তবু ক্যালেন্ডারের নিয়ম মেনে দিন কয়েকের জন্য আসে প্রতীক্ষার শীতকাল। সূর্যের আলোর হাত-পা সেঁকে নিয়ে শীতের উষ্ণতা উপভোগ করার সময় আসতে না আসতেই ফুরিয়ে যায়। তবু যে ক’টা দিন সে থাকে পাশে বাঙালি মেতে থাকে বনভোজনে। ঘোরাঘুরি আর দেদার পেট পুজো। শীতে বিপাক ক্রিয়া খানিকটা বৃদ্ধি পায়, ফলে ডায়েটে একটু এদিক ওদিক হলেও সমস্যা কম হয়। ভাজাভুজি খাবারও সহজে হজম হয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই।
advertisement
আরও পড়ুন: শীতের সাজে লালের ছোঁয়া, শাড়িতে কাঁপাচ্ছেন তাবড় বলি নায়িকারা, আর আপনি? দেখে নিন
কিন্তু এই শীত অনেককেই কাবু করে ফেলে। সামান্য কিছু দিনের জন্য এসেও রোগের চাদর যেন বিছিয়ে দিয়ে যায় সে। সাধারণ ফ্লু, সর্দি-কাশি জাঁকিয়ে বসে। একটু বয়স্ক বা দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাঁদের তাঁদের ফুসফুসে খানিকটা সমস্যা তৈরি করে। শ্বাসকষ্টকে আরও মারাত্মক করে তুলতে পারে ক্রমবর্ধমান দূষণ।
এই সব সমস্যা থেকে খানিকটা রেহাই দিতে পারে প্রকৃতিই। বেশ কিছু ভেষজ নিরাময়ের পাশাপাশি নিয়মিত সুস্থতাও দিতে পারে। প্রাচীন কাল থেকেই ভারতবর্ষ ভেষজ ও ওষধির জন্য সারা বিশ্বে সমাদৃত। শীত কালে বেশ কিছু ভেষজ কীভাবে কাজে আসতে পারে, দেখে নেওয়া যাক এক ঝলকে।
তুলসি
তুলসি পাতা ও গাছ ভারতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মীয় ভাবেও একে পবিত্র মনে করা হয়। আসলে ভেষজ হিসাবে এটির ব্যাপক উপকারিতা রয়েছে। এটি শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে, শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করে। হজমের শক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়ক। মন ও শরীরকে শান্ত করতে পারে বলে বিশ্বাস করা হয়। তুলসী গাছের পাতায় উদ্বায়ী তেল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ভাইরাস সংক্রমণ এবং অ্যালার্জির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। নিয়মিত চায়ের সঙ্গে তুলসির রস পান করা যেতে পারে। পাতা শুকিয়ে নিয়ে দৈনন্দিন খাদ্যে মশলা হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এমনকী দু’একটি পাতা ভাল করে ধুয়ে কাঁচা চিবিয়েও খাওয়া যেতে পারে।
যষ্ঠীমধু
গলা ব্যথা, খুসখুসে কাশি থেকে মুক্তি পেতে যষ্ঠীমধু দারুন কার্যকরী। এই ভেষজ পদার্থটি হাঁপানি এবং শ্বাসযন্ত্রের রোগের চিকিৎসায় সাহায্য করে। শীতকালীন রোগের বিরুদ্ধ লড়ার শক্তি জোগায়। পাশাপাশি হজম শক্তির উন্নতিও করে ত্বকের নানা সমস্যা নিরাময়ের ক্ষমতাও রয়েছে কারণ এতে রয়েছে প্রদাহরোধী বৈশিষ্ট্য। এটি মূলত একটি গাছের শিকড়, বাজারে গুঁড়ো হিসেবে পাওয়া যায়। মধু এবং ঘি দিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
পুদিনাপাতা
পুদিনাও একটি ভেষজ। তবে এটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সুস্বাদু চাটনি তৈরি করতে এবং গার্নিশিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। পুদিনা পাতার চাও পান করা যায়। এটি বদহজম থেকে মুক্তি দেয়। তবে পুদিনাকে শীতল ভেষজ বলে মনে করা হয় তাই শীতকালে কম ব্যবহার করাই ভাল। যদিও এতে রয়েছে ভিটামিন এ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা সর্দি কাশির কারণে সৃষ্ট মাথাব্যথা নিরাময়ে ও হাঁপানিতে ভাল কাজ করে।
আরও পড়ুন: শীতে রোজ একটি করে ডিম, এই সুপারফুড মুক্তি দেবে অনেক কঠিন রোগ থেকে! জানুন তালিকা
পার্সলে
এটি স্যালাড হিসেবে বা খাদ্যবস্তু সাজানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। পার্সলে পাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ই, সি এবং আয়রন রয়েছে। এটি ডিটক্স করতে সাহায্য করে। এতে প্রদাহ-রোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ক্লান্তি দূর করতেও দারুন কার্যকরী এই পাতা। শীতকালে পার্সলে পাতার সেবনে সাধারণ সর্দি এবং ফ্লু মুক্তি মিলতে পারে। স্যালাড ছাড়াও চায়ের মতো ফুটিয়ে পান করা যেতে পারে। দু’একটি তাজা পার্সলে পাতা গরম জলে দিয়ে ৫-৭ মিনিট রেখে দিতে হবে। সারা দিনে দু’তিনবার এটি পান করা যেতে পারে।
লেমন থাইম
এটি শক্তিশালী টনিক এবং অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। ব্যতিক্রমী এই ভেষজটি বুক এবং গলার সংক্রমণের চিকিৎসায় জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এক কাপ গরম জলে লেমন থাইমের একটি ডাল দিয়ে খানিক ক্ষণ চাপা দিয়ে রাখতে হবে। তাতে এই ভেষজের উপকারিতা ওই জলে মিশে যাবে। পরে ছেঁকে নিয়ে নিয়ে দিনে ২-৩ বার পান করা যেতে পারে। চাইলে মধুও মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
ক্যালেন্ডুলা
এই ভেষজ উদ্ভিদের ফুল অ্যান্টিভাইরাল। যে কোনও সংক্রমণে কাজ করে। পাচনতন্ত্র, লিভার এবং গল ব্লাডারকে ডিটক্স করে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে। ২ চা চামচ ক্যালেন্ডুলার পাপড়ি ৭৫০ মিলি ফুটানো জলে মিশিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিতে হবে। পরে ছেঁকে নিয়ে পান করা যাবে।
(Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, তাই বিস্তারিত জানতে হলে সর্বদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।)