ধূমপানের বাইরে COPD: উদীয়মান কারণ
যদিও ধূমপান COPD-এর জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী ঝুঁকির কারণ, তবে এখন এটি আর একমাত্র কারণ নয়। বর্তমানে অধূমপায়ীদেওর COPD-তে আক্রান্ত হওয়ার ক্রমবর্ধমান সংখ্যা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। এই পরিবর্তনশীল প্রবণতার পেছনে নিম্নলিখিত কারণগুলি মূলত অবদান রাখে:
• নগর বায়ু দূষণ এবং ক্রমবর্ধমান দূষণ কণার মাত্রা
দৈনন্দিন দূষিত বাতাসের সংস্পর্শে আসা ফুসফুসের কার্যকারিতা ধীরে ধীরে প্রভাবিত হয় এবং এটি COPD এবং ফুসফুসের ক্যানসারের সঙ্গে যুক্ত বলে ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে
advertisement
• বাড়িতে জৈব জ্বালানির সংস্পর্শে আসা
রান্নার ধোঁয়া, বিশেষ করে যখন কেউ দুর্বল বায়ুচলাচলযুক্ত রান্নাঘরে কাজ করে বা জৈব জ্বালানি ব্যবহার করে, তা দীর্ঘমেয়াদে COPD-এর ঝুঁকি বাড়ায়, বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে।
• পেশাগত ঝুঁকি
কারখানার কর্মী, নির্মাণ কর্মী, স্যানিটেশন কর্মী এবং কৃষি শ্রমিকরা সকলেই সংশ্লিষ্ট পরিবেশে শ্বাস-প্রশ্বাসের কারণে ঝুঁকিতে থাকেন, যা এক সময়ে গিয়ে COPD-এর দিকে পরিচালিত করতে পারে।
• শৈশবে ঘন ঘন শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ
শৈশব সংক্রমণ, অকালে জন্ম, জন্মের সময়ে ওজন- এই সমস্তই পরবর্তী সময়ে COPD-এর বিকাশের সঙ্গে যুক্ত।
COPD হল পরিবর্তনশীল মাত্রার একটি রোগ, যা আর কেবল ধূমপায়ী বা বয়স্কদেরই প্রভাবিত করে না; তাই, প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্তকরণ অপরিহার্য।
৪০ বছরের পরে ফুসফুসের স্বাস্থ্য পরীক্ষা কেন গুরুত্বপূর্ণ
যদিও একটি নির্দিষ্ট বয়সের পরে প্রতিরোধমূলক কার্ডিয়াক চেক-আপ নিয়মিত হয়ে উঠেছে, ফুসফুসের চেক-আপও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত। ৪০ বছর বয়সের পর ফুসফুসের স্থিতিস্থাপকতা স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পায় এবং এক্সপোজারের কারণে পরিবর্তনগুলি দেখা দিতে শুরু করে। দুর্ভাগ্যবশত প্রাথমিক পর্যায়ে COPD প্রায়শই নীরবে দেখা দেয়, লক্ষণগুলিকে বয়স-সম্পর্কিত ক্লান্তি এবং শ্বাসকষ্ট বলে ভুল করা হয়।
প্রাথমিক সতর্কতা লক্ষণগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:
• দীর্ঘস্থায়ী হালকা কাশি
• পরিশ্রমের সময় শ্বাসকষ্ট, যেমন সিঁড়ি বেয়ে ওঠা
• শ্বাসকষ্ট বা বুকে ঘড়ঘড়ে শব্দ
• সকালে গলা জ্বালা এবং থুতু
• ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার মতো পর্ব
এই লক্ষণগুলি সাধারণত ফুসফুসের কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস না হওয়া পর্যন্ত নির্ণয় করা হয় না।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে COPD প্রাথমিক পর্যায়ে সব হাসপাতালে একটি সাধারণ স্পাইরোমেট্রি পরীক্ষার মাধ্যমে সহজেই নির্ণয় করা যেতে পারে, কোনও লক্ষণ অনুভব করার অনেক আগেই। এই ব্যথাহীন পরীক্ষাটি বায়ুপ্রবাহ এবং প্রতিটি ফুসফুস কতটা বাতাস ধারণ করতে পারে তা পরিমাপ করে, এইভাবে শ্বাসযন্ত্রের রোগগুলি নির্ভুলতার সঙ্গে নির্ণয়ে সহায়তা করে।
