আরও পড়ুন : ভাঁজেই কামাল, পয়লা বৈশাখের শাড়িতে লাগুক নতুনত্বের ছোঁয়া!
শ্লোকের বর্ণনায় গিয়ে কাজ নেই, আমাদের চোখ টানছে ওই প্রসাদের থালা। মিষ্টি বলতে মতিচুর আছে, জিলিপি আছে, গজা আছে, বাঙালির সাধের সন্দেশ বাদ না পড়লেও কোণঠাসা তো বটেই! পয়লা বৈশাখে মিষ্টির থালা সাজাতে গিয়ে যদি ইতিহাসের দিকে তাকাতে হয়, তাহলে এই তালিকা গুরুত্বপূর্ণ। কেন না, সন্দেশের সঙ্গে বাঙালির ভাব হয়েছে অনেক পরে। ঘটনার তিরিশ বছরেরও পরে ছবিটা খুব একটা বদলায়নি। ১৮৬৮ সালে জন্ম নিয়েছেন স্বামী বিবেকানন্দের ভাই মহেন্দ্রনাথ দত্ত, তাঁর স্মৃতিকথাতেও সোজাসাপটা বয়ান- সন্দেশ তখনও জাতে ওঠেনি, অনেকটা ছিল চিনির মন্ডার মতো!
advertisement
আরও এগিয়ে গেলে দেখা যাবে, যে ছানার মিষ্টি নিয়ে বাঙালির এত গৌরব, তা একসময়ে দেবতার পুজোয় (Poila Boishakh 2022) ব্রাত্য ছিল। দুধ কাটিয়ে ছানা তৈরি হয়- এই বিকৃতির দোষে। বিকৃত জিনিস তো আর ঠাকুরকে দেওয়া যায় না। তবে আজ যাঁকে আমরা ভগবানের অবতার বলেই মানি, সেই শ্রীচৈতন্য কিন্তু সন্দেশ পেলে বড় খুশি হতেন। সন্দেশ বলছি বটে, যদিও সেই সময়ে তার পাক আজকের মতো এত মিহি ছিল না, স্বাদে বৈচিত্র্যও ছিল না, সে ছিল কেবল চিনি আর ছানার মিশেল!
আরও পড়ুন : ঝোলে-ঝালে-অম্বলে খাঁটি বাঙালিয়ানায় হোক বর্ষবরণ, তৃপ্তির পাতে থাকুক পান্তা-ইলিশ!
তবে, সময় তো বদলিয়েছে! গঙ্গার জল যত গড়িয়েছে, ততই বাংলার ময়রাদের হাত থালায় গড়িয়ে গড়িয়ে ছানাকে বদলেছে কখনও গোল্লায়, কখনও ছাঁচের বা চ্যাপ্টা সন্দেশে, কখনও বা নিয়েছে ভেজে- তৈরি হয়েছে বাঙালির অনুপম মিষ্টান্নকোষ। এবারের পয়লা বৈশাখে মিষ্টির পাত জুড়ে থাক তারই পাঁচ সাবেকি রত্ন।
স্বাদের রসাভাস
জয়গোপাল না কি ছাত্রের শ্লোকরচনায় ক্ষুব্ধ হয়ে প্রশ্ন করেছিলেন- এতে রস কোথায়? শ্লোকে তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন সরসতার অভাব। এই রসের বিতর্ক ধারাবাহিকতায় নেমে এসেছে বাঙালির অতি সাধের মিষ্টির হাঁড়িতেও, রসগোল্লার উদ্ভাবনের সূত্রে (Poila Boishakh 2022)। সে বাংলার না ওড়িশার, ওই কূটকচালি পয়লা বৈশাখে ভুলে গিয়ে পাতে বরং তুলে দেওয়া যাক একটা রসগোল্লা, এখন আর ছানাও শুভ অনুষ্ঠানে ব্রাত্য নয়, তাছাড়া এই মিষ্টি না হলে বাঙালির চলেও না!
লাল-সাদার স্বাদবাহার
একটা মিষ্টি তো আর পাতে দেওয়া যায় না! তাই এবার আরেকটার পালা, বাঙালির নববর্ষের লাল-সাদা সাজের অনুষঙ্গে এবার বেছে নেওয়া যাক ভাজা মিষ্টি। ১৮৫৩-তে ভীম নাগের হাতের এই মিষ্টি খেয়ে যে ভাবে হাত খুলে প্রশংসা করেছিলেন লেডি ক্যানিং, তাঁর নামাঙ্কিত লেডিকেনি পাতে পড়লে অতিথিরাও তা-ই করবেন!
ভোগে-উপভোগে
১৯০৫-এ বর্ধমানে এসে যে মিষ্টি খেয়ে তৃপ্ত হয়েছিল লর্ড কার্জন, ভৈরব নাগের হাতে প্রথম তৈরি সেই সীতাভোগ আর মিহিদানা আজ অনেক দোকানেই সুলভ- যে কোনও একটা পছন্দমতো এবার মিষ্টির থালার একপাশে সাজিয়ে ফেলা যাক?
কড়াপাকের কড়চা
ভদ্রেশ্বরের তেলেনিপাড়ার বন্দ্যোপাধ্যায়দের জামাই ঠকাতে ১৮১৮ সালে সূর্য মোদক বানিয়েছিলেন জলভরা, তবে কড়াপাকের যে কোনও সন্দেশই বাঙালির মধুর সৃজনশীলতার প্রকাশ- তার একটা থালায় না রাখলেই নয়!
দধিকর্মা
বাঙালির মিষ্টির থালায় হিমশীতল দই থাকবে না? তাও এই ঘোর গরমের বছরকার দিনে? উঁহু, সাদা নয়, বছরের প্রথম দিনটা মধুর করতে ১৯৩০ সালে নবদ্বীপের কালী ঘোষের হাতে দুধ বার বার জ্বাল দিয়ে যা তৈরি হত, সেই ঘন লাল মিষ্টি দই পাতে পড়ুক- এটাও এখন সব দোকানেই সুলভ!
আর কী; নতুন বছর মধুর হোক!