নিয়মিত চোখ পরীক্ষা:
চোখের সঠিক ভাবে যত্ন নেওয়ার প্রথম পদক্ষেপই হল নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা। সমস্ত বয়সের মানুষেরই বছরে অন্তত এক বার কোনও বিশেষজ্ঞ চক্ষু পরীক্ষকের কাছ থেকে তা করিয়ে নেওয়া উচিত। চোখে কোনও রিফ্র্যাক্টিভ এরর থাকলে তা পরীক্ষা করে নিতে হবে। আবার চোখের প্রেশার মাপতে টোনোমেট্রির সাহায্য নিতে হয়। এমনকী, স্লিট ল্যাম্পের তলায় পুরো চোখ এবং ফান্ডোস্কোপি ব্যবহার করে রেটিনা পরীক্ষা করা হয়। চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই সঠিক চিকিৎসা এবং ফলো-আপের বিষয়টা নির্ধারণ করবেন।
advertisement
ডায়াবেটিস অথবা হাইপারটেনশন:
বর্তমানে বিশ্বের মধ্যে ডায়াবেটিসের নিরিখে আমাদের দেশই সবথেকে বেশি এগিয়ে রয়েছে। আর এর জন্য দায়ী কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ ডায়েট এবং এক্সারসাইজের ঘাটতি। আসলে ডায়াবেটিস এবং হাইপারটেনশন হল লাইফস্টাইল জনিত রোগ। যা আমাদের চোখকে ক্ষতিগ্রস্ত তো করতেই পারে, এমনকী যদি নিয়মিত পরীক্ষা না-করানো হয়, তা-হলে দৃষ্টিশক্তি পর্যন্ত চলে যেতে পারে। তাই চোখ ভাল রাখতে ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং সতর্ক থাকা উচিত। সেই সঙ্গে রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখটাও জরুরি। আর এর জন্য এন্ডোক্রিনোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। এই অবস্থায় এই ধরনের রোগীদের আর্লি ক্যাটারাক্ট, রেটিনায় পরিবর্তনের ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই এ-সব পরীক্ষা করাতে হবে ছয় মাস অন্তর।
আরও পড়ুন- জীবন আমূল বদলে যেতে পারে এই সেপ্টেম্বরেই! শুক্রের গোচর কীভাবে কোন রাশিকে প্রভাবিত করবে?
এড়িয়ে চলতে হবে ধূমপান:
ধূমপানের মতো বদভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। কারণ বেশির ভাগ রোগের উৎস এই অভ্যেসটাই। যে-কোনও রকম তামাক নানা রোগের জন্য দায়ী। শুধু তা-ই নয়, চোখের নানা সমস্যার জন্যও ধূমপানের অভ্যেস দায়ী। এর মধ্যে অন্যতম - অপটিক নার্ভ ড্যামেজ, ক্যানসার এবং গ্লুকোমা। তাই চোখের সমস্যা দূর করতে ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
স্ক্রিন টাইম:
সাধারণত ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে বহু ক্ষণ ধরে কাজ করতে হয়। এ-ছাড়া মোবাইল কিংবা ট্যাবলেট তো আমাদের সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। আর মোবাইল, ল্যাপটপ এবং কম্পিউটারের স্ক্রিন থেকে নির্গত উজ্জ্বল আলো নির্গত হয়। একটানা স্ক্রিনের উজ্জ্বল আলোর দিকে তাকিয়ে থাকলে মাথা ব্যথা, অস্বস্তি এবং দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়ার মতো নানা সমস্যা দেখা দেয়। তার জন্য স্ক্রিনের দিকে সব সময় তাকিয়ে না-থেকে মাঝেমধ্যে ব্রেক নিতে হবে। ‘২০-২০-২০’ নিয়ম মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ ২০ মিনিট স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার পরে সেখান থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরে তাকাতে হবে। তাই চক্ষু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক ড্রপ ব্যবহার করতে থাকতে হবে। এ-ছাড়াও স্ক্রিনে কাজ করার সময় নীল ফিল্টার বিশিষ্ট চশমা ব্যবহার করা উচিৎ। অন্ধকার ঘরে মোবাইল, ল্যাপটপ ব্যবহার করা উচিত নয়। বিশেষ করে ঘুমোনোর আগে তো একেবারেই নয়!
শিশুদের জন্য:
আসলে বাচ্চারা চোখের সমস্যার উপসর্গ ঠিক মতো প্রকাশ করতে পারে না চক্ষু বিশেষজ্ঞদের কাছে। ফলে মা-বাবা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরই এই সব উপর্গের দিকে নজর দিতে হবে। অনেক সময় স্কুলের বোর্ড দেখতে কিংবা নোট নিতে সমস্যা হয় বাচ্চাদের। এমনটা হলে তাদের চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে হবে। যাতে তাঁরা প্রথম থেকেই সঠিক চিকিৎসা শুরু করতে পারেন। অভিভাবকদের মনে রাখতে হবে যে, সন্তানের রিফ্র্যাক্টিভ এরর সময়ে ঠিক করা না-হলে কিন্তু পরবর্তী সময়ে সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই স্কুলে-স্কুলে আই ক্যাম্পের আয়োজন করার পরামর্শও দিয়েছেন ডা. সত্যপ্রসাদ বালকি।
পরিশুদ্ধ দেহ, বিশুদ্ধ মন:
চোখের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সুস্থ জীবনযাপন এবং ব্যালেন্সড ডায়েটও। আসলে এই ধরনের অভ্যেসটাই আজকাল চলে যাচ্ছে। আর ডায়েটে সব কিছু পরিমাণ মতো রাখার পাশাপাশি যথেষ্ট পরিমাণে শারীরিক কসরতও করতে হবে। সেই সঙ্গে ডায়েটে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন যোগ করা বাঞ্ছনীয়। তবে চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন এ, সি এবং ই অপরিহার্য। তাই সবুজ শাকসবজি, গোটা ডিম, গাজর, সাইট্রাস ফল, পেঁপে, আঙুর, পালং শাক, কিউয়ি, জুকিনির মতো খাবার বেশি করে খেতে হবে।