দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে এই এলাকায় দোকান চালাচ্ছেন তিনি। শুরুটা হয়েছিল ভাতের হোটেল দিয়ে। কিন্তু হোটেলের ব্যবসা জমছিল না তেমন। এরই মধ্যে জীবনের এক বড় ধাক্কা, স্ত্রীর মৃত্যু। সেই দুঃসময়ে ভেঙে পড়লেও, থেমে যাননি কিশোর। এক গুচ্ছ স্বপ্ন চোখে নিয়ে শুরু করেন চায়ের দোকান।
বৃষ্টি পড়লে ফ্রিজের তাপমাত্রা কেমন হওয়া উচিত? খাবারও থাকে জীবাণুমুক্ত, মেশিনও ঠিকঠাক চলে!
advertisement
চা-র স্বাদ আর নিজের আন্তরিকতায় তিনি জিতে নেন এলাকার ছেলেমেয়েদের মন। কলেজপড়ুয়া থেকে মধ্যবয়স্ক, সকলেই তার দোকানে ভিড় জমাতে থাকেন। সেই ছোট্ট দোকান রূপ নেয় এক আড্ডা ঘরে, যেন এক ক্ষুদ্র কফি হাউস।
একদিন হঠাৎ কিছু কলেজ পড়ুয়া তাকে ঠাট্টা করে ডেকে ওঠে, ‘জ্যাকি দা’। প্রথমে অবাক, পরে বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করেন কিশোরবাবু, “এই নাম কেন?” জবাবে তারা বলে, “আপনি দেখতে অনেকটা জ্যাকি শ্রফের মতো, তাই আপনি এখন থেকে আমাদের ‘জ্যাকি দা’!” আর তাতেই তৈরি হয় এক নতুন পরিচয়, এক নতুন গল্প।
আজ জ্যাকি দার দোকানে কাঠের দেওয়ালে ফুটে ওঠে ইতিহাস। কাস্টমারদের হাতে আঁকা পেইন্টিং, লেখা নানা প্রবাদবাক্য ও স্মৃতিচিহ্ন সেই দোকানটিকে করে তুলেছে এক জীবন্ত স্মৃতিপট।
অনেক পুরনো কাস্টমার এখন বাইরে থাকলেও মাঝেমধ্যে ফিরে এসে স্মৃতিচারণ করেন সেই কাঠের ছোট দোকানের কোণায়। আর জ্যাকি দা? তিনিও আবেগে ভেসে যান অতীতের সেই সময়গুলোতে।
এই ভাবেই এক সাধারণ দোকানদার হয়ে উঠেছেন এক অসাধারণ স্মৃতির আধার। আজ সুভাষপল্লী মানেই ‘জ্যাকি দা’, একজন মানুষ, যিনি শুধু চা নয়, পরিবেশন করেন ভালবাসা, গল্প আর একটুকরো নস্টালজিয়া।
ঋত্বিক ভট্টাচার্য