ঘটনার শুরু কিছুদিন আগে। সম্প্রতি পরিবারের অমতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান ওই তরুণী। গত মঙ্গলবার তিনি বিয়ে করেন এক ভিন ধর্মের যুবককে। পরিবার বহুবার বোঝানোর চেষ্টা করেছিল, মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিল — এমনই দাবি মেয়ের বাবা-মার। কিন্তু অনড় ছিলেন নিজের সিদ্ধান্তে। শেষমেশ ‘সম্মান রক্ষার’ নাম করে জীবিত মেয়েকে সমাজচ্যুত করারই রাস্তায় হাঁটে পরিবার।
advertisement
বর্ষায় ঘরে-বাইরে কিলবিল করছে সাপ? দরজার সামনে ছিটিয়ে দিন এই ‘গুঁড়ো’! সুরক্ষিত থাকবে পরিবার ও সন্তান!
শুক্রবার গ্রামের মধ্যেই মেয়ের প্রতিকৃতি হিসেবে কুশপুতুল তৈরি করে সেটি দাহ করা হয়। শনিবার সেই ‘মৃত’ মেয়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানও হচ্ছে বলে পরিবার সূত্রে খবর। শুধু তাই নয়, আত্মীয়-পরিজন আর প্রতিবেশীদের সামনে তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেয় — এখন থেকে মেয়ের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। কান্নায় ভেঙে পড়েন নেহার মা, পরিবার দাবি করেছে — মেয়ের এই ‘ভুল পদক্ষেপ’ যাতে আর কেউ না নেয়, সেটাই তাদের এই কঠোর পদক্ষেপের উদ্দেশ্য।
ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একাংশ বলছেন — ‘‘ভালোবাসা আর বিয়ে ব্যক্তিগত বিষয়, এখানে ধর্ম বড় হতে পারে না।’’ আবার গ্রামের কিছু মানুষ পরিবারকেই সমর্থন করেছেন — ‘‘মেয়ে যদি পরিবারের কথা না শোনে, তাহলে এমন সিদ্ধান্তই স্বাভাবিক!’’
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবিত অবস্থায় এভাবে কাউকে ‘মৃত’ ঘোষণা করে সম্পর্ক ছিন্ন করা মানসিক নির্যাতনেরই আরেক রূপ। সামাজিকভাবে এমন বার্তা আরও বহু ছেলেমেয়েকে ভয় ধরিয়ে দিতে পারে। অনেকে বলছেন, এটি প্রতীকী ‘অনার কিলিং’-এর মতো — শুধু শারীরিক হত্যার বদলে সম্পর্কচ্ছেদ ও প্রতীকী মৃত্যুর মাধ্যমে শাস্তি। আইনজীবীরা বলছেন — প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে নিজের সিদ্ধান্তে বিয়ে করলে তাতে পরিবার আইনি বাধা দিতে পারে না। এমনকী পরিবারের এই প্রতীকী ‘সৎকার’ও কোনও অপরাধ নয়, তবে অপমানজনক এবং মানসিক আঘাতজনক হিসেবে গণ্য হতে পারে। মেয়েটি চাইলে মানহানির মামলা করতে পারেন বলেই মত অনেকের। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন — ‘‘একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে ধর্মের ভিত্তিতে এখনো সম্পর্ক ভাঙা হচ্ছে। এই ‘সম্মান রক্ষার’ নামে কতদিন ছেলেমেয়েরা স্বাধীনভাবে ভালোবাসার অধিকার হারাবে?’’
ভোটকিরহাটের এই ঘটনা একদিকে যেমন অন্ধপ্রথার নগ্ন রূপ দেখাল, তেমনই নতুন প্রজন্মকে আবার প্রশ্ন করতে শিখিয়ে গেল — ‘ভালোবাসা কি ধর্মের চেয়ে ছোট?
ঋত্বিক ভট্টাচার্য