একসময়ের জমিদারি, হাওড়া জেলার জগৎবল্লভপুর ব্লকের অন্তর্গত রামপুরের চ্যাটার্জী পরিবার। জমিদারি হারালেও পরিবারের নাম ডাক ও ঐতিহ্যয় বিন্দুমাত্র ছেদ পড়েনি। তা লক্ষ করা যায়, এই সাবেক পরিবারের এই পুজোয়। বাংলার ঐতিহ্য বজায় রেখে বিশাল বাড়ির একদিকে রয়েছে মা কালীর মন্দির, চতুর্দিক ঘেরা উঠানের ধানের গোলা। চ্যাটার্জি বাড়িতে প্রবেশ করতে প্রথমে পার হতে হবে সিংহদুয়ার। দুয়ারে প্রবেশ করলেই ঠাকুরদালান, ঠাকুরদালানের ডান পাশে মূল বাড়ির প্রবেশপথ।জমিদারি হারালেও, আজও চ্যাটার্জি বাড়িতে প্রবেশ করলে চোখের সামনে একটি জীবন্ত বাংলার জমিদারি বাড়ির ছবি।
advertisement
পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩০০ বছর আগে চ্যাটার্জি বাড়িতে ঘট পুজোর মাধ্যমে জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা হয়। তার এক শতাব্দীর পর পরিবারের সদস্য দেবেন্দ্র নাথ গোস্বামী চ্যাটার্জির সময়ে মূর্তি পুজোর প্রতিষ্ঠা বা চল শুরু করেন চ্যাটার্জি বাড়িতে। ১৯২ বছর আগে প্রথম দেবীর মূর্তি পুজোর সূচনা হয়। জন্মাষ্টমীর পর প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয় চ্যাটার্জি বাড়ির ঠাকুরদালানে। সেই থেকেই পরিবার সদস্যদের মনে পুজোর রঙ লাগে। পুরনো নিয়ম-রীতি মেনে নবমীর দিন সকালে দেবীঘট স্নানের মাধ্যমে পুজো শুরু। পুজো চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সপ্তমী অষ্টমী এবং নবমীর পুজো এবং কুমারী পুজো অনুষ্ঠিত হয় এক দিনেই, এরপর দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন।
বর্তমানে চ্যাটার্জি বাড়ির সদস্য সংখ্যা ৫৭ জন। আইনজীবীবাড়ি, বা উকিলবাড়ি নামে এলাকায় সুপরিচিত এই চ্যাটার্জি বাড়ি। বর্তমান দুই পুরুষের অধিকাংশ জন আইনজীবীর পেশায় যুক্ত। দুর্গা পুজো বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব হলেও সারা বছরে, সব থেকে বড় কর্মবিরতি বলতে বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজো। পুজোর দু’এক দিন আগে থেকে আত্মীয়স্বজন এসে হাজির হন বাড়তে। ঠাকুরদালান সাজানো থেকে পুজোর সামগ্রী যোগান দিতে দিন কয়েক আগে থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন বাড়ির পুরুষেরা। অন্যদিকে পুজোর নৈবেদ্য সাজান থেকে ভোগ তৈরিতে হাত লাগান বাড়ির বউ ও মেয়েরা।
পুজোর দিন কয়েক আগে থেকেই চ্যাটার্জি বাড়িতে হই-হই উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে সকলে। জমিদার আমলের নিয়ম মেনে পুজোর আগে গ্রামবাসীকে আমন্ত্রণ জানান হয়। সেই সঙ্গে আত্মীয়-স্বজন মিলে রামপুর চ্যাটার্জী বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজোর নবমীতে কয়েক হাজার মানুষের খাবার আয়োজন হয়।
এ প্রসঙ্গে পরিবার সদস্য তন্ময় চ্যাটার্জি জানান, ‘‘দুর্গাপুজো বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। সমস্ত বাঙালির মতই, এই পরিবারের সদস্যরা দুর্গাপুজোর উৎসবে শামিল হয়। তবে পরিবার সদস্যের কাছে অতি আগ্রহ এবং আনন্দের পরিবারের জগদ্ধাত্রী পুজো। পুজোর দিন পরিবার আত্মীয়-স্বজন সকলে এক হওয়া, পুজোয় মেতে ওঠা, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া।পুজো শেষ হলেই মনখারাপ, তার পর আবার দিন গোনা শুরু হয় আগামী পুজোর জন্য।’’