দণ্ড মহোৎসবে যোগ দিতে পানিহাটিতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এমনকি ভিন রাজ্য থেকেও বহু মানুষ আসেন। ফলে এক মিলন উৎসবের চেহারা নেয় উত্তর ২৪ পরগনার এই এলাকা। মূলত বৈষ্ণব মতানুসারী ও শ্রীচৈতন্যদেবের ভক্তরা ভিড় জমান এখানে।
আরও পড়ুন: বিকেলে একটা ভিডিও কল, তার পর সব শেষ! চার বছরের শিশুর ভবিষ্যৎ অন্ধকার
advertisement
কথিত আছে, ঐশ্বর্যমণ্ডিত সপ্তগ্রামের রাজার একমাত্র পুত্র ছিলেন রঘুনাথ দাস গোস্বামী। তিনি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর মহিমার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বিপুল ঐশ্বর্য ও তাঁর রূপসী পত্নীকে পরিত্যাগ করেন। মহাপ্রভুর দেখা পেতে তিনি নানা জায়গায় ঘুরতে থাকেন। একদিন প্রভু নিত্যানন্দ অর্থাৎ শ্রীচৈতন্যদেব পানিহাটি গ্রামে এসেছেন শুনে রঘুনাথ দাস গোস্বামী সেখানে যান। সেখানে ভক্তদের ভিড় থাকায় তিনি দর্শনলাভের জন্য আকুল আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকেন। গঙ্গার তীরে যেখানে ভক্তদের সঙ্গে শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু বসে ছিলেন, সেখানে তিনি উপস্থিত হয়ে দূর থেকে দেখলেন গঙ্গাতট আলোকিত করে একটি বৃক্ষমূলে ভক্তপরিবৃত হয়ে শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু বসে আছেন। শ্রীরঘুনাথ তাঁকে দেখেই দূর থেকে ষাষ্টাঙ্গে দণ্ডবৎ হয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এদিকে জমিদার শ্রীগোবর্ধন দাসের পুত্র রুঘুনাথ পানিহাটিতে এসেছেন, এই খবর পেয়ে সারা গ্রামে সাড়া পড়ে যায়। ভক্তরা সেই সংবাদ শ্রীনিত্যানন্দকে জানান। তিনি রঘুনাথের নাম শুনে বলে ওঠেন, ‘ওরে চোরা! এতদিনে দর্শন দিলি! আয়, আয়, আজ তোরে দণ্ড দেব।’ নিত্যানন্দ প্রভু এভাবে আদর করে ডাক দিলেও শ্রীরঘুনাথ দ্বিধা সঙ্কোচে দূরে দূরে থাকছিলেন। তখন শ্রীনিত্যানন্দ তাঁকে জোর করে কাছে টেনে এনে তাঁর মাথায় নিজের পা স্পর্শ করেন৷ এরপর নাকি শ্রীচৈতন্যদেব উপস্থিত ভক্তবৃন্দকে বলেছিলেন, শাস্তিস্বরূপ এখানে উপস্থিত সকলকে রঘুনাথ দাস গোস্বামী আহারে দই-চিঁড়ে খাওয়াবেন। সেই থেকেই প্রতি বছর পানিহাটি মহোৎসবতলা ঘাটে দণ্ড মহোৎসব পালিত হয়ে আসছে। এই উৎসবের প্রধান প্রসাদ ও আয়োজনই হল দই দিয়ে মাখা চিঁড়ে।
এবারের দণ্ড মহোৎসবে ভক্তদের ভিড় থাকলেও তা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশ কিছুটা কম বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। তবে এবার আর কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তীব্র গরমে যেতে কোনও পুন্যার্থী অসুস্থ না হয়ে পড়েন সেই দিকে কড়া নজর রাখা হয়েছে। সর্ব সময়ের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে মেডিকেল টিম।
রুদ্রনারায়ণ রায়