আরও একটু অবাক হতে হবে কৌতূহলের কারণ বা প্রশ্নের উত্তর জানলে। এ ছবি পুরাতন মালদহ মৌলপুর গ্রামীণ হাসপাতালে, যেখানে সদ্যোজাত কন্যা সন্তানকে সানন্দে বাড়ি নিয়ে যেতে এলাহী আয়োজন পরিবারের।
এখনও আমাদের সমাজের অন্ধকারতম দিক হল কন্যা সন্তানের প্রতি উপেক্ষা। কন্যা সন্তান হলে পরিবারের লোকের মনমরা ভাব, মুখ বেজার হওয়া অথবা কন্যাসন্তান জন্মের জন্য দায়ী করে প্রসূতি অত্যাচারের ঘটনাও কম নয়।
advertisement
এমন এক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সমাজ সচেতনতার বার্তা দিলেন পুরাতন মালদহের এক সংখ্যালঘু পরিবার।
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর আলিপুরদুয়ার সফরের মাঝেই ভয়ঙ্কর ঘটনা, চা বাগানে মিলল তরুণীর দেহ!
ওই পরিবারের দুই ছেলের পর মেয়ের জন্ম হওয়ায় উচ্ছ্বসিত তাঁরা৷ বুধবার রীতিমতো উৎসবের মেজাজে হাসপাতাল থেকে সদ্যোজাতকে ঘরে নিয়ে গেল পরিবার৷ তাঁদের উচ্ছ্বাসে আপ্লুত সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর্মীরাও৷ কারণ, সকলের মিষ্টিমুখ থেকে শুরু করে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রত্যেকের সংবর্ধনার আয়োজন করে পরিবার।
সোমবার পুরাতন মালদার মৌলপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি হন মঙ্গলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের মৌলপুর বাঁশহাট্টা এলাকার গৃহবধূ হাসমিনারা বিবি৷ সেদিনই কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি৷ বুধবার হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় হাসমিনারাকে৷ নবজাতককে বাড়ি নিয়ে যেতে রীতিমতো রাজকীয় ব্যবস্থা করেছিলেন হাসমিনারার ব্যবসায়ী স্বামী ফিরোজ আলি৷ বড় একটি চারচাকার গাড়ি সাজানো হয়েছিল ফুল দিয়ে৷ মেয়েকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার আগে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের সংবর্ধনা দেওয়ার পাশাপাশি মিষ্টিমুখ করান ফিরোজ-হাসমিনারা।
ফিরোজ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মেয়ের অপেক্ষায় ছিলাম৷ দুটি ছেলে হয়েছে৷ কিন্তু বাড়িতে কন্যা সন্তান না থাকায় আনন্দ যেন অসম্পূর্ণ ছিল। অবশেষে ইচ্ছে পূরণ হওয়ায় আমরা অত্যন্ত খুশি৷ মেয়ের নাম রাখা হয়েছে ফারহানা খাতুন৷।
আরও পড়ুন: হরিপুরা কংগ্রেসের ভাষণ, ছোটদের সঙ্গে লুকোচুরি…এ বাড়িতে ভাসে নেতাজির স্মৃতি
মা হাসমিনারাও কন্যা সন্তান হওয়ার আনন্দে মজে। দুই ছেলের পর কন্যাসন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখিয়ে খুশি হাসমিনারা৷ তিনি বলেন, “আমি আশা করছি, এই মেয়ে ভবিষ্যতে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করবে। আমরা চাই, কেউ যেন মেয়েকে অবহেলা না করেন।”
মৌলপুর গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক বিশ্বেশ্বর সাহা বলেন, কন্যা সন্তান জন্মের পর এত আনন্দ উন্মাদনা সচরাচর দেখা যায় না। আজ ছুটি হওয়ায় তাঁরা মেয়েকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য বিয়েবাড়ির মতো চারচাকার গাড়ি সাজিয়ে এনেছেন৷ হাসপাতালের চিকিৎসক সহ সব স্বাস্থ্যকর্মীকে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা জানিয়েছেন৷ মিষ্টিমুখ করিয়েছেন৷ এত আয়োজনে আমরাও অবাক হয়েছি।