনাক্রমে নেটমাধ্যমে যে ছবি ভাইরাল হয়েছে সেখানে দেখা যাচ্ছে ‘গবেষণায় চপশিল্প’ শিরোনামের উপরে লেখা রয়েছে ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চপশিল্প ধারণায় অনুপ্রাণিত হয়ে’৷
ঝড়ের গতিতে ভাইরাল হওয়া ছবি দেখেই বিষয়টি জানতে পারেন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বাণিজ্য ও আইন বিভাগের ডিন অধ্যাপক দীপককুমার রায়৷ বললেন, ‘‘সমালোচনা করার আগে কিন্তু ভাল করে জেনে নেওয়া দরকার৷ যে গবেষণাপত্র জমা পড়েছে তাতে কি সত্যি ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চপশিল্প ধারণায় অনুপ্রাণিত হয়ে’ লাইনটি লেখা আছে? সঠিক তথ্য জানার পরই সমালোচনা করা উচিত৷’’ মনে করেন এই অধ্যাপক ৷
আরও পড়ুন : গর্ভের দ্বিতীয় সন্তানকেও শেষ করল স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন,পুলিশের কাছে বধূ
কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় অধ্যাপকরাই এই ডিসার্টেশনের মূল্যায়ন করেন ৷ এ ক্ষেত্রেও তা করা হবে ৷ কিন্তু গবেষণালব্ধ তথ্য কি পাঠানো হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে? এ প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক তাপস পাল বলেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত তাঁদের কাছে পাঠানো হবে গবেষণার সারমর্ম৷
পরে কী হবে, সময়ই বলবে৷ আপাতত হাতেগরম চপের স্বাদে মশগুল সোশ্যাল মিডিয়াও মুচমুচে হয়ে আছে৷