তবে ঘর সেজে ওঠার বর্তমানে আলোর বেশিরভাগটাই কৃত্রিম। অর্থাৎ বৈদ্যুতিক আলো। যে কারণে এখন অনেকটাই চাহিদা কমেছে মাটির প্রদীপ অথবা মোমবাতির। কিন্তু প্রাচীনকাল থেকেই সবুজ দীপাবলি পালন করে আসছে জেলার জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। শুধু জঙ্গলমহল বললে ভুল হবে। জেলার বিভিন্ন গ্রামেগঞ্জে এই সবুজ দীপাবলি পালনের নিয়ম রয়েছে বহুদিন ধরে।
advertisement
আরও পড়ুন: ২০২৩ সালের সেরা ক্যামেরার পাঁচটি স্মার্টফোন! এই ফোন থাকলেই বাজিমাত! জানুন
কেমন সেই সবুজ দীপাবলি? এখন তো সারা বছর রাস্তাঘাটে আলো দেখা যায়। পুজোর সময় তো কথাই নেই। উজ্জ্বল আলোয় সেজে ওঠে পথঘাট। যখন বৈদ্যুতিক আলোর এত রমরমা ছিল না, যখন মানুষ এতটা আধুনিক হয়নি, তখনও দীপাবলি আলোয় সেজে উঠত। কচিকাঁচারা রাস্তায় বের হত। আর তাদের হাতে থাকত ঘরে তৈরি টর্চ। দীপাবলির অন্ধকার ভেদ করে ঠাকুর দেখতে যাওয়ার ভরসা ছিল নারকেলের মালা দিয়ে তৈরি এই টর্চ।
কিন্তু কিভাবে তৈরি হয় এই হোমমেড টর্চ? প্রসঙ্গত, বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে দুর্গা পুজোর সময় নারকেল নাড়ু করার নিয়ম প্রচলিত রয়েছে। সেই নারকেল নাড়ু তৈরি হয়ে গেলে পড়ে থাকে নারকেলের মালা। যা এই টর্চ তৈরির অন্যতম উপাদান। দু’ভাগে ভাঙা নারকোল মালার পেছন দিকে জুড়ে দেওয়া হয় ছোট একটি লাঠি। যা টর্চের হাতল হিসেবে কাজে লাগে। আর নারকেল মালার মধ্যে বসিয়ে দেওয়া হয় একটি মোমবাতি। তাহলেই তৈরি এই হোমমেড টর্চ।
আরও পড়ুন: আপেলের থেকেও উপকারী আতা! সব রোগের যম! ধরে রাখবে যৌবনও! জানুন
একটা সময় পথে পথে বৈদ্যুতিক আলো বা হাতে হাতে টর্চ ছিল না। ততটা প্রচলন ছিল না বললেই ভাল।। তখন ছোট ছোট শিশুরা কালী পুজোর দিন ঘুরতে যাওয়ার সময় ব্যবহার করত এই টর্চ। দীপান্বিতা অমাবস্যার অন্ধকার দূর করতে এই হোমমেড টর্চ ছিল তাদের হাতিয়ার। যদিও এখন পথে পথে প্রচুর আলো হয়েছে। এখন গ্রামেগঞ্জে আধুনিক আলোর ঝলক দেখতে পাওয়া যায়। ফলে একসময় কালীপুজোর দিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই হোমমেড টর্চের গুরুত্ব তলানিতে ঠেকেছে। তবে এখনও জঙ্গল মহলের বেশ কিছু এলাকায় কচিকাঁচাদের হাতে পুজোর আগে থেকে এই টর্চ দেখা যায়। যা টিমটিম করে বাঁচিয়ে রেখেছে ঐতিহ্যকে।
আর এই দীপাবলিতে মনে রাখতে হবে তা যেন প্রকৃতিকে নষ্ট করে না হয়! দীপাবলি মানেই অশুভ শক্তির দমন। আর সেই খুশিতেই ঘরে ঘরে আলো জ্বালিয়ে মানুষ উৎসবে মেতে ওঠেন! এই দীপাবলিতে আমাদের পরিবেশ রক্ষার দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। যেমন বাজি পোড়ানো উচিত নয়। বাজি থেকে যে টক্সিক মেটাল নির্গত হয় তা খুব খারাপ। ইতিমধ্যেই দিল্লির মতো বহু জায়গায় দূষণের মাত্রা অতিরিক্ত হয়ে গিয়েছে। তাই আমরা বেছে নেব ইকো ফ্রেন্ডলি দীপাবলি!
বাজির বদলে আমরা নানা রকম প্রদীপ ও আলো জ্বালাবো। আমরা পুরোনো দিনের মতো করে প্রাকৃতিক আলোতে বা প্রদীপে ভরসা রাখবো। নানা রঙের ফুল দিয়ে ঘর সাজাবো। এমনকি হলুদ, চালের গুঁড়ো দিয়ে বাড়িতে আলপনা আঁকবো। আর এই দীপাবলিতে আমরা সবাই এক সঙ্গে থাকবো। আমরা এই সময় চেষ্টা করবো প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি থালা বাটি এসব ব্যবহার করার। দীপাবলি শেষ হলে যাতে সেসব আমরা নষ্ট করে ফেলতে পারি। মোট কথা দীপাবলি হোক আলোর উৎসব তবে দূষণ মুক্ত স্বচ্ছ দীপাবলি!
নয়ন ঘোষ