রাজ্যসভায় প্রশ্ন তুলে, তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি অভিযোগ করেন বাংলা ও বাংলার সংস্কৃতির সাথে জড়িত ব্যক্তিত্বদের পরিকল্পিতভাবে অবহেলা করছে বিজেপি। ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ব্রিটিশ সরকারের নাইটহুড ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, সেই স্মৃতিসৌধে তাঁর কোনও উল্লেখ নেই কেন? তিনি কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের কাছে জানতে চান, কেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিঠি প্রদর্শন ও মূর্তি সেখানে স্থাপন করা হয়নি?
advertisement
সংস্কৃতি মন্ত্রকের জবাবের পর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা মোটেই সন্তুষ্ট নই। আমরা জানতে চেয়েছিলাম-জালিয়ানওয়ালা বাগ স্মৃতিসৌধে কি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোনও মূর্তি আছে? আর যদি না থাকে, তাহলে তা বসানোর কোনও পরিকল্পনা আছে কি না? ১৯১৯ সালে যখন জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড ঘটে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন সেই প্রথম কয়েকজনের মধ্যে অন্যতম যাঁরা এই ঘটনার কড়া নিন্দা করেন। এই ঘটনার প্রতিবাদে তিনি ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া নাইটহুড উপাধি ফিরিয়ে দেন। এই বর্বরতার বিরুদ্ধে তাঁর লেখা একটি চিঠি আজও স্কুল-কলেজে পড়ানো হয়।
আরও পড়ুন: কখন-কোথায় বাজ পড়বে…হরদম অ্যালার্ট দেবে মোবাইল স্ক্রিন! এই অ্যাপের কথা জানেই না মানুষ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের জাতীয় সঙ্গীত দিয়েছেন; যা বাংলায় রচিত। ১৯২৫ সালে, ‘দ্য গার্ডিয়ান’ (তখন ‘ম্যাঞ্চেস্টার গার্ডিয়ান’ নামে পরিচিত ছিল) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বলেছিলেন-‘একজন আবেগপ্রবণ রাজনৈতিক কর্মী’। তাঁর মত একজন মনীষী, যিনি ব্রিটিশ শাসনের অন্যায় ও জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন, তাঁর মূর্তি ও সেই ঐতিহাসিক চিঠি জালিয়ানওয়ালা বাগ স্মৃতিসৌধে থাকা উচিত; এটাই আমাদের দাবি।”
বিজেপির বিরুদ্ধে আরও কড়া আক্রমণ শানিয়ে ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপি একটা বাংলা-বিরোধী দল। বাংলাভাষী মানুষদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে, তাঁদের হেনস্থা করা হচ্ছে। তাহলে ওরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে রেহাই দেবে কেন? বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দিয়েছেন। এই ঘটনাই স্পষ্ট করে দেয়, বিজেপির মূল অগ্রাধিকার কী। তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঐতিহাসিক চিঠিটি জালিয়ানওয়ালাবাগ স্মৃতিসৌধে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক তাদের উত্তরে সরাসরি ‘না’ বলে দিয়েছে! প্রধানমন্ত্রী মোদী গত নির্বাচনের আগে বড় দাড়ি রেখেছিলেন, যেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো দেখায়। কিন্তু প্রত্যেকটা সময়ে বারবার প্রমাণ হচ্ছে, বিজেপি আসলে বাংলা-বিরোধী দল।”
তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ফেসবুক-এ একটি পোস্টে তৃণমূল কংগ্রেস লিখেছে: “বিজেপি বাংলা বিরোধী; একথা বারংবার প্রমাণিত! জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের পর নাইট উপাধি ত্যাগ করে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জালিয়ানওয়ালাবাগের সেই ঐতিহাসিক স্থানে তাঁর মূর্তি ও প্রতিবাদের চিঠির ছবি স্থাপন করতে সরাসরি না করে দিল কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক! কেন্দ্রীয় সরকারের এহেন বাংলা-বিরোধী আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হলেন মাননীয় সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।