প্রথমেই আসা যাক অস্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাসে। প্রতিদিন চিপস, ফাস্ট ফুড, ইনস্ট্যান্ট নুডলস বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস ধীরে ধীরে লিভারে চর্বি জমাতে শুরু করে। ডা. অনুভব হরিশ খান্ডেলওয়ালের মতে, এইসব খাবার দীর্ঘমেয়াদে ওজন বাড়ায়, ডায়াবেটিস ডাকে এবং লিভারের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
আরও পড়ুন: এই ভয়ঙ্কর গরমে বাইরে থেকে এসেই ঢকঢকিয়ে গলায় ঠান্ডা জল ঢালছেন! সাবধান, এখনই সতর্ক না হলে ভয়ঙ্কর বিপদ…
advertisement
দ্বিতীয়ত, অতিরিক্ত বসে থাকা জীবনধারাও একটি বড় সমস্যা। ল্যাপটপ বা টিভি স্ক্রিনের সামনে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা আমাদের শরীরের পক্ষে মারাত্মক। পর্যাপ্ত শরীরচর্চা না হলে শরীরে ফ্যাট জমে, যা ধীরে ধীরে ‘ফ্যাটি লিভার’ এবং পরে লিভার ক্যানসারে রূপ নেয়।
তৃতীয়ত, অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনও লিভার ক্যানসারের একটি প্রধান কারণ। সাপ্তাহিক বা নিয়মিত অ্যালকোহল সেবনের প্রভাব আমরা অনেক সময়েই হালকাভাবে নিই। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, “বিশ্বব্যাপী প্রতি ২০ জন ক্যানসার আক্রান্তের মধ্যে ১ জনের কারণই অ্যালকোহল,” যা লিভার ক্যানসারের অন্যতম বড় কারণ।
আরও পড়ুন: হাসলেই সামনে চলে আসে হলুদ দাঁত, লজ্জায় মুখ দেখাতে পারেন না! বিনা খরচায় ঘরোয়া টিপসেই পান মুক্তি…
শহরাঞ্চলে বর্তমানে ফ্যাটি লিভার রোগ দ্রুত বাড়ছে। ডা. খান্ডেলওয়াল জানান, “আগে ফ্যাটি লিভার জনিত ক্যানসার কেবল উচ্চবিত্তদের মধ্যেই দেখা যেত, কিন্তু এখন তা সব শ্রেণির মানুষকেই আক্রান্ত করছে।” অন্যদিকে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। AIG হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল রেডিওলজিস্ট ডা. জিগনেশ রেড্ডির মতে, “অনেক প্রবীণ ব্যক্তির মধ্যেও এই রোগ দেখা যাচ্ছে, এমনকি যাদের আগে লিভার রোগের ইতিহাস ছিল না তাদের মধ্যেও।”
লিভার ক্যানসারের প্রথম দিকে উপসর্গ কম থাকে। তবে ক্লান্তি, ওজন কমে যাওয়া, পেটে অস্বস্তি, চোখ বা ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে অস্ত্রোপচার বা লিভার ট্রান্সপ্লান্ট খুবই কার্যকর, বলছেন ডা. রেড্ডি। কিন্তু বেশিরভাগ রোগী দেরিতে হাসপাতালে আসেন, তখন সার্জারি অনেক সময়ই আর সম্ভব হয় না।
যেসব রোগীর অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়, তাদের জন্য ট্রান্সআর্টেরিয়াল কেমোএম্বোলাইজেশন (TACE) একটি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে কেমোথেরাপির ওষুধ সরাসরি টিউমারে পৌঁছে দেওয়া হয়। নতুন প্রযুক্তি হিসেবে বেলুন-সহায়িত TACE চিকিৎসাও এখন ব্যবহৃত হচ্ছে, যা ওষুধ আরও কার্যকরভাবে টিউমারে পৌঁছে দেয় এবং সুস্থ লিভারকে রক্ষা করে।
চিকিৎসকদের মতে, প্রতিরোধই সবচেয়ে বড় সুরক্ষা। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, অ্যালকোহল এড়ানো এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সচেতন থাকা লিভার ক্যানসার ঠেকানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়। বিশেষ করে যাঁরা ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেশার বা স্থূলতার সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের নিয়মিত লিভার ফাংশন টেস্ট, লিপিড প্রোফাইল ও আল্ট্রাসাউন্ড করানো উচিত।
আজকের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা ঠিক করলেই ভবিষ্যতের লিভার সুস্থ রাখা সম্ভব। তাই সময় থাকতে সচেতন হোন, নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখুন লিভার ক্যানসারের মতো নীরব ঘাতক থেকে।
Disclaimer: এই খবরের মধ্যে দেওয়া ওষুধ/স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রাপ্ত। এটি সাধারণ তথ্য এবং ব্যক্তিগত পরামর্শ নয়। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনও কিছু ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। নিউজ18 বাংলা কোনও ব্যবহারে ক্ষতির জন্য দায়ী থাকবে না।