কিন্তু যুগ বদলের সঙ্গে সঙ্গে বৈদ্যুতিক পাখা কিংবা এসি থেকে শুরু করে প্লাস্টিকের হাত পাখার দাপটে হারিয়ে যেতে বসেছে তালপাতার পাখা। তবুও এই পরিস্থিতিতে স্রোতের প্রতিকূলে হেঁটে অদম্য লড়াই লড়ছেন ৯৫ বছরের বৃদ্ধ প্রভাস মহন্ত। আজকের প্রজন্মে আর কেউ হাতপাখা তৈরির কারিগর হতে চায় না। কিন্তু প্রবাসবাবু আজও একান্তে তৈরি করে চলছেন একের পর এক তালপাতার হাতপাখা। একটা সময়ে এই এলাকা বহু মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে সেই সংখ্যা হাতে গোনা।
advertisement
আরও পড়ুন: বুমেরাং-এর বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ হয় জানতেন? এই খেলায় রাজ্যের একমাত্র খেলোয়াড়কে চিনুন
বিভিন্ন মেলায় এই হাতপাখার পসরা সাজিয়ে বসে থাকেন গুটিকয়েক মানুষ। তাঁদেরই একজন হলেন বালুরঘাট ব্লকের চকভৃগু গ্রামপঞ্চায়েতের প্রবীণ প্রভাস মহন্ত। তিনি নিজেই জানান, তালগাছে উঠে তালপাতা, বাঁশের কি, গাছের পাতলা বাকল সহ বিভিন্নরকম সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত বিপদের মুখে পড়তে হয় প্রবীণ কারিগরকে। এমনকি বাজার দরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাত পাখার সরঞ্জামের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১০০ টা হাত পাখা তৈরি করেন। গ্রামের কিছু মানুষ এখনও তা কেনেন। কিন্তু সেই চাহিদাও ক্রমশ কমে আসছে। এই বৃদ্ধ কারিগরের মতে, একমাত্র সরকারের থেকে সাহায্য পেলে তবেই এই প্রাচীন শিল্প বেঁচে থাকতে পারবে।
আরও পড়ুন: ঠিক যেন সিনেমা! স্নান করতে নেমে নদীতে ডুবতে বসেছিল ২ যুবতী, ছুটে এসে বাঁচালেন টোটো চালক
আধুনিকতার ছোঁয়ায় তালপাতার পাখার ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নেই বললেই চলে। বর্তমানে হাতে তৈরি এই পাখার প্রচলন তেমন না থাকার ফলে নেই এই হাতপাখা তৈরির কারিগরেরাও। যদিও একসময় রাজ আনুকূল্যে এই পেশার ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। তারপরে ব্রিটিশ রাজ থেকে শুরু করে জমিদারি ব্যবস্থাতে বড় বড় তালপাতার পাখার ব্যবহার প্রচুর পরিমাণে ছিল। কালের আবর্তে এই প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী হাতপাখা আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে হাল ছাড়তে রাজি নন প্রভাস মহন্ত। গত ৪০ বছর ধরে তিনি এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। কয়েক দশক আগের মত এখনও তাঁকে হাতপাখা তৈরির কাজে সাহায্য করে চলেন তাঁর স্ত্রী। তবে আর কতদিন, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
সুস্মিতা গোস্বামী