ভারতীয় বায়ুসেনার এই বিমান দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। ভেঙে পড়া বিমানটি ছিল ভারতীয় বায়ুসেনার মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান।
মাত্র দু’মাস আগে আগ্রার কাছে মিগ-২৯ ভেঙে পড়েছিল, এবার মিরাজ-২০০০। বৃহস্পতিবার ভারতীয় বায়ুসেনার মিরাজ-২০০০ তার রুটিন ফ্লাইংয়ের জন্য গ্বালিয়র এয়ারবেস থেকে উড়েছিল। এটি ছিল মিরাজের ট্রেনিং ভেরিয়েন্ট। দুপুর আনুমানিক ২:৪০ মিনিট নাগাদ মধ্যপ্রদেশের শিবপুরির কাছে এটি ভেঙে পড়ে।
advertisement
জেনে রাখা ভাল, ভারতীয় বায়ুসেনার কাছে অনেক শক্তিশালী ফাইটার জেট রয়েছে, তবে পাকিস্তান সবচেয়ে বেশি ভয় পায় মিরাজ-২০০০-কে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই মিরাজই পাকিস্তানের বালাকোটে জইশ-এ-মোহাম্মদের জঙ্গি ঘাঁটিতে বোমাবর্ষণ করে তাদের ধ্বংস করেছিল। কিন্তু এত ঘন ঘন বিমান দুর্ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই একাধিক প্রশ্নের জন্ম দিতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: অন্ধবিশ্বাসের জের, মাকে কেরোসিন খাইয়ে দিল ছেলে! জানুন সেই হাড়হিম করে দেওয়া ঘটনা…
দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই ভারতীয় বায়ুসেনা নিশ্চিত করেছে যে, বিমানটি একটি রুটিন ট্রেনিং মিশন চলাকালীন ভেঙে পড়ে। বিমানটি “সিস্টেম ম্যালফাংশন” বা প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে নিয়ন্ত্রণ হারায় বলে জানিয়েছে ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স।
আইএএফ-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “একটি মিরাজ ২০০০ বিমান আজ শিবপুরি (গ্বালিয়র)-এর কাছে রুটিন ট্রেনিং চলাকালীন ভেঙে পড়ে। এটি প্রযুক্তিগত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। তবে দুই পাইলট নিরাপদে ইজেক্ট করতে সক্ষম হয়েছেন।” ফাঁকা জায়গায় বিমানটি আছড়ে পড়েছিল বলে সাধারণ মানুষেরও কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে ধারণা।
IAF আরও জানিয়েছে যে, দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে একটি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “IAF-এর মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমান শিবপুরির কাছে রুটিন ট্রেনিং চলাকালীন ভেঙে পড়ে। এটি একটি প্রযুক্তিগত সমস্যার সম্মুখীন হয়। দুই পাইলট নিরাপদে বের হতে সক্ষম হয়েছেন। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
কীভাবে ঘটল এই দুর্ঘটনা? জানা গিয়েছে, বিমানটি দুই আসনযুক্ত (Twin-seater) ট্রেনিং ভেরিয়েন্ট ছিল, যা বারহেটা সানি গ্রাম-এর একটি কৃষি খেতে দুপুর ২:৪০ নাগাদ হঠাৎ ভেঙে পড়ে। সেন্ট্রাল এয়ার কমান্ডের মুখপাত্র জানিয়েছেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ভারতীয় বায়ুসেনার এমন দুর্ঘটনা নতুন নয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৭-২০২২ সালের মধ্যে ভারতীয় বায়ুসেনায় ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। যেখানে দেখা গিয়েছে, ২০১৭-১৮ সালে ৮টি দুর্ঘটনা, ২০১৮-১৯-এ ১১টি দুর্ঘটনা, ২০১৯-২০-তে ৩টি দুর্ঘটনা, ২০২০-২১-এ ৩টি দুর্ঘটনা, ২০২১-২২-এ ৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে।
২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে মোট ৩৪টি তদন্ত হয়েছে, যার ভিত্তিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবুও প্রশ্ন থেকেই যায়—কীভাবে এমন দুর্ঘটনাগুলোয় লাগাম টানা সম্ভব?