ভারত হলো এমন একটা দেশ যেখানে স্যানিটেশন বা স্বাস্থ্যব্যবস্থার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, আর বিশেষ করে শহুরে এলাকায় এই সমস্যাগুলো বেশি হয়ে থাকে, যেখানে বেশি জনসংখ্যা আর পরিকাঠামোর অভাব দুটোই একসাথে দেখা যায়। ঘন ঘন বন্যা আর ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সবার জন্য পর্যাপ্ত ও নিরাপদ পাবলিক টয়লেট (জনসাধারণের জন্য তৈরি শৌচাগার) গড়ে তোলা কঠিন হয়ে যায়। প্রবল বর্ষার কারণে সবথেকে বেশি যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় সেটা হলো কার্যকরীভাবে বর্জ্য জলের ব্যবস্থাপনা না করতে পারা আর সেটাকে আমাদের থাকার জায়গাতে ও স্বচ্ছ জলের ব্যবস্থার মধ্যে ঢুকতে না দেওয়া।
advertisement
বর্জ্য জল হলো এমন তরল বর্জ্য যেটা শৌচাগার (টয়লেট), সিঙ্ক, শাওয়ার আর অন্যান্য উত্সের থেকে বেরিয়ে আসে। এরমধ্যে জৈব পদার্থ, রোগজীবাণু, পরিপোষক পদার্থ, রাসায়নিক আর অন্যান্য দূষিত উপাদান থাকে যেগুলোকে পরিশোধন বা ট্রিটমেন্ট না করা হলে সেগুলো পরিবেশ আর মানুষের স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। বর্জ্য জলের ব্যবস্থাপনা করার মধ্যে বর্জ্য জলকে সংগ্রহ করা, পরিবহন করা, পরিশোধন বা ট্রিটমেন্ট করা আর সেটাকে সঠিক জায়গায় নিষ্পত্তি করা ইত্যাদি কাজগুলো অন্তর্ভূক্ত থাকে যাতে এর থেকে হওয়া খারাপ প্রভাবকে কমানো যায়।
বর্জ্য জলকে কেন্দ্রীভূতভাবে (সেন্ট্রালাইজড) ব্যবস্থাপনা করার সমস্যা
শহরাঞ্চলে, বর্জ্য জলের ব্যবস্থাপনা সাধারণত কেন্দ্রীভূত (সেন্ট্রালাইজড) ব্যবস্থার মাধ্যমে করা হয় যেটা নর্দমা, পাইপ, পাম্প এবং ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের উপর নির্ভর করে। তবে, এই ব্যবস্থাগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভারতের অনেক অংশে পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে না, এগুলোর উপর খুব বেশি পরিমাণে লোড হয়ে থাকে বা এগুলোর কোনো অস্তিত্বই থাকে না, আর এটা বিশেষ করে বস্তি এবং নিয়ম না মেনে তৈরি করা বাড়িঘরগুলোতে হয়ে থাকে যেখানে শহরের বেশিরভাগ গরীব লোকেরা বাস করে। শহরাঞ্চলে বর্ষাকালে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে বেশিরভাগ সময়েই বর্জ্য জলের পরিমাণ বেড়ে যায়। প্রথাগত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা, যেমন সেপটিক ট্যাঙ্ক বা খাটা পায়খানা (পিট ল্যাট্রিন) প্রচুর পরিমাণে জল ধরে রাখতে পারে না, যার ফলে আশেপাশের এলাকাগুলোতে বর্জ্য জল উপচে পড়ে আর সেই এলাকাগুলোকে দূষিত করে তোলে, আর এর ফলে মল বা বর্জ্য পদার্থ বৃষ্টির জলের সঙ্গে প্রবাহিত হয়ে কাছাকাছি জলাশয়গুলোতে গিয়ে মিশে যায়।
