সেই শর্ত মেনেই বিয়ে করেছেন ঊষসী। বেনারসির সঙ্গে তাঁর পরনের অলঙ্কারের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল নকল বা ঝুটো। মুক্ত কণ্ঠে সে কথা জানিয়েছেন তিনি। লিখেছেন, ‘আমার কোনো লজ্জা নেই এটা বলতে, যে বিয়ের দিন সাজার জন্য যা গয়না আমি পরেছি, তার ৯৫% ইমিটেশন।’ এই সিদ্ধান্তের জন্য বহু কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। অনেকেই তির্যক মন্তব্যে ক্ষতবিক্ষত করেছেন। বলেছেন “ঝুটা গয়না পরে বিয়ে করবি?” বা, “চাকরি করিস, বাবা চাকরি করে.. তাও এত ছোটলোকি?” লোকের কটূক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গু্ষ্ঠ দেখিয়ে তিনি নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। তবে তাঁর দাবি সম্পূর্ণ মানেননি বাবাও। এই সদ্য পরিণীতা লিখেছেন, ‘বাবাও পুরোই মেনে নেয়নি, কিছু গয়না আমায় কিনতে হয়েছে, রোজ পরার মতো টুকটাক।’
advertisement
আরও পড়ুন : চর্ব্য চোষ্য খেয়ে ‘এতে’ই হাত মুছতেন মুঘল সম্রাটরা! এখন ‘এটা’-ই আমরা একগাদা টাকা দিয়ে কিনে খাই
গয়না যাও বা কিনেছেন, ধর্মীয় আচার আচরণ কিছুই পালন করেননি ঊষসী। তাঁর হাতে ছিল না শাঁখা-পলা। হয়নি সিঁদুরদান। তাঁর দৃপ্ত লেখায় ‘সিঁদুর, শাঁখা পলা, যজ্ঞ ইত্যাদি কিছুই স্থান পায়নি আমার বিয়েতে। আমি পিতৃতান্ত্রিক ধর্মীয় ব্যবস্থায় বিশ্বাস করিনা, আর উল্টোদিকে বাবাকে সারাজীবনের পরিশ্রম আমার গয়না কিনে জলে দিতে হোক, তাতেও বিশ্বাস করিনা। আর, আমার নিজেরও ক্ষমতা নেই। যেটুকু ক্ষমতা ছিল, শখ মিটিয়েছি।’
এখানেই ঘোরতর আপত্তি নেটমহলের একাংশের। তাঁদের অভিযোগ, ঊষসী সবই করেছেন ভাইরাল হওয়ার জন্য। সোশ্যাল মিডিয়ার নজর টানতে চান তিনি। ক্ষুব্ধ নেটিজেনদের প্রশ্ন, তিনি যদি অর্থ অপচয়ই না করতে চান, তাহলে প্রিওয়েডিং ফোটোগ্রাফি, সজ্জা, লোককে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো-সহ ব্যয়বহুল কাজগুলি করতে গেলেন কেন? রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করলেই তো পারতেন-এমনই মত ক্ষুব্ধদের। বিয়েতে ধর্মীয় আচার আচরণ পালন না করেও তিনি রীতিনীতি ঐতিহ্যের চরম অবমাননা করেছেন বলে বক্তব্য নেট জগতের একাংশের। তাছাড়া সোনার গয়নার মতো মূল্যবান যৌতুক অনেকেই মেয়ের বিয়েতে দিতে পারেন না, বলছেন তাঁরা। তাই সোনার গয়না না পরে বিয়ে করা কোনও মহান বা ‘বৈপ্লবিক’ কাজ নয় বলেই অভিমত তাঁদের।
তবে ঊষসীর পাশেও আছেন বহু নেটনাগরিক। তাঁদের দাবি, তিনি যা করেছেন, একদম ঠিক করেছেন। তিনি যদি বাবার টাকায় সোনার গয়নায় সাজতে না চান, তাহলে আপত্তির কী আছে? ধর্মীয় আচার মেনে সিঁদুর না পরাতেও কোনও অপরাধ দেখছেন না তাঁরা। তাছাড়া ঊষসী তো একবারও বলেননি তিনি কাউকে নিমন্ত্রণ করবেন না। তিনি যেটা করবেন বলে ভেবেছিলেন, সেটাই করেছেন। তাঁর ইমিটেশন গয়না পরে বিয়ে করা এবং সিঁদুর-শাঁখা-পলা না পরার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, তিনি নিজের ইচ্ছেমতো বিয়ে করেছেন, নিজের প্রোফাইলে যা শেয়ার করতে চান, করেছেন। তা নিয়ে অন্যদের এত মাথাব্যথা কেন? প্রশ্ন তাঁদের। বাঙালি বিয়েতে সোনার গয়না দেওয়ার চাপ যে পাত্রীর বাবা বা তাঁর পরিবারের উপরেই পড়ে, সেটা নিয়েও সোচ্চার হয়েছেন কেউ কেউ। তাঁদের মত, যদি ভবিষ্যতের সঞ্চয়ের কথা ভেবেই সোনার গয়না বিয়েতে দেওয়া হয়, তাহলে সেটা শুধু মেয়ের বাবার দায়িত্ব হবে কেন? সেক্ষেত্রে ছেলের পরিবারও তো দায়িত্ব ভাগ করে নিতে পারেন। তাঁদের কটাক্ষ, অনেক সময় শ্বশুরবাড়ি থেকে পাত্রীকে শুধুমাত্র নোয়া (সোনা বা রুপো বাঁধানো লোহা) দিয়েই কর্তব্য সেরে ফেলা হয়। কিন্তু মেয়ে যাতে গা ভর্তি গয়না পরে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারে, সেই চাপ মাথায় রাখতে হয় তাঁর পরিজনকে। এটা শুধু রীতি নয়। বরং স্টেটাস এবং লোকের কটাক্ষ ও তির্যক প্রশ্নের হাত থেকে বাঁচার পথও বটে!
এত তর্ক বিতর্কের পর ঊষসীর কী মন্তব্য? সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলারদের উদ্দেশে তাঁর সপাট জবাব, ‘আপনারাও ভাইরাল হবার চেষ্টা করুন! অযথা হিংসে করবেননা।’