শিলিগুড়ির ঘুঘুমালি নেতাজি পাড়ার আম্বেদকর ক্লাব চত্বর। প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে মালাকার পরিবার চিরাচরিতভাবে তৈরি করে চলেছেন মায়ের বুকপাটি থেকে শুরু করে মুকুট—সবই তাদের হাতের কারুকার্যে ফুটে ওঠে। দুর্গাপুজোর আগে দু-তিন মাস ধরে তারা চরম ব্যস্ততার মধ্যে ডুবে থাকেন এই কাজে।
আরও পড়ুন: যানজট, দুর্ভোগ অতীত! এবার স্যাট করে হবে কলকাতা থেকে চেন্নাই যাতায়াত! বড় কাজে নেমে পড়ল NHAI
advertisement
তবে পরিবর্তনের ছাপ পড়েছে এখানেও। একসময় শোলার নকশায় তৈরি হত এই সাজসজ্জা। এখন আর শোলা মেলা সহজ নয়, তাই বাধ্য হয়েই ব্যবহার করতে হচ্ছে থার্মোকল। অথচ বাজারে থার্মোকল নিষিদ্ধ। ফলে সমস্যায় পড়েছেন শিলিগুড়ির এই শিল্পীরা। তারা মনে করেন—“শোলার কাজেই আসল সৌন্দর্য ফুটে ওঠে, কিন্তু দাম এত বেশি যে ক্রেতারা কিনতে চান না। থার্মোকল সস্তা, তাই বিক্রি হয়।”
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
শিল্পী গৌরাঙ্গ মালাকার জানালেন, “দিন দিন কমে যাচ্ছে এই শিল্পের কদর। নতুন প্রজন্ম কেউ এগিয়ে আসছে না। এভাবে চলতে থাকলে হয়ত একদিন শহরের বুক থেকে হারিয়েই যাবে ডাকের সাজ।” অন্যদিকে শিল্পী চঞ্চলা মণ্ডল জানান, “চাহিদা অনেক, কাজের ব্যস্ততাও প্রচুর। কিন্তু সময়ের সঙ্গে লড়াই করতে করতে আমরা প্রায় হিমশিম খাচ্ছি।”
দুর্গাপুজো মানেই বাঙালির আবেগ, উৎসবের উন্মাদনা। সেই আনন্দেরই অপরিহার্য অঙ্গ ডাকের সাজ। অথচ কালের স্রোতে এই শিল্প আজ বিপন্ন। একদিকে শোলার অভাব ও বাড়তি খরচ, অন্যদিকে থার্মোকলের নিষেধাজ্ঞা—দুটোর ফাঁদে পড়ে টিকে থাকতে লড়াই করছেন শিল্পীরা। নতুন প্রজন্মের অনাগ্রহও এই শিল্পকে ক্রমশ হারিয়ে যাওয়ার পথে ঠেলে দিচ্ছে। এখন প্রশ্ন একটাই—ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে আমরা কী আবার ফিরিয়ে আনতে পারব শোলার সেই সোনালি দিন, নাকি হারিয়ে যাবে এই শিল্প স্রেফ ইতিহাসের পাতায়?