আরও পড়ুন: টানা বৃষ্টির জেরে থমকে করম পুজোর প্রস্তুতি! মন খারাপ চা বলয়ে
৩৫০ বছর আগে গৌরসুন্দর চৌধুরী ও দ্বারকানাথ চৌধুরীর হাতে তৈরি হয়েছিল এই রাজবাড়ি। একসময় রাজপ্রাসাদের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতো রাজকীয় বৈভব। কিন্তু আজ সে বিবর্ণ। জরাজীর্ণ কঙ্কালসার নিমতিতা রাজবাড়ি যেন কোনও ক্রমে দাঁড়িয়ে আছে জানা-অজানা নানান ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে। একসময় বাংলা নাটকের আঁতুড়ঘর ছিল এই রাজবাড়ি। সংস্কৃতির সঙ্গে এই রাজবাড়ির যোগও দীর্ঘদিনের। স্বাধীনতা আন্দোলনেও প্রভাব ছিল এই রাজবাড়ির। এই বাড়িতে রাত কাটিয়েছেন কাজী নজরুল ইসলাম। ক্ষিরোদ প্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, শিশির কুমার ভাদুড়ীর নাটক মঞ্চস্থ হত এখানে। বিশ্ববিখ্যাত চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় তাঁর দেবী ও জলসাঘর সিনেমার শুটিং করেছিলেন এখানে।
advertisement
জৌলুস না থাকলেও আজও দুর্গাপুজোর সময় বহু সাধারণ মানুষ উপস্থিত হন নিমতিতা জমিদারবাড়ির পুজো দেখতে। বসে ছোট ছোট দোকান নিয়ে মেলা। এই প্রাচীন পুজোকে ঘিরেই উৎসবে মেতে ওঠেন গ্রামের বাসিন্দারা। এই বাড়ির এক পাশে রয়েছে ঠাকুর দালান। এখন কোনও রকমে সেখানে চলছে পুজোর কাজ। তবে পুরনো জাঁকজমক আজ আর নেই। একসময় ১০১ ঢাক সহযোগে পুজো সুচনা করা হত। সেখানে অংশ নিত গ্রাম ছাড়িয়ে দূরদূরান্তের মানুষও। পুজোর ক’দিন নববধূর সাজে সেজে উঠত এই রাজবাড়ি। ষষ্ঠীর দিন হত মায়ের আবাহন। পুজো পাঁচদিন গ্রামের মানুষের পাত পড়ত রাজবাড়িতেই। পুজো শেষে ছাড়া হত নীলকণ্ঠ পাখি।
কালের নিয়মে আজ সেসবই ম্লান। বর্তমানে গৌর সুন্দর চৌধুরীর চতুর্থ প্রজন্ম এই পুজো করে। বাপ-ঠাকুরদার আমলের এই পুজো তারা ফেলতে না পারলেও এই পুজোতে নেই তার পুরনো গৌরব। পুজোর জন্যই তারা সুদূর কলকাতা থেকে নিমতিতা আসেন। এখনও একচালার দেবী প্রতিমা তৈরি হয়। প্রতিমা শিল্পীও বংশানুক্রমি ভাবে এই কাজ করে আসছেন। বারোয়ারি পুজো যতই হোক আজও এখানে রাজবাড়ির প্রতিমাদর্শন ছাড়া পুজো অসম্পূর্ণ। ইতিহাসের পাতা যেভাবে জীর্ণ হয়ে যায় ঠিক সেভাবেই কালের গর্ভে চলে যেতে বসেছে মুর্শিদাবাদের গৌরব নিমতিতা রাজবাড়ি।
কৌশিক অধিকারী