এটা জনগণের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণভাবে ক্ষতিকারক হতে পারে, কারণ অপরিশোধিত বর্জ্য জল রোগ ছড়াতে পারে আর মাটির নিচের জলকে দূষিত করতে পারে। এছাড়াও, বর্ষাকালে যখন প্রবল বৃষ্টির ফলে নর্দমা এবং ড্রেনগুলো জলে ভরে যায় আর উপচে পড়ে, তখন এই ব্যবস্থাগুলোর ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
এই সমস্যার একটা সম্ভাব্য সমাধান হলো স্থানীয় প্রেক্ষাপট এবং অবস্থার জন্য উপযুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিকেন্দ্রীভূত (ডিসেন্ট্রালাইজড) ব্যবস্থার ব্যবহার করা যা উৎস বা এর কাছাকাছি অঞ্চলের বর্জ্য জলকে পরিশোধিত করে। এই ব্যবস্থাগুলো বৃষ্টির জলকে আটকাতে পারে এই ধরণের শৌচাগার (মনসুন-প্রুফ টয়েলেট) হিসেবেও পরিচিত, কারণ এগুলো বন্যা এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময়ও সঠিকভাবে কাজ করে। বৃষ্টির জলকে আটকাতে পারে এই ধরণের শৌচাগারগুলোকে (মনসুন-প্রুফ টয়েলেট) এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে এগুলো স্থায়ী হয়, যে কোনো পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে পারে আর টেকসই হয়। এগুলোকে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া বা কম দামী উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি করা হয় যাতে বর্জ্য জলকে কার্যকরীভাবে পরিশোধিত করা যায়।
বৃষ্টির জলকে আটকাতে পারে এই ধরণের শৌচাগার (মনসুন-প্রুফ টয়েলেট) তৈরি করার কৌশল:
জল নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে উন্নত করা:
বৃষ্টির জলকে আটকাতে পারে এই ধরণের শৌচাগারগুলোর (মনসুন-প্রুফ টয়েলেট) জন্য অনেক বেশি পরিমাণে জলের নিষ্কাশন করতে পারবে এই ধরণের শক্তিশালী নিষ্কাশন ব্যবস্থার প্রয়োজন আছে। অনেক বড়ো আকারের ড্রেনের পাইপ লাগাতে হবে, জায়গাটিকে সঠিকভাবে ঢালু করতে হবে আর এই পাইপগুলোকে পরিষ্কার রাখতে হবে ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে যাতে কোনোভাবে জল আটকে না যায় আর জল উপচে না পড়ে।
শৌচাগারকে (টয়েলেট) উঁচু করে বানাতে হবে:
শৌচাগারগুলো (টয়েলেট) উঁচু জায়গার উপর তৈরি করলে প্রবল বর্ষায় এগুলোর মধ্যে জল ঢুকতে পারবে না। এক্ষেত্রে যদি সঠিকভাবে ডিজাইন করে মেঝে তৈরি করা হয় তাহলে সেটা শৌচাগারের (টয়েলেট) জায়গাকে শুকনো রাখবে আর বর্জ্য জল উপচে পড়ার সম্ভাবনাকে কমিয়ে দেবে।
বৃষ্টির জল সংগ্রহ করার ব্যবস্থা:
বৃষ্টির জলকে আটকাতে পারে এই ধরণের শৌচাগারগুলোর (মনসুন-প্রুফ টয়েলেট) সাথে যদি বৃষ্টির জলকে সংগ্রহ করার ব্যবস্থাও করা যায় তাহলে এর থেকে একসাথে দুটো সুবিধা পাওয়া যাবে। সংগ্রহ করা বৃষ্টির জল পান করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না, কিন্তু এটা অন্যান্য বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে যেমন শৌচাগারে ফ্লাশ করা বা জল দেওয়ার ক্ষেত্রে আর সেচের কাজে। এর ফলে স্বচ্ছ জলের উৎসের উপর বেশি নির্ভর করতে হবে না আর অতিরিক্ত জল স্যানিটেশন ব্যবস্থাকে নষ্টও করতে পারবে না।
