প্রসঙ্গত বিহারের মিথিলা প্রদেশের শাড়ি মধুবনী ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্প৷ সূক্ষ্ম ফ্লোরাল মোটিফ এবং জ্যামিতিক নকশা মধুবনী শিল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য৷ উজ্জ্বল রং, সূক্ষ্ম রেখায় ধরা পড়ে প্রকৃতি ও পৌরাণিক বিষয়৷ ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেট পেশের সময় নির্মলা যে শাড়ি পরেছিলেন, সেটা কার্যত মধুবনী শিল্প তথা পদ্ম পুরস্কারজয়ী শিল্পী দুলারিদেবীর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য৷ মধুবনী শিল্পে দুলারিদেবীর দক্ষতা অসামান্য৷ ২০২১ সালে তিনি সম্মানিত হন পদ্মশ্রী সম্মানে৷ মিথিলা আর্ট ইনস্টিটিউটে দুলারিদেবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী৷ মধুবনী শিল্প নিয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়৷ সে সময়ই এই শাড়িটি দুলারিদেবী উপহার দেন নির্মলা সীতারামনকে৷
advertisement
নির্মলা সীতারামণ ও মধুবনী শিল্পী দুলারিদেবী
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের হ্যান্ডলুম শাড়িপ্রীতির কথা বহুচর্চিত৷ বছরভর তো বটেই৷ বিশেষ করে বাজেট পেশ করার দিন তিনি সাধারণত বেছে নেন বিশেষ কোনও হ্যান্ডলুম শাড়ি৷ দেশের কোনও প্রান্তের বয়নশিল্পীদের হাতে বোনা শাড়ি তিনি পরেন বাজেট পেশের দিন৷ ২০১৯ সালে তাঁর জীবনে প্রথম বাজেট পেশ করার দিন তিনি পরেছিলেন গোলাপি রঙের শাড়িতে সরু জরির পাড় মঙ্গলগিরি৷
তার পরের বছর ২০২০ সালে অর্থমন্ত্রীর পরনে ছিল উজ্জ্বল হলুদ রঙের সিল্ক৷ সঙ্গে হাল্কা আকাশি রঙা সরু পাড়৷
২০২১-এ তিনি পরেছিলেন লাল-সাদা পচমপল্লী শাড়ি৷ হায়দরাবাদের পচমপল্লী গ্রামের নামেই নামকরণ এই হ্যান্ডলুম শাড়ির৷ ঐতিহ্যবাহী সেই দক্ষিণী শাড়িতে ছিল ইক্কত মোটিফ৷
এক বছর পর ২০২২-এ নির্মলা বাজেট পেশ করার সময় পরেছিলেন খয়েরি রঙা বোমকাই শাড়ি৷ ওড়িশার এই হ্যান্ডলুম শাড়ি জুড়ে ছিল খয়েরি ও লাল সুতোর কাজ৷
২০২৩ সালে নির্মলা বেছে নিয়েছিলেন উজ্জ্বল লাল ও কালোর যুগলবন্দিতে হ্যান্ডলুম শাড়ি৷ লাল জমিনের সঙ্গে চওড়া কালো টেম্পল পাড়, অর্থাৎ যে ধরনের পাড়ে থাকে মন্দিরের চূড়ার মোটিফ৷ শাড়ির পাড়ে ছিল জরির ছোয়াঁও৷ এছাড়াও শাড়িতে ছড়িয়ে ছিল সূক্ষ্ম কসুটি কাজ৷
গত বছর অর্থাৎ ২০২৪-এর ফেব্রুয়ারি মাসে অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট পেশ করার সময় নির্মলা সীতারমণ পরেছিলেন বাংলার একান্ত আপন কাঁথা স্টিচের শাড়ি৷ ঘন নীল শাড়ি জুড়ে ছিল সাদা সুতোর ঘন বুনোট কাঁথাকাজ৷ ভাগলপুরী তসর সিল্কের উপরই করা হয়েছিল নক্সীকাঁথার কাজ।
এর পর ২০২৪-এই নির্বাচনোত্তর কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করার নির্মলা পরেছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের মঙ্গলগিরি শাড়ি৷ সাদা এবং ম্যাজেন্টা (বেগুনি রঙের এক ধরন) কম্বিনেশনে বোনা শাড়ির জমিন জুড়ে ছিল জরির চৌখুপ্পি ডুরে বা চেক৷ শাড়ির পাড়ে ছিল জরির হাল্কা সূক্ষ্ম কাজ৷ প্রসঙ্গত অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়া থেকে ১২ কিমি দূরে মঙ্গলগিরি প্রাচীন তীর্থস্থান৷ এই তীর্থস্থান ঘিরেই গড়ে ওঠে বয়নকেন্দ্র৷ স্থানীয় শিল্পীদের বোনা শাড়ির নাম মুখে মুখে হয়ে যায় ওই স্থান অর্থাৎ মঙ্গলগিরির নামে৷
আরও পড়ুন : বাজেটে বড়সড় স্বস্তি দেওয়া হল বেতনভোগী কর্মচারীদের! ১২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কোনও ট্যাক্স দিতে হবে না
মূলত সুতিতে বোনা এই শাড়ি সিল্কেরও হয়৷ সাধারণত মৃদু রঙের জমিন ও গাঢ় রঙের পাড় এই শাড়ির বৈশিষ্ট্য৷ শাড়ির আঁচল ও পাড়ে থাকে জরির কাজ৷ শাড়ির জমিনে থাকে ছোট ছোট চেক৷ মূলত আদিবাসী শিল্পের মোটিফ থেকে অনুপ্রাণিত হয় মঙ্গলগিরি শাড়ির জরির কাজ৷
প্রতি বছরের মতো এ বারও নির্মলা সীতারামন বাজেট পেশের দিন ভারতীয় সংস্কৃতির উজ্জ্বল বার্তা তুলে ধরলেন৷