স্বল্প দিনের মধ্যে অল্প খরচে বেশি ফলন পেতে গেলে কৃষকরা নির্ভর করছেন রাসায়নিক সার কীটনাশক এবং হাইব্রিড বীজের ওপর। তবে এতে যেমন জমির উর্বরতা শক্তি সহ পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে তেমনই রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ আর তার ফলেই আবারও পুরনো দিনের দেশীয় বিজে সম্পূর্ণ জৈব সার ব্যবহার করে দেশীয় পদ্ধতিতে চাষ শুরু হয়েছে ধীরে ধীরে।
advertisement
একসময় পাঁচ হাজার প্রজাতির ধান থাকলেও তার মধ্যে বর্তমানে তিন হাজার প্রজাতির ধানের কোন অস্তিত্ব আর নেই। এখন হাতেগোনা কয়েকটি প্রজাতি ছাড়া সেই অর্থে বাকি প্রজাতিরও চালের দেখা মেলে না। তবে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু চাল অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছে বাংলার মাটিতে। যেমন জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার কালোনুনিয়া, মালশিরা, উত্তর দিনাজপুরের তুলাইপাঞ্জি ও কাটারিভোগ। ঠিক তেমনই নদিয়া জেলায় বর্তমানে স্বীকৃতি লাভ করেছে রাধাতিলক চাল!
আরও পড়ুন : ঠিক ৪ টে কিশমিশে এটা মিশিয়ে খান দিনের এই সময়ে! অ্যানিমিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য হবে পগারপার!
রাধাতিলক নামের সুগন্ধি এই চাল সর্বভারতীয় স্বীকৃতি পেল বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। একসময় নদিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় এই চাল অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। বিশেষ করে বৈষ্ণবদের কাছে। যে কারণে এই চালের এমন নামকরণ বলে মনে করছেন কৃষি গবেষকরা। ২০১১ সালে এই ধান নিয়ে গবেষণা শুরু করা হয়েছিল বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। অবশেষে ২০২৪ সালে এসে স্বীকৃতি পেল সেই ধান! বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাধাতিলক নামের এই সুগন্ধি ধান গবেষণা প্রকল্পে স্থান করে নিয়েছে।
এ বিষয়ে কৃষি গবেষক এবং জৈব চাষে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক থেকে পুরস্কার প্রাপ্ত শৈলেন চণ্ডী জানান, ২০১১ সালে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম এই বীজ দেওয়া হয় সত্তর জন কৃষককে। এটি মূলত নদিয়া জেলার একটি দেশীয় বীজ। ২০১১ সালে ১০ বিঘা জমির বীজ পাওয়ার পর সেটি নিয়ে কাজ করা শুরু হয়। বর্তমানে বহু কৃষক এই বীজ বপন করে চাষাবাদ করছেন। ২০১৫ সাল থেকে এই চাষের গতি বাড়তে শুরু করে অতি দ্রুত।
তিনি আরও জানান, এই চাষাবাদের মেয়াদ মূলত ১৩৮ দিনের। বর্ষাকালেই আমন ধানের মরশুমে খারিফ শস্য হিসাবে অর্থাৎ শ্রাবণ মাসে এই ধান চাষ করা হয়ে থাকে। ফসল ওঠে অগ্রহয়ণ মাসে। প্রতি বিঘেতে ১৩ থেকে ১৪ মন ফলন হয়। অন্যদিকে হাইব্রিড ধানের বিভিন্ন ফলন হিসেবে পাওয়া যায় ১৭ মন। সেক্ষেত্রে লাভ থাকলেও স্বাদেগন্ধে পুষ্টিতে ভরপুর নীরোগ থাকার পরিবেশবান্ধব এই চালের দাম বেশি পেয়ে থাকেন কৃষকরা। তাই গড়পড়তায় প্রায় একই পড়ে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে বিষযুক্ত ক্ষতিকারক বিভিন্ন হাইব্রিড ধানের চাল খেয়ে অসুস্থ হওয়ার থেকে কিছুটা দাম বেশি দিয়ে দেশী চাল খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। শান্তিপুরে এইরকমই এক বিষমুক্ত খাদ্য বাজার ক্রমশই জনপ্রিয়তা লাভ করছে আশেপাশের ফুলিয়া এবং বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠছে এ ধরনের বিশেষ বাজার।
রাধাতিলক মূলত গোবিন্দভোগেরই আরও একটি প্রজাতি। খেতেও গোবিন্দভোগ চালের মতোই। এই চাল এখন জেলা ছাড়িয়ে কলকাতা শহরতলিতে প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে। বি সি কেভি থেকে পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ৮০ টাকা প্রতি কেজি হিসেবে ইউনিভার্সিটির সরকারি স্বীকৃতি পাওয়ার স্টল থেকে বিক্রি করা হচ্ছে এই রাধাতিলক চাল।
কোনও কৃষক যদি এই চালের চাষাবাদ করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরাই বীজ সংগ্রহের ব্যবস্থা করে দেবেন। এমনকি চাষাবাদের প্রশিক্ষণও তাঁরাই দিয়ে থাকেন। এছাড়াও চাষাবাদের পরে এই চাল কীভাবে মার্কেটিং করা হবে, সেটাও তাঁরাই বুঝিয়ে দেবেন কৃষকদের। জানা যায় ২০১৯ সালে এই রাধাতিলক চাল নিয়ে ভারত সরকারের কাছে ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পান এই চাল-গবেষক ও কৃষি বিশেষজ্ঞ শৈলেন চণ্ডী । তিনি বলেন, সুস্থ থাকতে বিষমুক্ত রাধাতিলক চালের ফেনাভাত খাওয়াও ভাল।