ছোট থেকেই যোধপুরের গোপাল প্রজাপতির লক্ষ্য ছিল পড়াশোনা করে সরকারি আধিকারিক হওয়ার। কিন্তু নিয়তি বোধহয় অন্যকিছুই স্থির করে রেখেছিল তাঁর জন্য। মৃৎশিল্পী পরিবারের ছেলেটি পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে না পেরে তিনি যোগ দিলেন পারিবারিক ব্যবসায়। কয়েক টাকা দিয়ে শুরু করা এই ব্যবসায় এখন লক্ষ লক্ষ টাকা লাভ। এমনই জানিয়েছেন গোপাল।
advertisement
আরও পড়ুন: বাড়ির জলের ট্যাঙ্কে ওটা কী নড়েছে? দেখেই চোখ কপালে উঠল বাড়ির মালিকের
গোপাল এমএ পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। সেই সঙ্গে চলছিল আরএএস পরীক্ষার প্রস্তুতি। কিন্তু বাদ সাধল অতিমারী। সারা বিশ্বের সঙ্গে ভারতেও করোনার তাণ্ডব ভয়াল হয়ে উঠল। আর গোপালকেও মাঝপথে পড়াশোনা বন্ধ করে গ্রামে ফিরে আসতে হল।
কাজের অভাবও দেখা দিয়েছে তখন দেশ জুড়ে। গোপালের দাদা ও বাবা মৃৎশিল্পী। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ করেই রোজগার করেছেন। পরিবারের ভরণপোষণও হয়েছে মাটির কারবার থেকে। হঠাৎ একদিন মন বদলে যায় গোপালের। পারিবারিক মৃৎশিল্পের প্রতি তৈরি হয় আকর্ষণ। বরং একটু অন্য ভাবে সেই শিল্পকে ব্যবসায় পরিণত করতে চেষ্টা করেন তিনি। ‘মিট্টিওয়ালা স্টার্টআপ’ শুরু করেন, সামান্য কিছু টাকা বিনিয়োগ করে। গোপালের দাবি, বছর দুয়েকের মধ্যে সেই স্টার্টআপ লক্ষ টাকার টার্নওভার দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: গুড় দিয়ে তৈরি; ১০০ বছরের পুরনো সেতুর আকর্ষণ অটুট! অনন্য নির্মাণশৈলীতে হতবাক আধুনিক ইঞ্জিনিয়ারও!
দেশের বাইরেও চাহিদা:
গোপাল জানান, করোনার পর তিনি ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও ভাবেই পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে বেঙ্গালুরু, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ুর মতো দেশের অনেক বড় শহরে তাঁর তৈরি পণ্যের চাহিদা রয়েছে। এই সব শহর থেকে তিনি অনলাইনে বরাত পান। রাজস্থান থেকেই তিনি তাঁর পণ্য পাঠিয়ে দেন ক্রেতার কাছে। তবে শুধু দেশ নয়। গোপালের তৈরি পণ্যের চাহিদা রয়েছে দুবাই, জার্মানি, বার্লিন-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। তবে শুরু থেকেই যে প্রচুর লাভ হয়েছে এমন নয়। হাল ছাড়েননি গোপাল। প্রথম বছর মুনাফা কিছুটা কমলেও এখন মুনাফা বেড়েই চলেছে।
যুব সম্প্রদায়ের অনুপ্রেরণা:
গোপাল সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু এখন তিনি স্টার্টআপ-এর প্রতিষ্ঠাতা। অর্থ উপার্জনের দিক থেকে তাঁর সাফল্য যথেষ্ট। শুধু তাই নয়, গোপাল সব সময় চেয়েছিলেন বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করতে। দেশের উঠতি উদ্যোগপতি হিসেবে তিনি অচিরেই সেই সাফল্য লাভ করতে পারেন। দেশের যুব সম্প্রদায়ের কাছে তিনি অনুপ্রেরণা। আবার এদেশের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প যা প্রায় হারিয়ে যেতে বসছে প্লাস্টিক ফাইবারের দাপটে, তাকে নতুন করে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন তিনি, যা একান্তই পরিবেশবান্ধব একটি উদ্যোগ।