কিন্তু কেমন ছিলেন এই সত্যেন্দ্র! এলাকাবাসীরা জানাচ্ছেন, কারও সঙ্গে গোলমাল করা দূরের কথা, এলাকার লোকজন তাকে কোনও দিন উঁচু গলায় কথাই বলতে শোনেননি। অত্যন্ত ভদ্র এবং বিনয়ী ছিল সে। মিষ্টি স্বভাব, সবার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করত। এলাকায় জামাই বলেই পরিচিত সত্যেন্দ্র। রাস্তাঘাটে কারও সঙ্গে দেখা হলে 'স্যার' বলে সম্বোধন করত সে। ছোটদেরও সব সময়ে 'বাবু' বলে ডাকত। আর সেই সত্যেন্দ্র চৌধুরীই যে দুই স্কুলপড়ুয়াকে অপহরণ করে খুনের প্রধান অভিযুক্ত তা ভাবতেই পারছেন না এলাকায় সত্যেন্দ্রর পরিচিতরা।
advertisement
প্রতিবেশী এক মহিলা জানান, লোকটার মধ্যে একটা মুখমিষ্টি ভাব ছিল। সবার সঙ্গে ভদ্র ভাবে কথা বলত। এই রকম একটা লোক এত ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটাতে পারে, সেটা ভেবেই অবাক লাগছে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জেনেছে, সত্যেন্দ্র চৌধুরী আদতে বিহারের লোক। পরবর্তীতে সে বাগুইআটির জগৎপুরে আসে। এই এলাকারই মেয়ের সাথেই ভালোবাসা সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং পরবর্তীতে বিয়ে করে তাকে। তবে বিয়ের আগে তার হবু স্ত্রী বাড়ি থেকে আচমকা উধাও হয়ে গিয়েছিলেন বলেও জানান প্রতিবেশীরা। ওই দম্পতির দু'বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। নিহত অতনু দে-র বাড়ি সত্যেন্দ্রর শ্বশুরবাড়ির পাশেই। সত্যেন্দ্র অন্য পাড়ার বাসিন্দা হলেও শ্বশুরবাড়ির সূত্রে অতনুর সঙ্গে তার পরিচিতি গড়ে ওঠে।
আরও পড়ুন: মধ্যমগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে হিন্দি গানে ছাত্রদের নাগিন নাচ! দায় নিলেন প্রধান শিক্ষক!
নিজের ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত থাকতে দেখা যেত সত্যেন্দ্রকে। গাড়ির যন্ত্রাংশের শোরুম ছাড়াও, সত্যেন্দ্র পুরোনো গাড়ি বিক্রি করত। অতনুর বন্ধুর দাবি, ওই দুই কিশোর নিখোঁজ হওয়ার চার দিন আগে, অর্থাৎ গত ১৮ অগাস্ট অতনুকে নিজের গাড়িতে চাপিয়ে রাজারহাটের লাউহাটির খেজুরবাগানে মোটর বাইকের একটি শোরুমে নিয়ে যায় সত্যেন্দ্র। সে দিন সেই বন্ধুও অতনুর সঙ্গে এক গাড়িতে ছিল। তবে তার বক্তব্য অনুযায়ী, শোরুমের কাছে নিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত তাদের সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাদের বলা হয়, 'তোমাদের মুখে মাস্ক নেই। তাই তোমরা শোরুমে ঢুকতে পারবে না।' তখন সত্যেন্দ্র তার দুই সঙ্গীকে নিয়ে শোরুমে ঢোকে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর সত্যেন্দ্র শোরুম থেকে বেরিয়ে এসে বলে, 'বাইক এখনও রেডি হয়নি।' সে দিন বাড়ি ফেরার পথে অতনু এবং তাকে গাড়িতে বেশ কিছুক্ষণ ঘোরানো হয়। কেন এরকম করা হল, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই রহস্য দানা বেঁধেছে। লাউহাটি থেকে জগৎপুরে ফিরে আসতে বড়জোর এক ঘণ্টা লাগে। কিন্তু সে দিন প্রায় চার ঘণ্টা ধরে তাদের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে বাড়িতে ফেরানো হয়।
সে দিন অতনু এবং সেই বন্ধুকে গাড়িতে রেখে সত্যেন্দ্রকে তার দুই সঙ্গীর সঙ্গে গোপনে শলাপরামর্শ করতেও দেখেছে এই যুবক। তার ধারণা, হয়তো সে দিনই অতনুকে খুনের ছক কষা হয়েছিল। পরিবার সূত্রে জানা যায়, অতনু দে পছন্দের প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার একটি বাইক, সেকেন্ড হ্যান্ড কেনার জন্য সত্যেন্দ্র চৌধুরীকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দেয়। এরপর ২২ অগাস্ট বাইক কেনার জন্য অতনু দে ও অভিষেক নস্করকে সঙ্গে নিয়ে যায় সত্যেন্দ্র চৌধুরী। তারপর থেকে আর অতনু দে ও অভিষেক নস্করের খোঁজ মেলেনি। এরা সম্পর্কে মামাতো পিসতুতো ভাই। সত্যেন্দ্র চৌধুরীর জগৎপুরে বাড়িতে ভাঙচুর চালায় অতনুর পরিবার ও প্রতিবেশিরা। তবে ঠিক কি কারণে এই খুন? তা জানা যাবে মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র চৌধুরী ধরা পড়ার পরই। দোষীর কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছে গোটা এলাকা। গ্রেফতার হওয়া বাকি অভিযুক্তদের এদিন বারাসত আদালতে তোলা হয়।
রুদ্র নারায়ণ রায়