বুদ্ধি করে বর্জ্য জলের ব্যবস্থাপনা করা:
বৃষ্টির জলকে আটকাতে পারে এই ধরণের শৌচাগারগুলোতে (মনসুন-প্রুফ টয়েলেট) যদি স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় তাহলে আরো ভালোভাবে বর্জ্য জলের ব্যবস্থাপনা করা যেতে পারে। সেন্সর-ভিত্তিক ব্যবস্থাগুলো জলের স্তরকে নিরীক্ষণ করতে পারে, কোথায় ময়লা আটকে বা জমে আছে সেটাকে সনাক্ত করতে পারে আর যাঁরা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন তাঁদেরকে সতর্ক করতে পারে যাতে সময়মতো জলের উপচে পড়াকে আটকানো যায় ও দূষণকে রোধ করা যায়। এছাড়াও, ভারী বৃষ্টির সময় অতিরিক্ত জলকে বিভিন্ন জল সংগ্রহ কেন্দ্রে বা পরিশোধনাগারে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য অটোমেটেড ভাল্ভ এবং পাম্পের ব্যবহার করা যেতে পারে।
কার্যকরীভাবে বর্জ্য জলের পরিশোধন করার জন্য প্রযুক্তি:
বিকেন্দ্রীভূত পরিশোধন ব্যবস্থা (ডিসেন্ট্রালাইজড ট্রিটমেন্ট সিস্টেম):
প্রথাগত কেন্দ্রীভূত বর্জ্য জল পরিশোধনাগারগুলো বর্ষার জলের আকস্মিক প্রবাহকে আটকাতে সক্ষম নাও হতে পারে। বিকেন্দ্রীভূত পরিশোধন ব্যবস্থা, যেমন নির্মিত জলাভূমি, অ্যানেরোবিক ডাইজেস্টার, বা বায়ো-ডাইজেস্টার টয়লেট, আরো বেশি স্থায়ী আর উপযুক্ত সমাধান দেয়। এই ব্যবস্থাগুলো উৎসে বর্জ্য জলকে কার্যকরীভাবে পরিশোধন করে আর কেন্দ্রীভূত পরিকাঠামোর উপর থেকে চাপ কমিয়ে দেয়।
গ্রেওয়াটার রিসাইকেল করা (ব্যবহার করা জলকে আবার ব্যবহারযোগ্য করে তোলা):
বৃষ্টির জলকে আটকাতে পারে এই ধরণের শৌচাগারগুলোতে (মনসুন-প্রুফ টয়েলেট) যদি গ্রেওয়াটার রিসাইকেল করার ব্যবস্থা থাকে তাহলে সেটা জলের অপচয়কে কমাতে এবং স্যানিটেশনের পরিকাঠামোর উপর চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। হাত ধোয়া এবং স্নান করার মতো কাজের থেকে উৎপন্ন গ্রেওয়াটারকে পান করার জন্য ব্যবহার করা যাবে না কিন্তু এটাকে পরিশোধন করে শৌচাগারে ফ্লাশ করা বা জল দেওয়া আর বাগানে জল দেওয়ার মতো বিভিন্ন কাজে আবার ব্যবহার করা যেতে পারে।
ভার্মিফিল্ট্রেশন:
ভার্মিফিল্ট্রেশন হলো একটা প্রাকৃতিকভাবে পরিশোধন করার পদ্ধতি যেটাতে কেঁচোকে ব্যবহার করে বর্জ্য জলের জৈব পদার্থকে ভেঙে ফেলা হয়। এই প্রক্রিয়াটা শুধুমাত্র বর্জ্য জলকে পরিশোধন করার ক্ষেত্রেই কার্যকরী নয়, বরং এর থেকে পুষ্টিতে সমৃদ্ধ ভার্মিকম্পোস্টও তৈরি করা হয় যা গাছপালার জন্য সার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। বৃষ্টির জলকে আটকাতে পারে এই ধরণের শৌচাগারগুলোতে (মনসুন-প্রুফ টয়েলেট) যদি ভার্মিফিল্ট্রেশন সিস্টেম ব্যবহার করা হয় তাহলে সেটা বর্জ্য জল ব্যবস্থাপনা করার জন্য একটা পরিবেশ-বান্ধব এবং টেকসই পদ্ধতি হতে পারে।
