পথ চলতি প্রায় সকলেরই চোখ টানছে সেই লেখা। কৌতুহল প্রকাশ করতেই দোকানে বসে থাকা যুবক তন্ময় চুনারি কথায়, অনেক দুঃখের সাথেই নামটা লিখেছি। স্নাতকোত্তর করার পরও আজ আমাকে লটারী বিক্রি করতে হচ্ছে। সারাদিনে ৪০০ টিকিট বিক্রি করতে পারলে ১৬০ টাকা কমিশন পাই। এই দিয়ে তো সংসার চলে না। তাই টিউশনও পড়াই। এই ভাবেই চলছে দিন। দাদা ও মা-কে নিয়ে তিনজনের সংসারে সম্প্রতি মৃত্যু হয়েছে দাদার। দাদার রোজগারেই পড়াশোনা করেছেন তন্ময়। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে বড়ো দাদার মৃত্যুতে তাই আকাশ ভেঙে পড়েছিল তন্ময়ের। বাড়িতে অসুস্থ মা। মাসে সাড়ে তিন হাজার টাকার ওষুধ (Medicine) লাগে তন্ময়ের মায়ের। কিন্তু সেই টাকাটুকুর সংস্থান করাও তন্ময়ের কাছে অসাধ্য হয়ে পড়েছে।
advertisement
আরও পড়ুন: বিয়ের পর থেকেই চরম অশান্তি, শ্বশুরবাড়িতে যে কাণ্ড ঘটালেন জামাই, দিশেহারা সকলেই...
সাংসারিক সকল প্রতিকূলতাকে দূরে সরিয়ে রেখে চোয়াল শক্ত করে লড়াই চালাচ্ছেন তন্ময়। গলায় একরাশ ক্লান্তি নিয়ে বললেন,“ভোর সাড়ে তিনটেয় উঠি । সেখান থেকে হাইস্কুল মাঠে দৌড়াতে যাই। বাকিদের দৌড় প্র্যাকটিস করাই। তারপর সকাল ৬ টায় টিউশন (Tuition) পড়াই। নিজেও পড়াশোনা করি। তারপর আটটায় দোকান খুলতে হয়”। এটাই রোজকার রুটিন তন্ময়ের। যদিও পড়া চালিয়ে যাওয়া মোটেই সহজ ছিল না তন্ময়ের কাছে। ক্লাস সেভেন-এ পড়ার সময় তাদের ছেড়ে চলে যায় বাবা। স্বভাবতই পেটের ভাতের সংস্থান করতে এরপর স্কুল ছেড়ে দিয়ে সাইকেলের দোকানেও কাজ করতে হয়েছে। কখনও ভাগচাষী হিসেবে লাঙল টেনেছেন অন্যের জমিতেও। পরবর্তীতে দাদার আয় কিছুটা স্থিতিশীল হতেই ফের ফিরেছেন স্কুলে। কষ্ট করে পাশ করেছেন বিএ, এমএ (B.A, M.A)। আশা ছিল চাকরি করবেন। সংসারের হাল ধরবেন। স্বপ্ন ছিল পুলিশ বা সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশের জন্য কিছু করবেন। কিন্তু চাকরি মেলেনি। জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার লড়াইয়ে তাই বাধ্য হয়েই লটারীর টিকিট বিক্রিকেই বেছে নিয়েছেন তন্ময়।
ভাগ্য যাচাই করতে নওদা আমতলা বাজারে তার দোকানে লটারী কিনছেন অনেকে। আর তন্ময়? লটারীর টিকিট (Lotary ticket selling) বিক্রি করতে করতে স্বপ্ন দেখেন নিজের ভাগ্যের চাকা ঘোরার। স্বপ্ন দেখেন সেনাবাহিনী বা আইনরক্ষকের উর্দি পড়ে দেশ জননীর সেবা করার। স্বপ্ন সাকার হোক তন্ময়ের।
কৌশিক অধিকারী