গোটা বিশ্বের তাবড় রাষ্ট্রনেতারা এই সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতে আসছেন। আর সেই কারণেই এই কড়াকড়ি। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে নয়াদিল্লি পৌঁছনোর কথা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। আবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনকেরও শুক্রবার দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে নয়াদিল্লিতে পা রাখার কথা রয়েছে।
আসলে বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশের শীর্ষ নেতা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ আধিকারিক, আমন্ত্রিত অতিথি দেশ এবং ১৪টি আন্তর্জাতির সংস্থার প্রধানরা এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে চলেছে। তার পাশাপাশি জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে এর ২০টি সদস্য দেশ তো যোগ দিচ্ছেই। এই ২০টি সদস্য দেশের তালিকায় রয়েছে আর্জেন্তিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চিন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, মেক্সিকো, রিপাবলিক অফ কোরিয়া, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
advertisement
আরও পড়ুন: চিরকাল ‘লুকিয়ে’ সইফ-সোহার বোন সাবা আলি খান, কিন্তু কেন? ২৭০০ কোটির মালকিন কী কাজ করেন?
এছাড়াও এই শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাংলাদেশ, মিশর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহিকে। রাষ্ট্রপুঞ্জ, আইএমএফ, বিশ্ব ব্যাঙ্ক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ডব্লিউটিও, ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন, ফিনান্সিয়াল স্টেবিলিটি বোর্ড এবং ওইসিডি-র মতো বিশ্ব সংগঠনগুলিও জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে চলেছে। এর বাইরে আফ্রিকান ইউনিয়ন, এইউডিএ-এনইপিএডি, এএসইএএন, আইএসএ, সিডিআরআই এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কেরও যোগ দেওয়ার কথা।
রাজধানী শহরের প্রগতি ময়দানের ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার ‘ভারত মণ্ডপম’-এ আয়োজন করা হয়েছে এই শীর্ষ সম্মেলনের। আর জন্য কড়া নিরাপত্তাবেষ্টনী জারি হয়েছে দিল্লিতে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে কাজ। এই অনুষ্ঠান সম্পর্কে কয়েকটি বিষয় নিম্নোক্ত:
১.উত্তরাঞ্চলে ত্রিশূল অনুশীলন চালাচ্ছে ভারতীয় বিমান বাহিনী। কিন্তু সেই অনুশীলন ৭-১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। ওই সময় কোনও যুদ্ধবিমান উড়বে না। বিমান বাহিনীর আধিকারিকরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, অনুশীলনে অংশগ্রহণকারী বিমানগুলি চালানো হবে না। তবে অন্যান্য উড়ান নিয়মিত চলাচল করবে।
২. প্রতিরক্ষা সূত্র মারফত জানা গিয়েছে যে, এই সময়ের মধ্যে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনকে সামনে রেখে দেশের রাজধানী অঞ্চলের আকাশসীমাকে সুরক্ষিত রাখার জন্য ভারতীয় বায়ুসেনা নিজেদের ফ্যালকন AWACS বিমানগুলিকে কাজে লাগাচ্ছে। গোটা দেশের আকাশসীমার উপর নজর রাখতে শুরু করেছে ওই বিমানগুলি। নয়াদিল্লির আকাশসীমার নিরাপত্তা জোরদার করতে ভারতীয় বিমান বাহিনী উন্নত বিমানবন্দরগুলিতে নিজেদের রাফাল এবং অন্যান্য যুদ্ধবিমান মোতায়েন করছে।
আরও পড়ুন: বিদেশ সফরের আগে মন্ত্রিসভায় রদবদল, মমতার নজরে বাবুল সুপ্রিয়
৩. শত্রুপক্ষের বিমান কিংবা ড্রোন হামলা রুখে দেওয়ার জন্য সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেমগুলিকেও দিল্লির আশপাশের এলাকায় মোতায়েন করে রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি ভারতীয় বিমান বাহিনী গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে চিন এবং পাকিস্তান সীমান্ত বরাবর ভারতের উত্তরাঞ্চলে ত্রিশুল নামে একটি বড় প্রশিক্ষণ মহড়া পরিচালনা করছে।
৪. চিনুক এবং অ্যাপাচি-সহ ভারি-লিফট পরিবহণকারী বিমান এবং হেলিকপ্টারগুলির সঙ্গে মহড়ায় অংশগ্রহণ করছে রাফাল, মিরাজ ২০০০ এবং এসইউ-৩০এমকেআই-সহ সমস্ত বড় যুদ্ধ বিমান। গরুড় বিশেষ বাহিনীও সেই মহড়ার অংশ হয়েছে, যেখানে বায়ু শক্তির সমস্ত উপাদান অনুশীলন করা হচ্ছে। এই অনুশীলনটি গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে চালানো হচ্ছে। আর আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর নাগাদ তা শেষ হবে লাদাখ, হিমাচল প্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর এবং পঞ্জাব-সহ উত্তরাঞ্চলে।
