বয়স যখন পাঁচ বছর তখন থেকে খেলাধুলায় পছন্দ ছিল আর পাঁচজন মেয়ের থেকে আলাদা। তখন থেকেই সব ভালোবাসা গড়ে ওঠে ফুটবলকে ঘিরে। পরিবার বলতে বাবা, মা,আর একমাত্র মেয়ে বিপাশা। বাবা বুঝিয়েছিলেন, মেয়েদের ফুটবল নিয়ে কোন ভবিষ্যৎ নেই। কিন্তু মেয়ে ছিল নাছোড়বান্দা। ফুটবল তার লাগবেই। স্মৃতির টুকরো মনে করে বিপাশার বাবা জানালেন, সময় পেলেই পাশের মাঠে চলে যেতো মেয়ে। কিন্তু মাঠে ফুটবল খেলতো শুধু ছেলেরাই। ফুটবলের প্রতি মেয়ের ভালোবাসার টান দেখে এরপর তিনি কিনে দেন প্লাস্টিকের বল।
advertisement
বাবার কিনে দেওয়া বল নিয়েই শুরু মাথায় ব্যালেন্স করে ধরে রাখা। কাঁধে ধরে রাখা। আবার কোনসময় পায়ে ধরে রাখা। এটা ফুটবল জাগলিং। সেই সময় ওই এলাকায় একটা প্রতিষ্ঠানেই শেখানো হত ফুটবল জাগলিং। হতদরিদ্র পরিবার মেয়ের ভালোলাগার পূর্নতা লাভের আশায় ভর্তি হওয়া। তারপর থেকেই শুরু হয়ে যায় বিপাশার ফুটবল জাগলার হওয়ার নতুন স্বপ্ন।
গত প্রায় দশ বছর ধরে ফুটবলার সুব্রত রায় এর কাছে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বিপাশা। বাবা দিনমজুর, মা বাড়ির সামনে একটি ছোট মুদি দোকান চালায়।মা ব্যস্ত থাকলে ফুটবল নিয়ে দোকানে বসে পরে বিপাশাও।পড়াশোনা, খাওয়াদাওয়া যখনই যাই করে তারা সঙ্গী ফুটবল। এমনকি বিছানায় শোয়ার সময়েও তার পাশবালিশ ফুটবল। ফুটবল জাগলার হিসাবে অনেক সম্মানও পেয়েছে বিপাশা। কলকাতা মাঠ সহ বড়বড় ফুটবল টুর্নামেন্টে আমন্ত্রণ পায় অতিথি হিসাবে। খেলার উদ্বোধন হয় বিপাশার ফুটবল জাগলিং দিয়েই।সাম্প্রতিক কন্যাশ্রী কাপের ফাইনালে বিপাশা ফুটবল জাগলিং করে ক্রীড়ামন্ত্রী অরুপ বিশ্বাসেরও নজর কেড়েছে। বিপাশা যে ধরনে জাগলিং করে তা ভারতবর্ষে আর কেউ করে না বলে দাবি তার প্রশিক্ষক সুব্রত রায় এর।
আরও পড়ুন: শহরের বুকে এক টুকরো এভারেস্ট বেস ক্যাম্প, দেখতে হলে আপনাকে আসতে হবে হাওড়া
বিপাশার স্বপ্ন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে। আর একটা স্বপ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর সাথে দেখা করবে। মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করে কি বলবে তা জানা নেই, কিন্তু রাজ্যের একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী, যিনি মহিলাদের জন্য অনেক ভাবে, তিনি তার সম্পর্কে জানলে হয়তো রাজ্যে ফুটবল জাগলিং নিয়ে আরও কিছু ভাববে আগামী দিনে, আশাবাদী বিপাশা বৈষ্ণব।
রুদ্র নারায়ণ রায়