স্থানীয় ইতিহাস গবেষকদের মতে, এগুলোর বেশিরভাগই বহু শতক আগের স্থাপনা, যেগুলো সময়ের আঘাতে আজ ভগ্নদশায়। এখানে আসার সঙ্গে সঙ্গেই নজরে পড়বে বিশাল এক বটগাছ যার বয়স প্রায় দুশো বছর বলে মনে করেন স্থানীয় প্রবীণরা। এই বিশাল বটগাছে ঝুলে থাকে হাজারের মত বাদুড়, যার জন্যই জায়গাটি এখন পরিচিত “বাদুড় বাগান” নামে। প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই অঞ্চল ইতিমধ্যেই স্থানীয়দের কাছে একটি আকর্ষণীয় ল্যান্ডস্কেপ। চাঁইপাট হাটতলার এই বাদুড়বাগান শুধু প্রকৃতির জন্য নয়, আশপাশের ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্যও বিশেষ পরিচিত। অঞ্চলজুড়ে আজও ছড়িয়ে রয়েছে সপ্তরথ শৈলীর একটি পশ্চিমমুখী শিব দেউল যার ভিতরে একাধিক শিবলিঙ্গ রয়েছে। আরও রয়েছে প্রাচীন ইট পাথরের ভগ্নস্তূপ, যেগুলো দেখে স্পষ্ট বোঝা যায় এগুলো একসময় সুগঠিত স্থাপনা ছিল। ইতিহাস গবেষকেরা মনে করেন এখানে মধ্যযুগীয় স্থাপনার ছাপ স্পষ্ট।
advertisement
“আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন”
এই বটগাছের মাথায় ঘন বাদুড়ের বাসস্থান এলাকাকে আলাদা গুরুত্ব দিয়েছে। পরিবেশবিদদের মতে এ রকম বৃহৎ বাদুড় কলোনি গ্রামীণ পশ্চিম মেদিনীপুরে এখন খুবই বিরল। তাই স্থানীয়দের অনেকেই চান এলাকাটিকে জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হোক। এই অঞ্চলকে ঐতিহ্যের মানচিত্রে আরও স্পষ্ট করে রেখেছে চাঁইপাট হাটতলার বিশালাক্ষী মন্দির। প্রাচীন নথি অনুযায়ী, বর্ধমান রাজপরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৫০৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম দক্ষিণমুখী মন্দিরটির প্রতিষ্ঠা হয়। পরে সময়ের সঙ্গে সেটি ক্ষয়ে গেলে ১৯৭১ সালের তিনেই মার্চ পুনর্নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিচারপতি শংকরপ্রসাদ মিত্র।
পরবর্তীকালে জয়পুর থেকে আনা শ্বেতপাথর দিয়ে কুমোরটুলির শিল্পীরা নতুন মূর্তি খোদাই করেন। এই আধুনিক স্থাপত্য ও পুরোনো কাঠামোর মিশ্রণে বিশালাক্ষী মন্দির এখন চাঁইপাটের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রামবাসীদের দাবি চাঁইপাট হাটতলার এই দুটি বড় ঐতিহ্য বিশালাক্ষী মন্দির এবং বাদুড়বাগানের ইতিহাস, প্রকৃতি ও স্থাপত্য সবই সংরক্ষণের দাবি রাখে। ভগ্নপ্রায় প্রাচীন দেউল ও ধ্বংসাবশেষগুলির সংস্কারের দাবিও ক্রমশ জোরাল হচ্ছে। স্থানীয়দের মতে সংরক্ষণ ব্যবস্থা নেওয়া গেলে শুধু ঐতিহ্যই রক্ষা পাবে না, এলাকাটি ভবিষ্যতে পর্যটনের সম্ভাবনাও তৈরি করবে।
মিজানুর রহমান