৫. জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের আগে একাধিক সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে এবং অনুষ্ঠান সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত প্রতিক্রিয়া সুনিশ্চিত করতে নয়াদিল্লি মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিল (এনডিএমসি) কন্ট্রোল রুমে তিনটি ফোন নম্বর রাখা হয়েছে। এনডিএমসি শীর্ষ সম্মেলনের সময় বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে নাগরিক পরিষেবা এবং বিরামহীন সমন্বয় সুনিশ্চিত করার জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
৬. এনডিএমসি-র ভাইস-চেয়ারম্যান সতীশ উপাধ্যায়ের বক্তব্য, এই নম্বরগুলি শুধুমাত্র জি২০ কন্ট্রোল রুমের জন্য এনডিএমসি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে কর্তব্যরত আধিকারিক এবং কর্মীদের জন্য রাখা হয়েছে। তবে এর মাধ্যমে কিন্তু সাধারণ মানুষ অভিযোগ জানাতে পারবেন না। এনডিএমসি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই নম্বরগুলি মূলত নাগরিক পরিষেবা, জরুরি পরিস্থিতি এবং জি২০ সম্মেলনের সময় উদ্ভূত উদ্বেগ, চাহিদা এবং অনুসন্ধানের জন্যই রাখা হচ্ছে।
৭. জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের কারণে গতকাল সন্ধ্যা ৭টা থেকে দিল্লি-উত্তরপ্রদেশের সীমানা সম্পূর্ণ রূপে সিল করে দেওয়া হয়েছে। এখন ইউপি গেট, আনন্দ বিহার, সীমাপুরী বর্ডার, তুলসী নিকেতন বর্ডার, খাজুরি পুস্তা বর্ডার থেকে যানবাহন দিল্লিতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর আগামী ১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই নিয়ম বলবৎ থাকবে। ইস্টার্ন পেরিফেরাল এক্সপ্রেসওয়ে থেকে যানবাহনগুলো নিজ নিজ গন্তব্যে যাবে। তবে অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত গাড়িগুলিকে দিল্লিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।
৮. এই মেগা ইভেন্টের জন্য রাজধানী দিল্লিকে একেবারে কনের মতো সাজানো হয়েছে। বাঁদরের উপদ্রব ঠেকানোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেমন – বড় আকারে বাঁদরের কাট-আউট ব্যবহার করা হয়েছে। চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই সম্মেলনে যোগ দেবেন না। তাঁর জায়গায় চিনা প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও আসছেন না জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে। তাঁর পরিবর্তে রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করবেন বিদেশ মন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।
৯. ১৯৯৯ সালে এশিয়ার আর্থিক সঙ্কটে পরে বিশ্বের ২০টি প্রধান দেশ একটি অর্থনৈতিক গোষ্ঠী গঠন করে, যা জি২০ নামে পরিচিত। এই গোষ্ঠী বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মোট জিডিপি-র ৮০ শতাংশ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশের জন্য দায়ী। এখনও পর্যন্ত মোট ১৭টি জি২০ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর এবারের ১৮-তম জি২০ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে নয়াদিল্লিতে। কেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ সংক্রান্ত বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ঐকমত্য নেই, তা নিয়ে এই বছর এখনও পর্যন্ত জি২০ গোষ্ঠী কোনও রকম যৌথ বিবৃতি জারি করেনি।
১০. এই প্রথম বারের জন্য ভারত এত শক্তিশালী রাষ্ট্রনেতাদের আতিথেয়তা করার সুযোগ পেয়েছে। ভারতীয় সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানের থিম রাখা হয়েছে ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’। অর্থাৎ, গোটা বিশ্বই হল একটি পরিবার। এবারের জি২০ সম্মেলনে কী কী বিষয়ে আলোচনা হতে পারে? অনুমান, বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলি উন্নয়নশীল দেশগুলিকে আরও বেশি ঋণ দেবে কি না, সেই বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রেডিট সিস্টেমের উন্নতি এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির নিয়মগুলি নিয়েও আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তার উপর ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাব নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।