জীবনধারা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ
যেহেতু অল্প বয়সেও COPD বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, সেই জন্য প্রাথমিক শনাক্তকরণের সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ রোগের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্যভাবে ধীর করতে পারে। মূল সুপারিশের মধ্যে রয়েছে:
• ৪০ বছর বয়স থেকে বার্ষিক ফুসফুস পরীক্ষা, বিশেষ করে যাঁদের ইতিমধ্যেই ঝুঁকির কারণ রয়েছে তাঁদের জন্য।
• ধূমপান এড়িয়ে চলা, প্যাসিভ স্মোকিংয়ের সংস্পর্শও ক্ষতিকারক
• দূষিত পরিবেশে বা পেশাগত সংস্পর্শে মাস্ক ব্যবহার
• নিয়মিত ব্যায়াম – যোগব্যায়াম বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের মতো কার্যকলাপ বৃদ্ধি
• অ্যালার্জি এবং দীর্ঘস্থায়ী কাশির প্রাথমিক ব্যবস্থাপনা
• ফ্লু এবং নিউমোকোকাল ভ্যাকসিনের মতো টিকাদান পরিস্থিতি আরও খারাপ করে এমন সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়।
আরও পড়ুন: শীত যতই পড়ুক, জমবে না নারকেল তেল! কনকনে ঠান্ডাতেও থাকবে দিব্যি তরল, ৪ সেরা উপায় শিখে নিন
COPD: বর্তমানের আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি
আধুনিক ইনহেলার, লাংস রিহ্যাবিলিটেশন কর্মসূচি, ভ্যাকসিনেশন এবং উন্নত রোগ নির্ণয়ের সরঞ্জামগুলি COPD-এর পরিষেবায় নাটকীয়ভাবে উন্নতি এনেছে। সময়মতো রোগ নির্ণয় করা গেলে এবং চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করলে রোগীরা শারীরিকভাবে সক্রিয় এবং স্বাধীন জীবনযাপন করতে পারেন।
বর্তমানের চিকিৎসাগত অগ্রগতি এই পুরনো ধারণাকে উড়িয়ে দিচ্ছে যে COPD উত্তরোত্তর খারাপ অবস্থার দিকে যায়। সচেতনতা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে COPD নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে।
শেষ কথা
COPD এখন আর শুধুই ধূমপায়ীদের বা বয়স্কদের রোগ নয়। জীবনধারা, পরিবেশগত এবং পেশাগত সংস্পর্শের কারণে এখন তরুণ এবং অধূমপায়ী জনগোষ্ঠীর মধ্যেও COPD দেখা যাচ্ছে। সচেতনতা এবং প্রাথমিক স্ক্রিনিং হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হস্তক্ষেপ।
৪০ বছর বয়স হলেই শ্বাসযন্ত্রের যত্ন নেওয়া শুরু করা উচিত। বছরে একবার ফুসফুসের একটি সাধারণ পরীক্ষা সময়মত হস্তক্ষেপ এবং দেরিতে অপরিবর্তনীয় অবনতির মধ্যে পার্থক্য তৈরি করবে।
আমাদের ফুসফুস প্রতিদিন নীরবে আমাদের জন্য কাজ করে। লক্ষণগুলি প্রকটভাবে দেখা দেওয়ার সময়ে অনেকটা ক্ষতি হয়ে যায়। আমাদের ফুসফুসের স্বাস্থ্যের জন্য তাই সক্রিয় হওয়ার সময় এসেছে। কেন না, ভালভাবে শ্বাস নেওয়া কেবল জীবনের লক্ষণ নয়- এটি ভালভাবে বেঁচে থাকার লক্ষণ!
