কিন্তু সে প্রশ্ন করেনি কেন সে আর সকলের মতো চলা ফেরা করতে পারে না। নিজেকে নিয়ে নয়, সে প্রশ্ন করে অজানাকে জানার জন্য। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কেড়ে নিয়েছে তার চলার শক্তি। বড়ঞা বিধানসভা এলাকার সুন্দরপুর অঞ্চলের বৈদ্যনাথপুরে তার ঘরের ফুটো চাল দিয়ে যখন বিছানায় জ্যোৎস্না এসে পড়ে, তখন মহাকাশ নিয়ে অজস্র প্রশ্ন তাকে নিয়ে যায় অন্য জগতে।
advertisement
আরও পড়ুন দিঘার সৈকতে ভেসে উঠল মৃতদেহ! সমুদ্র শহরে চাঞ্চল্য
আলম ছোট্ট থেকেই স্বপ্ন দেখতো বৈজ্ঞানিক হওয়ার। পা দিয়ে লিখে ঊননব্বই শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করতেই প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে গিয়েছিল। বিধায়ক থেকে রাজনৈতিক নেতাদের আনাগোনায় সরগরম হয়ে পড়েছিল বাড়ির উঠোন। ফেসবুক, ইনস্টা ভরে গিয়েছিল তার ছবি আর শুভেচ্ছা বার্তায়।ভেবেছিল দিন বদলাবে।মহাকাশ নিয়ে স্বপ্ন দেখার ইচ্ছে আরও মজবুত হয়েছিল। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি, কেউ কথা রাখে না। তাই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য একাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সে।
বাবার মুদিখানার ছোট দোকানের আয়ে সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তবু সে স্বপ্ন দেখা ছাড়েনি। আর এতে আলমের সম্বল উচ্চ মেধা। কান্দি রাজ হাই স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আলম স্বপ্ন পূরণের অসম যুদ্ধে একাই লড়ে যাচ্ছে। সঙ্গী শুধু তার মা। মুর্শিদাবাদ জেলার প্রান্তিক এলাকার বিশেষভাবে সক্ষম আলম চিন্তিত হয়ে জানিয়েছে, "মহাকাশ নিয়ে পড়ার ইচ্ছা। বিশাল ব্রহ্মাণ্ডকে জানতে খুব ইচ্ছে করে। স্কলারশিপের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও সুযোগ-সুবিধা, টাকা পাইনি।"
আরও পড়ুন South 24 Paraganas News: আলমারির ভিতর জমিয়ে রাখা বোমা! ১২ টি বোমা নিষ্ক্রিয় করল বম্ব স্কোয়াড
তার মা আলম আরা বেগম জানালেন, "কান্দি পৌরসভার চেয়ারম্যান ঘর ভাড়ার টাকা দেন। এছাড়া আর কারও কাছ থেকে কোনও সুবিধা এখনও পাইনি। কোনওরকমে পায়ে লেখে আমার ছেলে । ছোট থেকেই এই রকম। যেটুকু চিকিৎসা করেছি তাতে কিছু হয়নি। কেউ পাশে দাঁড়ালে ছেলে পড়তে পারে।" আলমকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে এলাকাবাসীও। কিন্তু তাদেরও তো অভাবের সংসার। আনন্দ নগর জুনিয়র হাইস্কুলের পর গড্ডা হাইস্কুল এবং এখন বর্তমানে কান্দি রাজ উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান নিয়ে পাঠরত। সব প্রতিকূলতা পার করে ফার্স্টবয় আলম একাই লড়ছে — স্টিফেন হকিং যে তার আদর্শ।
কৌশিক অধিকারী