স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, মেডিক্যাল টিম এলাকায় গিয়েছে। চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের দল ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে। রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থার করা হয়েছে। তাঁদের সকলকেই পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ওই সব এলাকার জলের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি ওই গ্রামগুলিতে পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
রোগ যাতে আরও ছড়িয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে আগেভাগেই উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। তাই সংক্রমিত গ্রামগুলির পাশের গ্রামগুলিতে সরকারি দল পৌঁছেছে। চলছে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ। স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ আধিকারিকরাও পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে জেলায় গিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
advertisement
এই পরিস্থিতিতে দেখে নেওয়া দরকার কলেরা জ্বর কী, কী ভাবে ছড়ায়, রোধ করা যায় কী ভাবে—
কলেরা (Cholera) কী?
কলেরা এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া বাহিত রোগ। এই মারাত্মক সংক্রামক রোগটি সাধারণত ছড়িয়ে পড়ে দূষিত জলের মাধ্যমে। ওই জল পেটে গেলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারাত্মক ডিহাইড্রেশন, ডায়েরিয়া, বমি এবং জ্বর হতে পারে। সঠিক চিকিৎসা না করা হলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক থেকে অতিসঙ্কটজনক হতে পারে। হতে পারে মৃত্যুও।
কলেরার লক্ষণগুলো কী কী?
কলেরা যে ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে তার নাম ‘ভাইব্রিও কলেরি’ (Vibrio Cholerae)। এর প্রভাবে মৃদু উপসর্গ যেমন দেখা দিতে পারে, তেমন মারাত্মক উপসর্গও দেখা দিতে পারে।–
ডায়েরিয়া: ডায়েরিয়া কলেরা জ্বরের সবচেয়ে মারাত্মক লক্ষণগুলির মধ্যে একটি। এতে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে জলে বেরিয়ে যায়।
বমি: ডায়রিয়ার সঙ্গেই অনেক রোগীর মধ্যে বমির ভাবও দেখা যায়। অনেকে বমির উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে এই বমি ভাব দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রেও শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে জল বেরিয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: রোজ বেড়ে চলেছে করোনার দাপট, একদিনে প্রাণ হারালেন ৪৫, সংক্রামিত ১৬,৯০৬!
জ্বর এবং ক্লান্তি: উপরোক্ত লক্ষণগুলি ছাড়াও, কলেরা সংক্রমিত ব্যক্তির শরীরে উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বর আসতে পারে। থাকতে পারে অপরিসীম ক্লান্তি। কলেরায় আক্রান্ত হলে সাধারণত শরীরে সোডিয়াম ক্লোরাইড (Sodium Chloride) এবং পটাসিয়ামের (Potassium) মতো লবণের ঘাটতি দেখা দেয়। জলের সঙ্গেই তা বেরিয়ে যেতে পারে। তার ফলে অনেক সময় সংক্রমিতের পেশীতে টান ধরা বা ক্র্যাম্প (Cramps)-এর মতো সমস্যা হতে পারে।
কী ভাবে কলেরা প্রতিরোধ করা যেতে পারে?
ভারতের মতো দেশে প্রায় প্রতি বছরই বর্ষাকালে হানাদারি চালায় কলেরা। জলবাহিত এই রোগের প্রাদুর্ভাব এ এমনই সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়ায় যে দেশের গ্রামে গঞ্জে অহরহ ঘটে সংক্রমণ। তবে গত কয়েক দশকে দেশে কলেরায় মৃত্যুর হার অনেকটাই কমেছে বলে দাবি। অথচ, কিছু সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করলেই রুখে দেওয়া সম্ভব এই জলবাহিত অসুখটিকে।
১. কোনও এলাকায় কলেরা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে সুস্থ ব্যক্তিদের অবশ্যই ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
২. জল পান করার সময় অত্যন্ত সচেতন থাকতে হবে। নিরাপদ পানীয় জলের উৎস থেকেই জল আনতে হবে। তার পরেও তা ফুটিয়ে এবং ঠান্ডা করে পান করতে হবে।
আরও পড়ুন: ৫ মাসে সর্বোচ্চ বাড়ল দৈনিক কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা, উদ্বেগে স্বাস্থ্য মন্ত্রক
৩. চা এবং কফির মতো গরম পানীয় পান করা উপকারী।
৪. কোনও ভাবেই অসিদ্ধ খাবার খাওয়া যাবে না। কাঁচা শাকসব্জি ও মাংস ভাল করে ধুয়ে, সুসিদ্ধ করে রান্না করতে হবে।
চিকিৎসা
কলেরা জ্বরের চিকিৎসার একমাত্র উপায় হলো শরীরে জল ও লবণের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা। সমস্যা তৈরি হলে বা সামান্য উপসর্গ দেখা দিলেই সচেতন থাকা দরকার। হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীকে নিয়ে গেলে সেখানেই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো অ্যান্টিবায়োটিক (Antibiotics) প্রয়োগ করা হবে। সেই সঙ্গে দেওয়া হবে ওরাল (Oral) বা ইন্ট্রাভেনাস (Intravenous) হাইড্রেশন। শরীরে যথাযথ মাত্রায় জল ও লবণ পৌঁছলেই রোগী দ্রুত সেরে উঠতে পারবেন।
সতর্কতা
নিবন্ধে উল্লিখিত পরামর্শগুলি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের ভিত্তিতে দেওয়া। কোনও রকম উপসর্গ দেখা দিলেই পেশাদার চিকিৎসা পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।