সিপিএমের একলা চলোর সিদ্ধান্তকে হঠকারী বলে তোপ দেগে পাল্টা সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা জানিয়েছে কংগ্রেসও।
পুরভোটে বাম- কংগ্রেস জোট ভেঙে যাওয়াকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল ও বিজেপি। রাজ্যে বাম-কংগ্রেস জোটের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি বলে একসময় চিহ্নিত হয়েছিল মালদহ। ২০১৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মালদহ জেলায় ১২টি আসনের মধ্যে ১১টিতেই জিতেছিল জোট প্রার্থীরা। একই সঙ্গে বাম-কংগ্রেস জোটের দাপটে জেলায় শূন্য হয়ে গিয়েছিল শাসক দল তৃণমূল।
advertisement
এর পর ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও একসঙ্গে লড়ে মালদহ দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্র জিতেছিল কংগ্রেস। যদিও ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে গোটা রাজ্যের মতো জেলায় সুবিধে করতে পারেনি বাম- কংগ্রেস জোট। কিন্তু দুই দলের মধ্যে এতদিন জোট বজায় ছিল। কিন্তু, মালদহে জোটের শক্ত মাটিতে পুরভোটে ভেঙে গেল বাম ও কংগ্রেসের জোট বা সমঝোতা।
আরও পড়ুন: সিপিএম, তৃণমূল, কংগ্রেসের পর এবার বিজেপি, অপরাজিত তকমা ধরে রাখতে পারবেন নান্টু পাল?
সূত্রের খবর, এবারও জেলার দুই পুরসভায় কংগ্রেস জোট বেঁধে লড়াইয়ের জন্য উৎসাহী ছিল। এমন কী, এ বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর সঙ্গেও কথাবার্তা বলেছিলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি আবু হাসেম খান চৌধুরী।
কিন্তু, পুরভোটে মালদহের কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধতে নারাজ সিপিএম। তাই, এতদিনের জোট সঙ্গী কংগ্রেসের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা না করেই পুরভোট ঘোষণার আগেই ইংরেজবাজারের ২৯ টি আসনের মধ্যে ১৬ টি আসনে প্রথম দফায় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে জেলা বামফ্রন্ট। সিপিএম জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র জানিয়েছেন, বাকি ১৩ টি আসনে বামেরাই নিজেদের প্রার্থী দেবে। পুরসভা ভোটে মালদহ জেলার কোথাও কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও রকম জোট করা হবে না।
জোট ভেঙে যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে সিপিএম জেলা সম্পাদকের দাবি, 'এবারে কংগ্রেসের তরফ থেকেও আসন সমঝোতা নিয়ে কোনও বার্তা আসেনি। বামেরাও কোনো রকম বার্তা কংগ্রেসকে দেয়নি৷'
জোট ভেঙে যাওয়ায় তাদের কোনওরকম ক্ষতির সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়ে জেলা সিপিএম সম্পাদক আরও দাবি করেছেন, এককভাবেই ইংরেজবাজার পুরসভার বোর্ড দখল করতে সফল হবে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট।
আরও পড়ুন: নদীর পারে জমে গেল ভিড়, দুই শিল্পীর কীর্তি দেখে অবাক মালদহ!
যদিও সিপিএম তথা বামেদের আলাদা লড়াইয়ের সিদ্ধান্তে বেজায় ক্ষুব্ধ জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব। কংগ্রেসের স্পষ্ট দাবি, সিপিএমকে জোট করে লড়াইয়ের কথা জানিয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, সিপিএম হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রণব ভট্টাচার্য বলেন, 'আসন সমঝোতা না হওয়ায় সুবিধা পাবে শাসক দল তৃণমূল।' এবার কংগ্রেসও তৃণমূল আর বিজেপির পাশাপাশি সিপিএমের বিরুদ্ধে সব আসনে একাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে পাল্টা হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
প্রসঙ্গত কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে ছাড়াই লড়ে তুলনামূলক ভাবে ভাল ফল করে বামেরা৷ এর পর থেকেই সিপিএম সহ বামফ্রন্টের অন্দরে একলা চলোর তত্ত্ব আরও জোরালো হয়েছে৷ মালদহেও সেই প্রমাণ মিলল৷
তবে, সিপিএম ও কংগ্রেসের জোট ভেস্তে যাওয়াকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল ও বিজেপি। তাদের দাবি, বাম ও কংগ্রেস প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। বিধানসভা ভোটে সাধারণ ভোটাররা জোটকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এই অবস্থায় জোট হোক বা না হোক, তা নিয়ে ভাবতে নারাজ তৃণমূল ও বিজেপি শিবির।