‘মরেও শান্তি নেই’, ধূপগুড়ি পৌর মহাশ্মশানে এই কথাটির বাস্তব চিত্র ধরা পড়ল। বৈদ্যুতিক চুল্লির অব্যবস্থা ও কর্মীদের অনুপস্থিতিতে চরম হয়রানির শিকার হলেন মৃতের পরিজনরা। একাধিক মৃতদেহ নিয়ে আসা পরিবারকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হওয়ায় শ্মশান চত্বরে সৃষ্টি হয় তীব্র উত্তেজনা।
advertisement
দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর মঙ্গলবার সকালে মৃত্যু হয় ধূপগুড়ি পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের রবীন্দ্রনগর কলোনির বাসিন্দা বাবুন চক্রবর্তীর (৬৫)। সকাল ন’টা নাগাদ মৃতদেহ নিয়ে পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা ধূপগুড়ি পৌর মহাশ্মশানে পৌঁছন। কিন্তু সেখানে গিয়ে তাঁদের চরম বিপাকে পড়তে হয়। প্রায় ৩ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বৈদ্যুতিক চুল্লির সামনে পড়ে থাকে মৃতদেহ। দীর্ঘ সময় শ্মশানে কর্তব্যরত কর্মীদের দেখা মেলেনি।
একই সময়ে ধূপগুড়ির ডাউকিমারি এলাকা থেকে আরেকটি মৃতদেহ নিয়ে মহাশ্মশানে পৌঁছয় পরিবার। বৈদ্যুতিক চুল্লিতে সৎকারের আশায় তাঁরা শহরের শ্মশানে আসলেও শেষ পর্যন্ত তাঁরাও অব্যবস্থার শিকার হন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর জানা যায়, চুল্লিটি সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে রয়েছে। ফলে বৈদ্যুতিক চুল্লিতে সৎকার সম্ভব নয়।
এই পরিস্থিতিতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন মৃতের পরিজনরা। শ্মশান চত্বরে শুরু হয় বিক্ষোভ। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, একসময় ক্ষুব্ধ স্বজনহারারা মহাশ্মশানের মূল গেট বন্ধ করে দেন। তাঁদের অভিযোগ, যেখানে সৎকারের ন্যূনতম ব্যবস্থা নেই, সেখানে শ্মশান খোলা রাখার কোনও অর্থ হয় না। শেষ পর্যন্ত ডাউকিমারি এলাকার পরিবারটি বাধ্য হয়ে মৃতদেহ নিয়ে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে নিজ এলাকার শ্মশানে ফিরে যান। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন মৃতের আত্মীয় স্বজনেরা।
উল্লেখ্য, ধূপগুড়ি পৌর মহাশ্মশানে এই ধরনের ঘটনা নতুন নয়। ২০২৩ সালের অগাস্ট মাসেও বৈদ্যুতিক চুল্লির অব্যবস্থাকে ঘিরে একই রকম সমস্যার মুখে পড়েছিলেন একটি পরিবারের সদস্যরা। শহরের বাইরে থেকে মৃতদেহ নিয়ে এসে সৎকার করতে গিয়ে সেই সময়ও চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছিল তাঁদের।
বর্তমান সময়ে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ কঠিন হওয়ায় বহু পরিবারই বৈদ্যুতিক চুল্লিতে সৎকারের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু ধূপগুড়ি পৌর মহাশ্মশানের চুল্লি অকেজো থাকায় মৃতদেহ নিয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কখন চুল্লি ফাঁকা হবে, কখন সৎকার সম্ভব হবে, এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই মৃতের পরিজনদের চরম দুর্বিষহ সময় কাটছে।
এই ঘটনার ফলে আবারও ধূপগুড়ি পৌর মহাশ্মশানের পরিকাঠামো ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন উঠল। শ্মশানের মতো একটি সংবেদনশীল স্থানে ন্যূনতম ব্যবস্থার অভাব সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলছে এমনটাই মনে করছেন এলাকাবাসী।
