ভোটের সময় আমজনতার মন জয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যেভাবে বিনা পয়সায় নানা পরিষেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, তার বিরুদ্ধে আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন৷ একই সঙ্গে এই ধরনের প্রতিশ্রুতি দিলে রাজনৈতিক দলগুলির নির্বাচনী প্রতীকও বাজেয়াপ্ত করা এবং রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি করেন তিনি৷
advertisement
যদিও মামলার শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা এবং বিচারপতি কৃষ্ম মুরারির বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, অযৌক্তিক প্রতিশ্রুতি দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলির প্রতীক কেড়ে নেওয়ার দাবি অগণতান্ত্রিক৷ তবে সংশ্লিষ্ট সবপক্ষের কাছ থেকে এ বিষয়ে পরামর্শ চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷
প্রধান বিচারপতি অবশ্য বলেন, 'বিনামূল্যের উপহার এবং সামাজিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের মধ্যে ফারাক রয়েছে৷ অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতি স্বীকার করা এবং মানুষের উন্নয়ন- এই দু'টি বিষয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন৷ এবং তা নিয়েই বিতর্ক৷ কেউ তো থাকবেন যিনি বা যাঁরা এ বিষয়ে নিজেদের মতামত সামনে রাখতে পারেন৷ আমার অবসর গ্রহণের আগে এই ধরনের কোনও পরামর্শ দয়া করে জমা দিন৷' প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আগামী ২৬ অগাস্ট এন ভি রামানার অবসর নেওয়ার কথা৷
আরও পড়ুন: জাতীয় স্তরে বড় ধাক্কা, '২৪-এর পর দিল্লিতে মমতা' বলা সেই পবন কুমার বর্মা তৃণমূল ছাড়লেন!
ভারতীয় রাজনীতিতে এই ধরনের বিনা পয়সার উপহার বা প্রতিশ্রুতি নতুন কিছু নয়৷ তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং এআইএডিএমকে-র প্রয়াত নেত্রী জে জয়ললিতা এই ধরনের রাজনীতির অন্যতম পথ প্রদর্শক ছিলেন৷ বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, মোবাইল ফোন, ওয়াই ফাই সংযোগ, ভর্তুকি দিয়ে স্কুটার, বিনা সুদে ঝণ, বিনা পয়সায় ফ্যান, মিক্সার-গ্রাইন্ডার দেওয়ার মতো নানা প্রতিশ্রুতি বিভিন্ন সময়ে ভোটারদের দিতেন তিনি৷ জয়ললিতার মস্তিষ্কপ্রসূত আম্মা ক্যান্টিনও িবপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল৷ জয়ললিতার পূর্বসূরী তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সি এন আন্নাদুরাই ১৯৬০-এর দশকে এক টাকায় এক কেজি চাল দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন৷ জয়ললিতা সম্ভবত তাঁর থেকেই শিক্ষা নিয়েছিলেন৷
তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে এই ধরনের বিনা পয়সায় উপহার, পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে ডিএমকে-ও খুব একটা পিছিয়ে ছিল না৷ ২০০৬ সালে ডিএমকে ভোটারদের বিনা পয়সায় কালার টিভি এবং দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারীদের বিনা পয়সায় রান্নার গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷ যদিও ২০১১ সালে ক্ষমতায় ফিরে কালার টিভি দেওয়ার এই প্রকল্প বাতিল করে জয়ললিতা সরকার৷
২০১১ সালে তামিলনাড়ুতেই ভোটের বিনিময়ে অর্থ বিলির গুরুতর অভিযোগ ওঠে৷ ২০০৯ সালে থিরুমঙ্গলাম উপনির্বাচনে ভোটারদের প্রভাবিত করতে ডিএমকে-র তরফে ভোটারদের টাকা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ৷ এই অভিযোগ সামনে নিয়ে আসে উইকিলিকস৷ অভিযোগ অনুযায়ী, হাতে হাতে টাকা না দিয়ে সকালে খবরের কাগজের সঙ্গে খামে ভরে ভোটারদের টাকা পাঠানো হয়৷ টাকার সঙ্গে ডিএমকে-র ভোটার স্লিপও ছিল৷
আবার ২০১৩ সালে উত্তর প্রদেশে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে ল্যাপটপ বিতরণ করে অখিলেশ যাদব সরকার৷ সবমিলিয়ে ১৫ লক্ষ ল্যাপটপ বিনা পয়সা বিলি করে অখিলেশ সরকার৷
১৯৯৭ সালে পঞ্জাবে ক্ষমতাসীন শিরোমণি অকালি দল কৃষকদের বিনা পয়সায় বিদ্যুৎ দেওয়ার ঘোষণা করে৷ ২০০২ সালে এই প্রকল্প বাতিল করেন কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং৷ পরবর্তী সময়ে অবশ্য ফের এই প্রকল্প চালু করতে বাধ্য হন তিনি৷
পিছিয়ে নেই অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আম আদমি পার্টিও৷ ২০১৫ সালে দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ের আগে বিদ্যুতের বিলে পঞ্চাশ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ের ঘোষণা করে আপ৷ এর পাশাপাশি প্রতিদিন প্রতিটি বাড়িতে ৭০০ লিটার জল িবনামূল্যে দেওয়ার ঘোষণা করা হয়৷ অন্যান্য রাজ্যে ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যেও একই পথে হাঁটে আপ৷ ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্কলারশিপ, প্রবীণদের জন্য তীর্থের ব্যবস্থা, মহিলাদের হাতে টাকা দেওয়ার মতো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আপ৷
আবার বিনামূল্যের প্রকল্প, উপহারের জনমোহিনী রাজনীতিকে কটাক্ষ করতে গত বছর তামিলনাড়ু নির্বাচনে দক্ষিণ মাদুরাই কেন্দ্রের নির্দল প্রার্থী থুলাম সারাভানন বিনামূল্যে একশো দিন চাঁদে সফর, আইফোন, গৃহবধূদের সংসারের কাজ করে দেওয়ার জন্য রোবোট দেওয়া, সবার জন্য সুইমিং পুল সহ তিন তলা বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার মতো ঘোষণা করেন৷ যদিও এসবই ছিল মজাচ্ছলে করা৷ যদিও এতকিছু করেও ভোটারদের মন জয়ে ব্যর্থ হন তিনি৷