৩ মাস পরেই লোকসভা নির্বাচন আর নির্বাচনের আগেই কংগ্রেসের মাস্টারস্ট্রোক- সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন রাজীব ও সনিয়ার কন্যা প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বঢরা । স্বাভাবিকভাবেই এনডিএ সরকারের কাছে এই খবর একদমই অপ্রত্যাশিত । তবে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের জাতীয় সম্পাদক হিসেবে প্রিয়াঙ্কার রাজনীতিতে প্রবেশ হল সোশ্যাল মিডিয়ার ১০ বছর পরিবর্তন চ্যালেঞ্জের আরও এক চরমতম নিদর্শন ।
advertisement
২০০৯ সালে ২৪ এপ্রিল একটি সাক্ষাৎকারে প্রিয়াঙ্কা স্পষ্ট জানিয়েছিলেন তিনি নিজের জীবন নিয়ে রীতিমত খুশি ও রাজনীতিতে তিনি যেতে চান না । রাজনীতির সঙ্গে জড়িত অনেক কিছুর সঙ্গেই তিনি খাপ খাওয়াতে পারেন না, জানিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা।
তবে এই সাক্ষাৎকারের পরেও কংগ্রেসের অন্দরমহলে অনেকেই বিশ্বাস করতেন প্রিয়াঙ্কা যা বলেছেন তা আদৌও সত্যি নয় ফলে বুধবারে যখন প্রিয়াঙ্কার যখন প্রিয়াঙ্কাকে নতুন দায়িত্বভার দেওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসে তখন একদমই খুশি ছিলেন না এই নির্দিষ্ট নেতারা ।
লখনউয়ের নেহরু ভবন থেকে দিল্লির ২৪ আকবর রোড, সব স্থানেই কংগ্রেসের নেতারা প্রিয়াঙ্কার পরিসর কেবলমাত্র পূর্ব উত্তরপ্রদেশে সীমাবদ্ধ থাকবে না ।
যোগীর রাজ্যে ধারাবাহিকভাবে পরাজয়ের পর আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে আসন পেতে মরিয়া কংগ্রেসে । সেই কারণে প্রিয়াঙ্কার মাধ্যমেই কংগ্রেসে নতুন প্রাণ সঞ্চার করতে চাইছেন রাহুল গান্ধি । রাজনৈতিক মহলের মতে, উত্তরপ্রদেশে যদি কংগ্রেস ভাল ফল করে তাহলে তা নরেন্দ্র মোদি সরকারের জন্য মোটেই ভাল খবর হবে না ।
ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, এর আগেও রাজনৈতিক প্রাঙ্গনে নেহরু-গান্ধি পরিবারের সদস্যরা যুগ্নভাবে কাজ করেছেন । তাই রাহুল-প্রিয়াঙ্কার যুগ্ম লড়াই কংগ্রেসের রাজনৈতিক ইতিহাসে একদমই নতুন কোনও বিষয় নয় ।
১৯৫৯ সালে জওহরলাল নেহরুর প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধি । জনমত বলছে কেবলমাত্র নিজের মেয়েকে রাজনীতির মঞ্চে নিয়ে আসার জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নেহরু তবে অভিজ্ঞ কংগ্রেস নেতাদের মতে ইন্দিরা নিজের যোগ্যতার কারণেই এই দায়িত্ব পেয়েছিলেন ।
সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির প্রধান হিসেবে কেরল সমস্যার মোকাবিলা করেছেন ইন্দিরা । এছাড়া, মহারাষ্ট্র ও গুজরাত- দুই রাজ্যের ভাষাভিত্তিক বিভাজন নিয়েও সক্রিয় ছিলেন ইন্দিরা। ১৯৬০ সালে তাঁর মেয়াদ শেষ হলে তাঁকে নির্বাচনে লড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন কমিটির সদস্যরা কিন্তু তাতে রাজি হননি ইন্দিরা ।
অন্যদিকে ১৯৭৪ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক পদে ছিলেন না সঞ্জয় গান্ধি কিন্তু প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক কাজের ক্ষেত্রে তিনি ইন্দিরার মতোই দক্ষ ছিলেন বলে মনে করা হয় । ১৯৮০ সালে জুন মাসে তাঁর মৃত্যুর কয়েক মাস আগে থেকে তাঁকে দলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে শুরু করেছিলেন সঞ্জয়ের সহকর্মী রামচন্দ্র রথ ।
রথের মতে, সুভাষচন্দ্র ও জওহরলাল নেহরু খুব অল্প বয়সেই দলের সভাপতি হয়েছিলেন ও সেই কারণে সঞ্জয় যদি দলীয় সভাপতি হতেন তা কখনোই অগণতান্ত্রিক হত না ।
১৯৮৩ সালে কংগ্রেস সাধারণ সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় সঞ্জয় গান্ধির ভাই ২৪ বছর বয়সী রাজীব গান্ধিকে । এই দায়িত্বে রাজীব গান্ধির গুরুত্বও কম ছিল না
২০০৬ থেকে ২০১৪ সালে ইউপিএ সরকারের শাসনকালে যদিও রাহুলকে নিয়ে খুব একটা উৎসাহী ছিলেন না কংগ্রেস নেতারা তবে ব্যতিক্রম ছিলেন অজয় মাকেন,আরপিএন সিং, মিলিন্দ দেওরা ও সচীন পাইলটের মত যুব নেতারা ।
প্রিয়াঙ্কার সম্ভাব্য ভূমিকা কী?
ইউপিএ শাসনের ১০ বছরের রাহুলের রাজনৈতিক নেতৃত্বে জাতীয় রাজনীতিতে সেই অর্থে কোনও অগ্রগতি হয় নি । রাহুলের রাজনৈতিক ইমেজও খুব একটা স্পষ্ট ছিল না । ফলে প্রিয়াঙ্কার হাত ধরেই যুবমানসে স্থান করে নিতে বদ্ধপরিকর কংগ্রেস । প্রিয়াঙ্কা আগেও বলেছেন ভাইকে সাহায্য করতে তিনি সর্বদাই প্রস্তুত তাই প্রিয়াঙ্কার নেতৃত্বে যোগীর রাজ্যে তথা জাতীয় নির্বাচনে কংগ্রেসের ফলাফল নিয়ে জল্পনা জারি থাকছে ।