১২ নভেম্বর সিল্কিয়ারার নির্মীয়মাণ টানেলের একাংশে ধস নেমে আটকে পড়েন সেখানে কর্মরত ৪১ জন শ্রমিক৷ তাঁদের মধ্যে ৩ জন এই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা৷ এরপরে রীতিমতো দমবন্ধ আতঙ্কে কাটতে থাকে একের পর এক প্রহর৷ আশা থাকে, কেউ না কেউ ঠিক পৌঁছে যাবে ধসের দেওয়ালের এপাশ থেকে ওপাশে৷ তবে এক দিন দু’দিন নয়৷ একে একে বাড়তে থাকে অপেক্ষার দিনের সংখ্যা৷ অনেক হিসেবনিকেশ, পরিকল্পনা শেষে গত ২১ নভেম্বর আমেরিকান অগার মেশিনের মাধ্যমে শুরু হয় ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দিয়ে ড্রিলিংয়ের কাজ৷ কিন্তু ২৫ নভেম্বর সকালে ৪৭ মিটারের কাছাকাছি এসে ওই মেশিনটি বিকল হয়ে যায়। এরপর? এরপর কী?
advertisement
আরও পড়ুন: পোশাকে প্রতিবাদ! শাহী সফরের দিনেই ‘বিশেষ’ শাড়িতে বিধানসভায় মমতা
ভার্টিক্যাল ড্রিলিং সম্ভব ছিল না। এটা বিপজ্জনক হওয়ার পাশাপাশি খুবই মন্থর প্রক্রিয়া। ফলে খোলা ছিল কেবলমাত্র একটা রাস্তা৷ র্যাট হোল মাইনিং৷ ভারতে যা নিষিদ্ধ৷ একমাত্র অত্যন্ত জরুরি অবস্থাতেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করার অনুমতি মেলে এই দেশে৷ উত্তরকাশীর মতো এমন জটিল পরিস্থিতিতে সেই ‘নিষিদ্ধ পদ্ধতি’ অবলম্বন করতেই বাধ্য হলেন উদ্ধারাকারীরা৷ সিদ্ধান্ত তো নেওয়া হল, কিন্তু, কারা করবেন এই ভয়ঙ্কর, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ৷
ঠিক এই সময়েই ডাক পড়ল বীরভূমি ঝাঁসির ১২ জনের৷ কারণ, এমন কাজে সেরা এঁরাই৷ ঝাঁসি থেকে উত্তরকাশীতে আসা এই ‘ইঁদুর বাহিনী’র মধ্যে প্রথম থেকেই আত্মবিশ্বাস ছিল তুঙ্গে। ধসে যাওয়া সুড়ঙ্গের বাইরে উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সামনে এই বাহিনীর আত্মবিশ্বাসী বক্তব্যই সেময় সকলের সাহস আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। ওই বাহিনীর প্রত্যেকেই জানিয়েছিলেন যে, তাঁদের মনে বিন্দুমাত্র ভয় নেই৷ সরু জায়গায় ঢুকে খনন কাজ চালানেই তো তাঁদের রুজিরুটি৷ এবার শুধু তাঁরা মানুষের প্রাণ বাঁচাতে এসেছেন৷ এই কাজ তাঁদের কাছে নতুন নয়!
এরপরেই একটানা পরিশ্রম৷ খাওয়া-তেষ্টা ভুলে গত মঙ্গলবার সকাল থেকে কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন এই ১২ জন ‘র্যাট হোল মাইনার্স৷ উত্তরাখণ্ডের সুড়ঙ্গে তখনও আটকে ৪১ জন শ্রমিক। সেই সময়েও ‘ইঁদুর বাহিনী’র সদস্য ঝাঁসির প্রসাদি লোধি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, “আমাদের তো ৬০০ মিমি পাইপে ঢুকেও কাজ করতে হয় মাঝেমধ্যে৷ এখানে আমরা ৮০০মিমি পাইমের মধ্যে ঢুকে কাজ করছি৷ এটা আমাদের রোজের কাজ৷ আমরা পারবই৷’’
প্রসাদীর এই আত্মবিশ্বাস কিংবা ভরসাই সত্য প্রমাণিত হল। ২৬ ঘণ্টার একটানা নিরলস পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ে দু’টো হাতের সাহায্যেই পাথরের মধ্যে দিয়ে বের করলেন রাস্তা৷ এরপরেই ৩৯ মিনিটের রুদ্ধশ্বাস অপারেশনে উত্তরাখণ্ডের সিল্কইয়ারা-দন্দালগাঁও সুড়ঙ্গে আটকে থাকা শ্রমিকরা ১৭ দিন পরে বেরিয়ে এলেন নিরাপদে।
গতকাল, অর্থাৎ, ২৮ নভেম্বর সকালে সুড়ঙ্গে প্রবেশ করেন ‘র্যাট মাইনার্স’রা। প্রসাদী জানান, এই কাজ করতে তাঁরা শুধু ‘হিলটি’ নামের একটি হ্যান্ড ড্রিলার মেশিন নিয়ে এসেছিলেন। ৮০০ মিলিমিটারের পাইপে ঢুকে প্রথমে হ্যান্ড ড্রিলারের সাহায্যে ড্রিলিং শুরু করেন। তারপর ধীরে ধীরে ধ্বংসাবশেষ বার করতে থাকেন পাইপ দিয়ে। এই কাজ করতে তাঁদের কোনও রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রসাদী লোধির কথায়, “প্রায় ১০-১২ বছর ধরে র্যাট হোল মাইনিংয়ের সঙ্গে যুক্ত আমি। মূলত দিল্লি এবং আহমেদাবাদে কাজ করি। তবে সুড়ঙ্গে আটকে পড়া মানুষদের বার করে আনার কাজটা এই প্রথম করলাম আমি। তবে ভয় পাই না। কারণ এটাই আমার রোজকার কাজ।”