উত্তর প্রদেশের ফিরোজাবাদ জেলার শিকোহাবাদের বাসিন্দা তনুর সঙ্গে দু’ বছরেরও কম সময় আগে বিয়ে হয় ফরিদাবাদের রোশননগরের বাসিন্দা অরুণ সিং-এর৷ শুক্রবার ভোরে সিং পরিবারের বাড়ির ঠিক বাইরে একটি গলিতে ১০ ফুট গভীর গর্ত থেকে তাঁর পচে যাওয়া মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তনু নিখোঁজের পরপরই স্থাপন করা একটি কংক্রিটের স্ল্যাবের নীচে তাঁর মৃতদেহ পাওয়া যায়। জানা গিয়েছে, মাস দুয়েক আগে অর্থাৎ তনুকে খুন করার পর পরই ওই স্ল্যাব তৈরি করা হয়েছিল৷
advertisement
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তনুর শ্বশুর ভূপ সিং খুনের কথা স্বীকার করেছেন। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, ২১-২২ এপ্রিল রাতে, ভূপ সিং বাড়িতেই তনুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে৷ এর পর প্রৌঢ় ভূপ তার পুত্রবধূর মৃতদেহ একটি গর্তে ফেলে দেয় বলে ধারণা করা হচ্ছে যা মূলত জল নিষ্কাশনের জন্য খনন করা হয়েছিল।
“আমরা বর্তমানে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের এই হত্যাকাণ্ডে সম্ভাব্য ভূমিকা তদন্ত করছি। যৌতুক-সম্পর্কিত উদ্দেশ্য আছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ তবে আরও তদন্ত চলছে,” বলেছেন এসিপি রাজেশকুমার লোচন।
প্রসঙ্গত খুনের পর, ভূপ সিং ২৫ এপ্রিল দাবি করে যে তনু নিখোঁজ হয়ে গেছে। তনুর বোন প্রীতি যখন ফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কোনও সাড়া পাননি, তখন সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। প্রীতি জানান, বিয়ের প্রথম দিন থেকেই তাঁর বোন যৌতুকের জন্য হয়রানির শিকার হয়ে আসছিলেন। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই তনু তাঁর বাবা মায়ের বাড়িতে ফিরে আসেন এবং এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সেখানেই থাকেন।
“বিয়ের মাত্র কয়েক মাস পরেই তনু আমাদের সঙ্গে ফিরে এসেছিল কারণ তাঁর সঙ্গে সেখানে ভাল ব্যবহার করা হচ্ছিল না,” প্রীতি সাংবাদিকদের বলেন। “সে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের সঙ্গে ছিল। যখন আমরা তাঁকে শ্বশুরবাড়িতে ফের পাঠাই, তখন নির্যাতন আবার শুরু হয়। তারা তাঁকে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে দিত না, এমনকি ফোনেও না।” অভিযোগ প্রীতির৷
২৩শে এপ্রিল, প্রতিবেশীরা জানান যে তাঁরা সিং পরিবারের বাড়ির বাইরে একজন মাটি সরবরাহকারীকে আসতে দেখেছেন। ড্রেনেজ নির্মাণের কারণ দেখিয়ে অরুণ সিং এবং ভূপ সিং প্রায় ১০ ফুট গভীর একটি গর্ত খনন করিয়েছিলেন। দুই দিন পরে, ২৫শে এপ্রিল, তনুর নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করতে পুলিশের কাছে যান ভূপ সিং। মৃত্যুর সঠিক সময় এবং কারণ নির্ধারণের জন্য তনুর দেহ ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সিং পরিবারের চার সদস্য – ভূপ সিং, তার স্ত্রী সোনিয়া, ছেলে অরুণ এবং মেয়ে কাজলের নামে এফআইআর করা হয়েছে।
এসিপি লোচনের মতে, কথিত খুনের সময় কাজল এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্য বাড়িতেই ছিলেন। তাদের কারও আগে থেকে এই হত্যাকাণ্ড জানা ছিল কিনা বা তাদের মধ্যে কেউ এই ঘটনায় জড়িত কিনা, তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে।