সুন্দরবনে কুমিরের আক্রমণে গুরুতর আহত ১১ বছর বয়সি রাজাকে ২০০৮ সালে আলিপুর চিড়িয়াখানা হয়ে দক্ষিণ খয়েরবাড়িতে আনা হয় ৷ তার বাঁ দিকের পিছনের পা খুবলে খেয়েছিল সুন্দরবনের কুমির ৷ এই আঘাতের ফলে সে সময় তাকে বাঁচিয়ে রাখাই দুষ্কর হয়ে পড়েছিল ৷ প্রথমে আলিপুর চিড়িয়াখানায় চলেছিল চিকিৎসা ৷ তার পর তাকে আনা হয় জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের দক্ষিণ খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে ৷ কিন্তু আবার সে অসুস্থ হয়ে পড়ে ৷ শেষ অবধি পশু চিকিৎসক ও বনকর্মীদের অক্লান্ত চেষ্টায় একটু একটু করে সুস্থ হয়ে ওঠে বনের রাজা ৷
advertisement
এ বার অবশ্য তাঁদের হার মানতে হল ৷ বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু হল ২৫ বছর বয়সি এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ৷ তার চলে যাওয়ায় মন ভাল নেই খয়েরবাড়ি বাঘ পুনর্বাসন কেন্দ্রের ৷ নিথর রাজার কাছে এসেছিলেন জলদাপাড়া ও আলিপুরদুয়ারের প্রশাসনিক কর্তারা ৷ পূর্ণ সম্ভ্রমে পালন করা হয় রাজার শেষকৃত্য৷ তার অন্ত্যেষ্টির ছবি ও ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছে রাজ্য সরকারের বন দফতর ৷ সেখানে রাজার স্মৃতিতে উঠে এসেছে পশু চিকিৎসক প্রলয় মণ্ডল এবং ওয়াইল্ডলাইফ গার্ড পার্থসারথি সিনহার কথা ৷ তাঁদের পাশাপাশি রাজাকে সুস্থ করে তোলার ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয় অন্যান্য বনকর্মীর ভূমিকাও ৷
আরও পড়ুন : কাদাস্রোত এখন প্রায় পাথর, অমরনাথ বিপর্যয়ে নিখোঁজদের জীবিত উদ্ধারের আশা ক্ষীণ
২০০৮-এর ২৩ অগাস্ট থেকে খয়েরবাড়ির বাঘ পুনর্বাসন কেন্দ্রই ছিল রাজার বন্দিদশার আস্তানা ৷ গত বছর সেখানে আয়োজন করা হয়েছিল তার ২৫ তম জন্মদিনও ৷ রাজার ২৫ পূর্ণ করে ২৬-এ পা দেওয়া উপলক্ষে নেওয়া হয়েছিল বাঘ ঘিরে সচেতনতা প্রসারের কাজ ৷ করোনা অতিমারির সব বিধিনিষেধ রক্ষা করে ও রাজার অসুবিধে না করেই আয়োজিত হয় সব উদ্যোগ ৷
আরও পড়ুন : বাবা দিনমজুর, ২.৫ কোটির বৃত্তি নিয়ে ছেলে যাচ্ছেন আমেরিকার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে
আরও পড়ুন : জঙ্গল দখলের লড়াই! দার্জিলিংয়ে চিতাবাঘের মর্মান্তিক পরিণতি
সাধারণত বন্দিদশায় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের গড় আয়ু ২২ বছর ৷ সে কথা উল্লেখ করে বন দফতরের পোস্টে লেখা হয়েছে ‘‘প্রবীণতম জীবিত বাঘেদের তালিকায় নিজের জায়গা করে নেয় রাজা, যেখানে বন্দিদশায় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের গড় আয়ু আন্দাজ ২২ বছর। আজ সকালে আমাদের সকলকে শোকস্তব্ধ করে চিরবিদায় নিয়েছে রাজা। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন মাননীয় বনমন্ত্রী শ্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। রাজার বেঁচে ওঠার, এবং নিজের বিচরণভূমির বাইরে দীর্ঘকাল বেঁচে থাকার, কাহিনী পশ্চিমবঙ্গ বনবিভাগের সংরক্ষণের ইতিহাসে এক স্মরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’’ বনকর্মীরা ভুলতে পারছেন না রাজাকে৷ তাঁদের আলোচনায় বার বার ফিরে আসছে রাজার নানা আচরণ৷