যেন শীতের নরম আদর মাখানো রোদ পোহাচ্ছে সে। কোথাও আবার ন্যাড়া দেওয়ালে ঝুলছে ঢোল। সারা শরীরে কাদা মেখে। দু’মুঠো অন্নের খোঁজে ত্রাণে পাওয়া ডালের প্যাকেট খোলার চেষ্টা বছর আশির বৃদ্ধা ঝঙ্কার রায়৷ আর ওই দিকে চোখের জলে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে আরতি সরকার। আরতি বলে ওঠে, কেউ কি নিজের মেয়েকে মেরে ভাসিয়ে দিতে চায়৷ প্রতিমাসে মেয়ের রক্ত লাগে। ওর রক্তের অসুখ আছে৷ সব কাগজ ভেসে গিয়েছে। ভেসে গিয়েছে মেয়ের চিকিৎসার কাগজ। আমার সরকারের কাছে অনুরোধ আমার মেয়েকে বাঁচান। দুই মেয়েকে নিয়ে জীবন যুদ্ধে অবতীর্ণ আরতি। হারিয়েছেন সব কিছু৷ ঘরে নেই কিছুই। গয়না থেকে চাল-ডাল। জলঢাকার জলে ভেসে গিয়েছে সব। গ্রামে ত্রাণ আসলে হামলে পড়ছে সকলে। খিদের জ্বালায় অসহায় মুখগুলো ভুলেছে লজ্জা।
advertisement
অঞ্জলি সরকার গ্রামের বাসিন্দা বলছে, আমাদের খাবার নেই৷ বাচ্চাগুলোকে শুকনো খাবার দিয়েছি কিছু৷ আর ভাল লাগছে না। আমাদের গেরস্থালীর কোনও জিনিস নেই৷ আমার গয়নাও গা থেকে খুলে চলে গেছে। ভেসে গিয়েছে আমার পোষাক। সেদিন প্রায় ১৫ ফুট উঁচু জল এসেছিল জলঢাকার বাঁধ ভেঙে। ভাসিয়ে দিয়েছে গ্রাম দিয়ে যাওয়া রেল লাইনকে। গ্রামের চা বাগান নষ্ট। ভেঙে পড়েছে একের পর এক বাড়ি৷ পলিমাটি আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রেখেছে ধানের শীষকে।
এর মধ্যেই আবার ভয় ধরাচ্ছে সাপ। কখন যে কার ভাঙা ঘরে ঢুকে আছে কেউ জানে না। মেনকা সরকার, গ্রামবাসী বলছে, ঘরের মধ্যে সাপ ঢুকে বসেছিল। এই বন্যায় সবই তো হারিয়েছি৷ আর কিছুই নেই আমাদের। সাজানো গ্রাম দেখলে মনে হবে মৃত্যুপুরী। কতটা জল এসেছিল তা মাপতে মাপতেই অজানা আতঙ্কের সঙ্গে লড়াই করছে ময়নাগুড়ির একাধিক জনপদ।