হুগলির ভদ্রেশ্বরের বাসিন্দা তমা দত্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা স্নাতকোত্তরের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরতে হয়েছে তাঁকে অনেক ছোট বয়স থেকেই। বাড়ির একমাত্র রোজগেরে তমা সংসারের হাল সামলাতে শুরু করেন টোটো চালানো। বাড়িতে রয়েছেন তাঁর বৃদ্ধ মা বাবা ও দুই ভাই বোন যাঁরা পড়ছে এখন স্কুলে। তমার উপরে ভরসা করেই বেঁচে রয়েছে তাঁর পরিবার।
advertisement
প্রতিদিন সকালে ইউনিভার্সিটি থেকে ক্লাস করে বাড়ি ফিরেই শুরু হয় তাঁর অন্য লড়াই। ক্লাস করে বাড়ি ফিরেই গলায় ঝোলানো ছোট্ট ব্যাগ, হাতে চাবির থোকা নিয়ে টোটো মুছে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে শুরু হয় যাত্রী বহন করার পালা। রাত আটটা থেকে বারোটা সাড়ে বারোটা-শেষ ট্রেনের যাত্রীদেরও সঙ্গী থাকেন তমা। কোনও দিন ৩০০ টাকা, আবার কোনও দিন ৪০০ টাকা, খুব কপাল ভাল থাকলে ৫০০ টাকাও উপার্জন হয় কোনও কোনও দিন। একদিন একটু বেশি আয় হলে পরের দিন একটু বেশি পড়াশোনা করার সুযোগ মেলে। ভদ্রেশ্বর স্টেশন থেকে যাত্রীদের নিয়ে টোটো করে তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন তমা।
আরও পড়ুন : ব্লাড সুগারে কি বেলপানা খাওয়া যায়? উপকারী বেল খেলেও বাড়ে ডায়াবেটিস? জানুন
জীবনের কঠিন লড়াই কীভাবে চালিয়ে আসছেন, তমা সে বিষয়ে বলতে গিয়ে জানাযন, ক্লাস টুয়েলভ থেকে শুরু হয়েছে তাঁর টোটো চালানো। টোটো চালিয়েও কখনও বন্ধ করেননি তাঁর পড়াশোনা। শ্রীরামপুর কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স পাস করে এখন ভর্তি হয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরের জন্য। বাড়ির বৃদ্ধ মা-বাবার সংসার চালানো থেকে ভাই-বোনদের পড়াশোনা-সবকিছুরই দায়িত্ব রয়েছে তমার কাঁধে। ইচ্ছে না থাকলেও তাকে প্রতিদিন টোটো নিয়ে বেরতে হবেই। কারণ তাঁর গাড়ির চাকা না ঘুরলে সংসারের ভাত রান্না হবে না।
এ বিষয়ে তমার মা ও বাবা জানান, তাঁদের মেয়ে যদি না থাকত তাহলে হয়তো আজ তাদের পথে বসে থাকতে হত। মেয়ের উপর ভরসা করে চলে তাঁদের সংসার। বাড়ি ভাড়া দেওয়া থেকে ভাই বোনের পড়াশোনা-সবকিছুর দায়িত্বই তার মেয়ের কাঁধে।
সহস্র প্রতিকূলতার মধ্যেও তমা বন্ধ করেননি তাঁর পড়াশোনা। দিনে কলেজ করে রাতের বেলা টোটো চালিয়ে ধরে রেখেছেন সংসারের হাল।আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সহস্র কুর্নিশ তমার মতো সংগ্রামীকে।