সেই কবে থেকে গোর্খা রেজিমেন্ট মানেই বিশ্বস্ততা আর সাহসিকতার প্রতীক। ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শুধু ভারত নয়, ইংল্যান্ড ও নেপালের সেনাবাহিনীতেও কাজ করছেন তাঁরা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে নেপালি গোর্খাদের সম্পর্ক অনেক পুরনো, গভীর।
advertisement
এবার সেই সম্পর্কেই বড়সড় ফাটল দেখা দিল। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নেপালি গোর্খাদের নিয়োগ একপ্রকার বন্ধ করে দিল নেপাল সরকার। এর সরাসরি প্রভাব পড়তে চলেছে ভারতের গোর্খা রেজিমেন্টে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী এক দশকের মধ্যে এই রেজিমেন্টে আর কোনও নেপালি গোর্খার দেখা নাও মিলতে পারে।
২০১৯ সাল থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কোনও নেপালি গোর্খা যোগ দেননি। বর্তমানে যাঁরা রয়েছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তাঁরাও অবসর নেবেন। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে গোর্খা রেজিমেন্টে আর কোনও নেপালি গোর্খা থাকবেন না।
নেপালি গোর্খাদের অভাব পূরণ করতে উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন এবং গাড়োয়াল এলাকা থেকে নিয়োগ শুরু করেছে ভারতীয় সেনা। তাঁরা নিজস্ব গৌরব এবং বীরত্ব নিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিচ্ছেন। কিন্তু নেপালি গোর্খাদের অনুপস্থিতিতে রেজিমেন্টের গঠন কাঠামো বদলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, কারণ গোর্খা রেজিমেন্টে এতদিন পর্যন্ত নেপালিদেরই প্রাধান্য ছিল।
এবার প্রশ্ন এর কারণ কী? অগ্নিপথ প্রকল্পের কারণেই নেপাল ভারতীয় সেনাবাহিনীতে গোর্খাদের পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে বলে অনুমান করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। এই নিয়ে নেপালেও ব্যাপক বিতর্ক চলছে। প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকে নেপাল তাদের মাটিতে ভারতীয় সেনাকে কোনও নিয়োগ শিবির চালাতে দেয়নি। ফলে নিয়োগও বন্ধ।
এই পরিস্থিতিরই ফায়দা তুলতে চাইছে চিন। জানা গিয়েছে নেপালি গোর্খাদের চিনা সেনাবাহিনীতে নিয়োগ নিয়ে কথাবার্তা চালাচ্ছে তারা। আরও কয়েকটি দেশ এই বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। চিন ও নেপালের মধ্যে এখন সম্পর্ক ভাল। তাই চিনা সেনাবাহিনীতে নেপালি গোর্খাদের যোগদানের সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। যদি তাই হয়, তাহলে ভারতীয় সেনার কাছে ভবিষ্যতে বড়সড় চ্যালেঞ্জ আসতে চলেছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, স্বাধীনতার আগে, গোর্খা রেজিমেন্টে প্রায় ৯০ শতাংশ সেনাই ছিলেন নেপালি গোর্খা। মাত্র ১০ শতাংশ ভারতীয় গোর্খা। সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে এই অনুপাত বদলেছে। বর্তমানে গোর্খা রেজিমেন্টে ৬০ শতাংশ নেপালি গোর্খা এবং ৪০ শতাংশ ভারতীয় গোর্খা রয়েছেন।