পৃথিবীতে এখনও পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি কখনও দেখা যায়নি, ভবিষ্যতেও না আসাই ভালো, তবে যদি এমন কিছু ঘটে, তাহলে কি ওই বোমাগুলো ফেটে যাবে? না কি তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ছড়িয়ে পড়বে? কী হতে পারে তার ফলাফল?
এমন একটি প্রশ্ন AI-এর কাছে রাখা হয়েছিল এবং গবেষণায় যা উঠে এসেছে, তা এখানে তুলে ধরা হল। গবেষণা বলছে, পাকিস্তান তার দেশে চারটি স্থানে পারমাণবিক অস্ত্র অত্যন্ত সুরক্ষিত পরিবেশে সংরক্ষণ করে রেখেছে। অন্যদিকে, ব্রহ্মোস একটি সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল, যা সেকেন্ডের মধ্যে শত শত কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে। ভারতের একটি ব্রহ্মোস মিসাইল একবার পাকিস্তানের চাকলালা এয়ারবেসে ব্যাপক ক্ষতি করেছিল। এই বেসের কাছেই পাকিস্তানের আর্মি স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ড (ASFC)-এর সদর দপ্তর অবস্থিত, যা দেশটির পারমাণবিক অস্ত্রের নজরদারি করে।
advertisement
আরও পড়ুন: সামরিক শক্তির দিক থেকে পাকিস্তানের থেকে কতটা এগিয়ে ভারত! জানুন ২ দেশের শক্তির তুলনা…
পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ কোথায় থাকে? পাবলিক ডোমেইনে যেসব তথ্য আছে, সেগুলো বিশেষজ্ঞদের বরাতে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র চারটি স্থানে মজুদ থাকতে পারে: মসরুর এয়ারবেস (করাচির কাছে) – এখানে মিরাজ III ও V স্কোয়াড্রন মোতায়েন আছে, এবং সম্ভবত এখানে ভূগর্ভস্থ গুদাম রয়েছে। সরগোধা গ্যারিসন – এটি একটি বড় মিসাইল ও অস্ত্র মজুদকেন্দ্র, এখান থেকে F-16 বিমান পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে যেতে পারে। ভোলারি এয়ারবেস (সিন্ধ) – এটি একটি নতুন বেস, যেখানে অতিরিক্ত নিরাপত্তা দেখে অনুমান করা যায় এটি পারমাণবিক অস্ত্রের স্টোরেজ সাইট হতে পারে। বালুচিস্তানে ভূগর্ভস্থ স্থাপনা – এখানে একটি ভূগর্ভস্থ জায়গার সন্ধান পাওয়া গেছে, যা মিসাইল ও পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।
পাকিস্তানই শুধু নয়, বিশ্বের সব পারমাণবিক শক্তিধর দেশ তাদের অস্ত্রগুলো একাধিক স্থানে ছড়িয়ে রাখে যাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় এবং বিপদের সময় দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো যায়।
ব্রহ্মোস মিসাইল সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন- ব্রহ্মোস একটি সুপার-সনিক ক্রুজ মিসাইল, যার গতি 2.8 থেকে 3.0 ম্যাক পর্যন্ত হতে পারে। ১ ম্যাক মানে ঘণ্টায় ১২৩৪.৮ কিমি। এই মিসাইল ৩০০ থেকে ৮০০ কিমি রেঞ্জে ২০০-৩০০ কেজি ওজনের হাই-এক্সপ্লোসিভ ওয়ারহেড বহন করতে পারে। লক্ষ্যবস্তুতে পড়লে ব্যাপক ধ্বংস সৃষ্টি করে।
পারমাণবিক অস্ত্র মজুদের জায়গায় যদি মিসাইল হামলা হয়, তাহলে কী হবে? সাধারণত পারমাণবিক অস্ত্র সুপার হাই সিকিউরিটি স্টোরেজে রাখা হয়, যাকে হার্ডেনড আন্ডারগ্রাউন্ড বাঙ্কার বা স্পেশাল ওয়েপন স্টোরেজ এরিয়া (SWSA) বলা হয়। এই বাঙ্কারগুলোতে সাধারণ মিসাইল পড়লেও পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটবে না। কারণ পারমাণবিক বোমা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ইলেকট্রনিক সিকোয়েন্স ও ডিটোনেশন কোডের মাধ্যমে ফাটানো যায়।
বহু স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে শুধুমাত্র ফিজিক্যাল বিস্ফোরণ বোমা ফাটাতে পারে না। তবে, তেজস্ক্রিয় বিকিরণ লিক হতে পারে এবং ফিজিক্যাল ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
প্রশ্ন হল, হামলা যদি খুব জোরালো হয় আর তেজস্ক্রিয় পদার্থ বাইরে বেরিয়ে আসে, তাহলে কী হবে? তাহলে এর প্রভাব ‘ডার্টি বোম্ব’ এর মতো হবে। আশেপাশের এলাকা তেজস্ক্রিয় বিকিরণে দূষিত হবে। মানব স্বাস্থ্যের উপর ও পরিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। সেই এলাকা দ্রুত খালি করতে হবে।
যদি আক্রমণকারী পক্ষ বাঙ্কার বাস্টার বা থার্মোবারিক অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়, যা গভীরতায় প্রবেশ করে বিস্ফোরণ ঘটায়, তাহলে বেশি তেজস্ক্রিয় লিক ও বিষাক্ততা ছড়াতে পারে। তবুও পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটবে না। এই ভয় থেকেই পৃথিবীর সব পারমাণবিক স্টোরেজ বহু গভীরে তৈরি করা হয়।
পারমাণবিক কমান্ড কী কাজ করে? পারমাণবিক কমান্ড হল একটি দেশের সেই কমান্ড স্ট্রাকচার যা পারমাণবিক অস্ত্রের মোতায়েন, নিয়ন্ত্রণ, পরিচালনা ও ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। এর কাজ হলো: সব পারমাণবিক অস্ত্র, মিসাইল, বোমারু বিমান ও সাবমেরিনের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা। অস্ত্রগুলোকে নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যুদ্ধ বা জরুরি পরিস্থিতিতে পারমাণবিক হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া। শত্রু হামলা বা পারমাণবিক হুমকিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করা।
কখনও পারমাণবিক অস্ত্র স্টোরেজে দুর্ঘটনা ঘটেছে? হ্যাঁ, দু’বার এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে: ১৯৮৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে—সেভরোমোর্স্কে একটি পারমাণবিক মিসাইল স্টোরেজে আগুন লাগে। এতে ১৬টি পারমাণবিক অস্ত্রবাহী মিসাইল ধ্বংস হয়। পারমাণবিক বিস্ফোরণ না ঘটলেও এলাকা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয় এবং তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৭ সালে আমেরিকায়—মিনোট এয়ার ফোর্স বেসে ভুলবশত একটি B-52 বোমারু বিমানে ৬টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রাখা হয় এবং তা ১৫০০ কিমি দূরে নিয়ে যাওয়া হয়। দীর্ঘ সময় ধরে কেউ বিষয়টি টেরই পায়নি।
পারমাণবিক অস্ত্রের স্টোরেজ কীভাবে তৈরি হয়? সেগুলোর নিরাপত্তা কেমন? এই স্টোরেজগুলো সুপার-সিকিউর, হার্ডেনড আন্ডারগ্রাউন্ড বাঙ্কার বা স্পেশাল ওয়েপন স্টোরেজ এরিয়া হিসেবে তৈরি হয়। ৪-৫ মিটার পুরু প্রাচীর থাকে। দরজা ব্লাস্ট-প্রুফ হয়। মাটির অনেক গভীরে নির্মাণ করা হয়। হাই-ভোল্টেজ তার, মোশন সেন্সর, সিসিটিভি, রেজার ওয়্যার সুরক্ষা ব্যবস্থার অংশ। প্রতিটি অস্ত্র রেনফোর্সড স্টিল লাইনড স্টোরেজ ভল্টে রাখা হয়। ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। প্রবেশ শুধুমাত্র ইলেকট্রনিক অ্যাক্সেস কন্ট্রোলের মাধ্যমে হয়।