এই বিশেষ রীতি শুধু রায় পরিবারকেই নয়, পুরো গ্রামকেই আবেগে জড়িয়ে রেখেছে। প্রায় ২০০ বছরেরও বেশি পুরোনো এই পুজো। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পুজোর সূচনালগ্ন থেকেই মাটির প্রতিমার পরিবর্তে দেবীর রূপ অঙ্কিত হত পটচিত্রে। সেই আঁকা ছবিকেই দেবী রূপে প্রতিষ্ঠা করে পুজো করার রীতি আজও অটুট।
আগে গ্রামে দক্ষ চিত্রশিল্পীদের দিয়ে আঁকানো হত এই পট। প্রতিবার দুর্গাপুজোর আগে শিল্পীর হাতে নতুন পট আঁকানোর প্রথা ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চিত্রশিল্পীর সংখ্যা যেমন কমেছে, তেমনই প্রযুক্তির ছোঁয়া এসে বদলে দিয়েছে প্রাচীন পদ্ধতিকে। বর্তমানে পটচিত্রের জায়গায় এসেছে কম্পিউটারে প্রিন্ট করা পোস্টার, যা একটি লোহার ফ্রেমে আটকে মণ্ডপে প্রতিষ্ঠিত হয়। পদ্ধতি পাল্টালেও আবেগ ও ভক্তির মাত্রা একটুও কমেনি।
advertisement
পুজোর পরিবেশেও এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। প্রাচীন মন্দিরের সামনেই তৈরি হয় বাঁশের প্যান্ডেল। প্যান্ডেল ঘিরে থাকে রঙিন আলোর ঝলকানি, আলোয় ঝলমল করে ওঠে মণ্ডপ। দুর্গাপুজোর এই কয়েকটি দিন রায় পরিবারের প্রত্যেক সদস্য ঘরে ফিরে একত্রিত হন। মিলিতভাবে তারা পালন করেন পূর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া ঐতিহ্য। পরিবারের সদস্য অনুপম রায় বলেন, “এখানে প্রতিমা নিরঞ্জন হয় না। আগে পুকুরে পট নিয়ে গিয়ে একটু জল ছিটিয়ে নিয়ে আসা হত। কিন্তু বেশ কিছু বছর ধরে ঘট বিসর্জনের পর জল নিয়ে এসে মায়ের চরণ ধুয়ে দেওয়া হয়।”
এই পূজোর নিজস্ব কিছু অনন্য নিয়মও রয়েছে। যেমন, অষ্টমী ও নবমীর দিন এখানে দেওয়া হয় চালকুমড়ো ও আখের বলি। আজও যখন দূরদূরান্তের মানুষ ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো দেখতে আসেন, জয়পুরের রায় পরিবারের পটচিত্র পূজো তাঁদের কাছে এক অনন্য অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে। পুরনো দিনের স্মৃতি, পারিবারিক ঐক্য আর প্রাচীন রীতি মেনে চলার দৃঢ়তাই এই পুজোকে আলাদা পরিচিতি দিয়েছে। সময়ের স্রোত অনেক কিছু বদলালেও, জয়পুরের রায় পরিবারের দুর্গাপুজো আজও এক জীবন্ত ইতিহাস, যা অতীত আর বর্তমানকে হাতে হাত রেখে বয়ে নিয়ে চলেছে ভবিষ্যতের দিকে।