জনস্বাস্থ্য আর পরিবেশ রক্ষা করার সাথে সাথে বর্ষাকালে কার্যকরী হতে পারে এমন টেকসই ও স্থায়ী স্যানিটেশন ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য নগর পরিকল্পনাবিদ (আরবান প্ল্যানার), নীতিনির্ধারক (পলিসি মেকার) আর সম্প্রদায়কে সবার প্রথমে খুব গুরুত্ব সহকারে এই সমাধানগুলো গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি, এটা হলো আমাদের নতুন বাস্তব; আর আমরা অনুমান করতে পারি যে আবহাওয়ার পরিবর্তনকে প্রশমন করার প্রচেষ্টা খুব তাড়াতাড়ি ফল দেবে, কিন্তু বাস্তবিকভাবে, আমাদেরকে সবথেকে খারাপ পরিস্থিতির জন্যও তৈরি থাকতে হবে।
পরিবর্তনের জন্য সমস্ত দৃষ্টিভঙ্গিকে এই প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করতে, সেগুলোকে সঠিকভাবে আর দ্রুত বাস্তবায়িত করতে এবং সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে, আমাদেরকে শৌচাগারের স্বাস্থ্যবিধি ও স্যানিটেশনের সমস্যার ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করতে হবে। হারপিক এবং নিউজ 18-এর মিশন স্বচ্ছতা অর পানি ব্যাপকভাবে স্বচ্ছতাকে সমর্থন করে আর প্রত্যেকের পরিষ্কার শৌচাগারে যাওয়ার অধিকার রয়েছে সেটাকে নিশ্চিত করার ব্যাপারে একটা শক্তিশালী মঞ্চ হিসেবে কাজ করে। এটা সমস্ত লিঙ্গ, যোগ্যতা, বর্ণ বা জাতির জন্য সমান অধিকারের সমর্থন করে এবং দৃঢ়ভাবে এই বিষয়টার উপর জোর দেয় যে শৌচাগার পরিষ্কার রাখা প্রত্যেকের দায়িত্ব।
3 বছর ধরে, মিশন স্বচ্ছতা অর পানি শৌচাগারের স্বাস্থ্যবিধি আর শৌচাগার ব্যবহারের সাথে সম্পর্কিত ভারতের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রের স্টেকহোল্ডারদেরকে এক জায়গায় একত্রিত করতে একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। এটা শৌচাগার ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিটা ধারণাযোগ্য বিষয়ে আর এটা কিভাবে আমাদেরকে আর সম্পূর্ণ সমাজকে প্রভাবিত করে সেই ব্যাপারে একটা বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করছে।
সেটা আপনার বাচ্চাদের শৌচাগারের শিষ্টাচার সম্পর্কে শেখানোই হোক বা আপনার এলাকায় পাবলিক টয়লেটকে উন্নত করার জন্য আপনি কিভাবে আপনার স্থানীয় পৌরসভার ওয়ার্ড অফিসারের সাথে কথা বলতে পারেন তা শেখাই হোক – মিশন স্বচ্ছতা অর পানিতে সেসব প্রয়োজনীয় তথ্য রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি একটা প্রভাবশালী যুক্তি তৈরি করতে পারবেন। সামাজিক পরিবর্তন আনার জন্য, এমনকি যদি আমাদের নির্মিত পরিবেশেও পরিবর্তন আনতে হয় সেজন্যও অনেক মানুষের একসাথে আওয়াজ ওঠানোর প্রয়োজন হয়। সৌভাগ্যবশতঃ, আমাদের সাথে 1.4 কোটি লোক আছে।
আসুন আমরা নিশ্চিত করি যে আমাদের আওয়াজ যেন সবাই শুনতে পায়। আপনি কিভাবে এই জাতীয় কথাবার্তায় আপনার অবদান রাখতে পারবেন আর কিভাবে সুস্থ ভারত ও স্বচ্ছ ভারতের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন সেটা জানতে এখানে আমাদের সাথে যোগ দিন।