রাজ্যপালের সচিব নন্দিনী চক্রবর্তীকে রাজভবন থেকে সরানো, আর উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে বিজেপির যুক্তিকে সমর্থন করায় রাজ্যপালকে নিয়ে বিজেপি এখন মোটের উপরে খুশি। কিন্তু, তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া এড়িয়ে গিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। যদিও, বিরোধী দল নেতা কোনও রাখঢাক না করেই বলেছেন আমার বিশ্বাস উনি ( রাজ্যপাল) এবার ট্রাকে ফিরছেন। শুভেন্দুর এই দাবিকে কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
advertisement
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রী নন, রাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসাবে কাজ করবেন রাজ্যপাল, এল বিবৃতি
গত শনিবার রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই রাজ ভবন থেকে রাজ্যপালের প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করে রাজ্য সরকারের একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নিয়ে কড়া অবস্থান স্পষ্ট করে দেয় রাজ্য ভবন। সচিব নন্দিনী চক্রবর্তীকে রাজ ভবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য নবান্নকে সুপারিশ করেন রাজ্যপাল।
রাজ্যপালের আচমকা সুর বদলে ধাক্কা লেগেছে নবান্নে। পাল্টা সুর চড়াতে শুরু করেছে তৃণমূল। তৃণমূলের মুখপাত্র কূণাল ঘোষ বলেছেন, 'রাজ্য সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্কের বদলে, রাজ ভবনকে যদি কেউ বিজেপির রঙ্গমঞ্চ বানাতে চায়, প্রাক্তন আমলাদের পরামর্শদাতা হিসাবে নিয়োগ করতে চায়, তাহলে প্রয়োজনে ভাষা ও মেজাজ বদলাবে তৃণমূল।'
অন্যদিকে, খুশি বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে আনন্দ বোসের ' সুসম্পর্ক'-কে শুরু থেকেই সন্দেহের চোখে দেখছিল বিজেপি। হাতেখড়ি থেকে রাজ্যপালের ভাষন - এ সবের পর রাজ্যপালকে নিয়ে আবার তোপ দাগা শুরু করে বিজেপি। রাজ্যপালকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েই শুভেন্দু বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর ফাঁদে পড়বেন না।
অবশেষে, গত শনিবার সকালে রাজ ভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দীর্ঘ ৪৫ মিনিট বৈঠক করার পর আশ্বস্ত হয়ে ফিরেছিলেন সুকান্ত। ঘনিষ্ঠ মহলে তখনই সুকান্ত বলেছিলেন, আশা করছি দু' একদিনের মধ্যেই পরিবর্তন দেখতে পাবেন। এর পরেই,সেদিন বিকালে সুর বদল ঘটল রাজ্যপালের। যদিও,প্রকাশ্যে রাজ ভবন থেকে দল ও নিজেকে দূরেই রাখতে চেয়েছেন সুকান্ত।
আরও পড়ুন: রাজ্যপালের অনুষ্ঠানের কাছেই উদ্ধার রহস্যময় ট্যাক্সি!মালিককে ফোন করে অবাক পুলিশই
রাজ্যপালের সুর বদল নিয়ে গতকাল হুগলিতে সুকান্ত বলেন, ''রাজভবন কীভাবে চলবে সেটা রাজ্যপালের বিষয়। বিজেপি তার মধ্যে ঢুকবে না। সচিব বদল থেকে শুরু করে রাজ্যপালের কোনও সিদ্ধান্তের শরিক বিজেপি নয়।"
এদিকে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিধানসভায় রাজ্যপালের মুখে রাজ্য সরকারের প্রশংসা শুনে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিলেন শুভেন্দু। ওয়াক আউটের আগে আঙুল উঁচিয়ে রাজ্যপালকে শেম শেম বলে শ্লোগানও দেন তিনি। ৪ দিন পর, বিধানসভায় রাজ্যপালের জবাবি ভাষনে বিরোধী দলনেতাকে দেখা গেল, শনিবার বিকালে দেওয়া রাজ্যপালের বিবৃতিকে হাতিয়ার করতে।
গত শনিবার রাজ ভবন থেকে রাজ্যপালের প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারির পরে রাজ্যপালকে নিয়ে প্রকাশ্যেই সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন শুভেন্দু। গতকাল, মুখ্যমন্ত্রীর ভাষন থেকে ওয়াক আউট করার পর সাংবাদিক সম্মেলনে শুভেন্দু বলেন, "রাজ ভবন রাজ্যপালের মতো হওয়া উচিত, মুখ্যমন্ত্রীর মতো নয়। আমার বিশ্বাস রাজ্যপাল এবার আস্তে আস্তে তাঁর ট্রাকেই ফিরছেন। " যা শুনে মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় শুভেন্দুকে কটাক্ষ করে বলেন, উনি কি রাজ্যপালের উপদেষ্টা নাকি? তবে, শুভেন্দু ঘনিষ্ঠদের মতে, মুখ্যমন্ত্রী ঠিকই জানেন, কে রাজ্যপালকে ট্রাকে ফেরাল।
রাজ্যপালকে নিয়ে তৃণমূল - বিজেপির এই চাপানউতোরকে নিছক রাজনৈতিক তরজা বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। রাজনৈতিক মহলের মতে, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয়, সংসদীয় রাজনীতিতে শাসক ও বিরোধীর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় রাজ্যপালের ভূমিকা রয়ছে। কিন্তু, রাজ্যপাল, বিরোধী দলের স্বার্থরক্ষা করে কাজ না করলেই, তাকে কেন্দ্রের জুজু দেখাতে হবে, এটা কাম্য নয়। গত শনিবার, রাজভবনে গিয়ে সুকান্ত আসলে কেন্দ্রের বার্তাই শুনিয়ে এসেছিলেন রাজ্যপালকে। তার জেরেই তড়িঘড়ি সুর বদল রাজ্যপালের। এমনটাই দাবি বিজেপিরও।
পর্যবেক্ষকদের মতে, অতীতে কেন্দ্রে কংগ্রেসি সরকার বা বামেদের সমর্থনপুষ্ট ইউপিএ সরকারের আমলে তো বটেই, এমন কি বাজপেয়ীর এনডিএ সরকারের সময়েও, রাজ্যপালকে নিয়ে রাজ্যস্তরে এমন টানাটানি হয়নি।