বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই শহরের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত থেকে ভৈরব পুজো মেতে উঠলেন। বহরমপুর শহরের প্রাচীন খাগড়ার ভৈরব। যা শুরু হয়েছিল আনুমানিক প্রায় ১৫০ বছর আগে ৷ কিন্তু বাবার পুজোর আদিস্থান এখানে নয় ৷ কোনও অন্য স্থানে এক নলখাগড়ার বনেই ছিল বাবার আরাধনাক্ষেত্র৷ সেই বোন কোনও কারণবশত পুড়ে যাওয়ার পরে বাবার দেহের বা বাবার পুজোর একটি অংশ শোনা যায় 'চিমটা' বর্তমান পুজাস্থলে এসে পড়ে ৷ তখন বাবার সেই অংশ দেখার পর থেকেই তৎকালীন স্থানীয় বাসিন্দারা এখানেই বাবার পুজোর শুরু করেন৷ যা আজ বহরমপুর তথা মুর্শিদাবাদের এক ঐতিহ্য ও ভক্তিপূর্ণ প্রিয় উৎসবের রূপ নিয়েছে৷
advertisement
আরও পড়ুনঃ অসুস্থ হলে আর ছুটতে হবে না হাসপাতালে, দুয়ারে পৌঁছবেন ডাক্তাররাই
ভৈরবের পুজো দিতে ভিড় জমান বহু সাধারণ মানুষ। কার্তিক সংক্রান্তিতে প্রায় ২০ ফুট হয়তো বা তারও বেশি উচ্চতার এই বাবা ভৈরবের পুজো দিতে আসেন স্থানীয় ছাড়াও বহু দূরদূরান্তের ভক্ত। পুজো কমিটির তথ্য অনুযায়ী, ভৈরবের মূর্তি তৈরির খরচ দেবার জন্য আগামী ৪০ বছর পর্যন্ত ভক্তদের নাম নথিভুক্ত হয়ে আছে, এর থেকেই বোঝা যায় বাবা ভৈরবের জনপ্রিয়তা৷ বাবার কাছে ভক্তরা মানত করেন, পূরণও হয় সেই ভক্তদের মনস্কামনা৷
আরও পড়ুনঃ কার্তিক পুজো নয়! সংক্রান্তিতে ২৫০ বছরের প্রাচীন এই পুজোয় মেতে ওঠেন গ্রামবাসীরা
অন্যদিকে, সৈদাবাদের নিমতলায় বাবা ভৈরবের আরও একটি পুজো হয় যা 'নিমবাবার পুজো' নামে পরিচিত৷ সৈদাবাদের নিমতলার বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা যায় এই পুজো খাগড়ার বাবা ভৈরবের থেকেও পুরোনো।পাশাপাশি, বহরমপুর শহরের খাগড়া-ইন্দ্রপ্রস্থ এলাকার সুন্দর ভারতী স্কুলের দুই দিকে দুটো ভৈরবের পুজো হয়। এক জনের নাম ‘প্রেমবাবা’। অন্য জনের ‘ডাববাবা’।
একদা ভৈরবের পুজোর দিনে ভক্তদের কয়েকজন দেশি মদ খেয়ে ছিলেন কচি ডাবের জল দিয়ে। তার পর সেকি উদ্দাম নাচ। সেই থেকে তিনি ডাববাবা। আর ‘প্রেমবাবা’র মানত করলে নাকি প্রেম ব্যর্থ হয় না। স্বাভাবিক নিয়মেই প্রেমিক মানুষ তাঁকে ‘প্রেমবাবা’ বলেই ডাকবেন। অন্যদিকে, বান্ধব প্রেসে মোড়ের মহাদেব কেন ‘চিঁড়েবাবা’ তার ব্যাখ্যা না মিললেও তিনি বেশ ‘জাগ্রত’ বলেই এলাকার লোকজন মনে করেন। কোনও এক কালে নাদুস নুদুস ভৈরব ঠাকুরকে দেখে সৈয়দাবাদ-গোয়ালপাড়ায় এক ভক্ত বলে ওঠেন, এ বার আমাদের ভৈরব ঠাকুর দেখতে দারুণ হয়েছে। এক্কেবারে ঝাক্কাস। সেই থেকে লোকমুখে বাবা হলেন ‘ঝাক্কাসবাবা’।
কুঞ্জঘাটার কাছে সে বার ভাগীরথী নদীর ভাঙন আটকাতে বোল্ডার ফেলা হয়। সেই থেকে বাবা হলেন ‘বোল্ডারবাবা’। পাশাপাশি, বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যে ভৈরবের উচ্চতা, গঠনশৈলিতে যেমন বৈচিত্র রয়েছে, তেমনই রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন নামও। তার মধ্যে শহরের অন্যতম প্রাচীন ভৈরবপুজো হল সৈদাবাদ নিমতলাপাড়ার ভৈরব। নিমতলাপাড়ার এই ভৈরব বহরমপুর তথা জেলাবাসীর কাছে নিমবাবা নামে পরিচিত। নিমবাবাকে খুব জাগ্রত বলে মানেন সকলে। মনস্কামনা পূরণের জন্য প্রতি বছর ভক্তরা মানত করেন। ফলে একদিনের এই ভৈরব পুজোর আনন্দে মেতে উঠেছেন বহরমপুর বাসী।
কৌশিক অধিকারী