ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫ সালে প্রথম লোকসভায় পাশ হয়। দিন-রাত ব্যাপী আলোচনার পর, এটি রাজ্যসভাতেও পাশ হয়েছে। ওয়াকফ বিলের পক্ষে ১২৮টি ভোট পড়েছিল এবং বিপক্ষে ৯৫ জন ভোট পড়েছিল। এই বিল এখন আইনে পরিণত হওয়ার থেকে মাত্র এক ধাপ দূরে রয়েছে। কেন না, ওয়াকফ বিল সংসদের অনুমোদন পেয়েছে। এখন রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলেই এটি আইনে রূপ নেবে। রাজ্যসভায় ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫ পাশ করাই ছিল মোদি সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা। কিন্তু সরকার সেখান থেকেও সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে এটি পাস করিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিন থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই বিল পাশ নিয়ে রাজ্যসভায় কী কী ঘটেছিল, কীভাবে এই বিলটি পাশ হয়েছিল, পুরো ঘটনাটি জেনে নেওয়া যাক।
advertisement
আরও পড়ুন– শোকের ছায়া বিনোদনের জগতে, প্রয়াত অভিনেতা মনোজ কুমার
১. রাজ্যসভায় ১৩ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিতর্কের পর, শুক্রবার রাতে ওয়াকফ সংশোধনী বিল, ২০২৫ অনুমোদিত হয়েছে। এর মাধ্যমে সংসদ এই আইনের অনুমোদন দিল।
২. বিরোধী দলগুলির বিরোধিতা সত্ত্বেও, মোদি সরকার সংখ্যার খেলায় জয়লাভ করেছে। রাজ্যসভার কার্যবিবরণী চলাকালীন বিরোধীরা ওয়াকফ বিলের তীব্র বিরোধিতা করে। বিরোধী দলগুলি এই বিলটিকে মুসলিমবিরোধী এবং অসাংবিধানিক বলে অভিহিত করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি ছিল যে এই ঐতিহাসিক সংস্কার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য উপকারী হবে।
৩. রাজ্যসভায় ওয়াকফ বিলটি ১২৮ ভোটে পাশ হয়, যেখানে ৯৫ জন সদস্য এর বিপক্ষে ভোট দেন। এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে লোকসভায়, ২৮৮ জন সাংসদ বিলটিকে সমর্থন করেন এবং ২৩২ জন বিরোধিতা করেন। লোকসভায় ১০ ঘণ্টা ধরে এই নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।
৪. এর সঙ্গে সংসদ মুসলিম ওয়াকফ (রিপিল) বিল, ২০২৫-ও অনুমোদন করেছে। রাজ্যসভাও এটি অনুমোদন করেছে। লোকসভা ইতিমধ্যেই এই বিলটি অনুমোদন করেছে। এখন এই বিলটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এর পর এটি আইনের রূপ নেবে।
৫. রাজ্যসভায় ওয়াকফ বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলিকে বিলটি নিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভয় দেখানোর অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ মন্ত্র নিয়ে সকলের জন্য কাজ করে। রিজিজু বলেন, ওয়াকফ বোর্ড একটি সংবিধানবদ্ধ সংস্থা। এমন পরিস্থিতিতে, সকল সরকারি সংস্থার মতো, এটিও ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ওয়াকফ বোর্ডে কিছু অমুসলিমকে অন্তর্ভুক্ত করলে বোর্ডের সিদ্ধান্তে কোনও পরিবর্তন আসবে না। বরং, এতে মূল্যায়ণ গভীর হবে।
৬. মন্ত্রী কিরেন রিজিজু আরও দাবি করেছেন যে যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) এবং সংশ্লিষ্টদের দেওয়া অনেক পরামর্শ সরকারের নিয়ে আসা এই ওয়াকফ বিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই বিল আইনে পরিণত হওয়ার পর দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজনেরও ক্ষতি হবে না।
৭. তবে, বিরোধী ভারত জোট দলগুলি বিলটির বিরোধিতা করে, অভিযোগ করে যে এটি অসাংবিধানিক। এর লক্ষ্য সংখ্যালঘুদের নিশানা করা। তারা দাবি করেন যে এই আইনের লক্ষ্য হল মুসলিমদের সম্পত্তি দখল করে কর্পোরেশনের হাতে তুলে দেওয়া।
৮. বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে রাজ্যসভায় ওয়াকফ বিলটি পেশ করা হয়। কিরেন রিজিজু সংসদে এটি উপস্থাপন করেন এবং আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এর পর, রাজ্যসভার সকল সাংসদ একে একে তাঁদের মতামত প্রকাশ করেন। এই আলোচনা শুক্রবার ভোর পর্যন্ত চলে। রীতিমতো ম্যারাথন বিতর্ক এবং আলোচনার পর, এই বিলের উপর ভোট শুরু হয়। সেখানেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, সংসদের মনোভাব বিলটির পক্ষেই!
৯. রাতে রাজ্যসভায় ওয়াকফ বিল ২০২৫-এর উপর ভোটদানের সময়, কিছু বিরোধী সদস্য চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়কে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে যান। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান ধনখড় বলেন, তিনি আছেন, কারণ তাঁর ভোট দেওয়ার অধিকার আছে। অবশ্য, যখন ট্রেজারি বেঞ্চ বলে যে তাঁর ভোট দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই, তখন চেয়ারম্যানও সে বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে বলেন, ‘কোনও প্রয়োজন নেই’!
১০. এই ভাবেই ৪ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে রাত ২টো ৩২ মিনিটে ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল ২০২৫ রাজ্যসভায় পাশ হয়ে যায়। এই বিলের পক্ষে ১২৮টি ভোট পড়ে, আর বিপক্ষে ৯৫টি ভোট পড়ে। না বললেই নয় যে, এই বিলটি দুপুর ১টার দিকে রাজ্যসভায় পেশ করা হয়েছিল। এবার থেকে কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা হবে ২২ জন, যার মধ্যে অনধিক ৪ জন অমুসলিম সদস্যও থাকবেন।