ক্রেতা সুরক্ষা দফতর আদালতে তিনি অভিযোগ করে জানিয়েছিলেন টাকার বিনিময়ে বেসরকারি নার্সিংহোম ও চিকিৎসকের কাছে তাঁর স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রায় ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় কোন চিকিৎসা করা হয়নি তাঁর স্ত্রীর। সেই কারণে মৃত্যু হয়েছে স্ত্রীর। অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু করে ক্রেতা সুরক্ষা দফতর। প্রায় আট বছর ধরে চলে এই মামলা। অবশেষে ২৪ মে ২০২৩ এই মামলার রায় ঘোষণা হয়। দুই পক্ষের সাক্ষী প্রমাণ নেওয়ার পর চিকিৎসক, নার্সিংহোম ও ক্লিনিক কতৃপক্ষকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। অমিত সাহাকে ৩০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
advertisement
মালদহ জেলা কমিশনের রেজিস্ট্রার সীতাংশু কুমার সাহা বলেন, “২০১৬ সালে এই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। আদালতে দুই পক্ষের শুনানি হয়। নার্সিং হোম, চিকিৎসক ও একটি ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। আদালত তাদের ৩০ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে সেই টাকা ক্ষতিপূরণ হিসাবে মামলাকারীকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে মালদহ শহরের সর্বমঙ্গলাপল্লী এলাকার বাসিন্দা অমিত সাহা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে একটি চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি অভিযোগ করে জানান, তাঁর স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হলে মালদহ শহরের চিকিৎসক এ. কে পোদ্দারকে দেখান। চিকিৎসক ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে সন্তান জন্মানোর তারিখ দেন। কিন্তু ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রসূতি অসুস্থ হলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। চিকিৎসক মালদহ নার্সিংহোমে ভর্তি করায় রোগীকে। ২১ ফেব্রুয়ারি অপারেশন করে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। সকালে অপারেশন করে সন্তান জন্মানোর পর সকাল ১১.৩০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিট পর্যন্ত কোন চিকিৎসা হয়নি। রোগীকে চিকিৎসক পর্যবেক্ষণ পর্যন্ত করেননি। তারপর প্রসূতি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত নটা নাগাদ দ্বিতীয় অপারেশন হয়। তারপর ২২ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু হয় মহিলার।
প্রথম অপারেশনের পর প্রায় আট ঘন্টা কোন চিকিৎসা হয়নি। এখানেই চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ তুলে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে অভিযোগ দায়ের হয়। কারণ বেসরকারি নার্সিংহোমে টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়। ওই সময়ের জন্যেও টাকা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিষেবা মেলেনি। সেই ভিত্তিতে অভিযোগ হয়। আদালতের পক্ষ থেকে চিকিৎসার গাফিলতির জন্য কুড়ি লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে চিকিৎসক নার্সিংহোম ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি আরও ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে মৃত প্রসূতির কন্যা সন্তানের লালন-পালনের জন্য। ক্রেতা সুরক্ষা দফতর এর এমন রায়ে খুশি মৃত মহিলার পরিবার।
হরষিত সিংহ