হৃদপিণ্ড শরীরের সমস্ত অংশে রক্ত পাম্প করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হৃদরোগে এই পাম্পিং ক্ষমতাই হ্রাস পায়। ফলে সারা শরীরের সুস্থ রক্ত সংবহন ব্যাহত হতে পারে। এটিই হার্ট ফেলিওর।
হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ক্লান্তি এবং শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। শরীরে অতিরিক্ত জল জমতে শুরু করে, পায়ের পাতা, পেট ফুলে যেতে পারে। বুকেও জল জমতে পারে। শুয়ে থাকলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। চিকিৎসা না হলে এথেকে বড় ক্ষতি হতে পারে।
advertisement
হৃদরোগের কারণ হতে পারে করোনারি আর্টারি ডিজিজ। এতে হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীতে ব্লক তৈরি হয়, যা হার্ট অ্যাটাক ঘটাতে পারে এবং হার্টের পেশির ক্ষতি করতে পারে। ডায়াবেটিস এবং হাইপারটেনশনের মতো সমস্যা সরাসরি হার্টের পেশিকে প্রভাবিত করে করোনারি আর্টারি ডিজিজ তৈরি করতে পারে।
আরও পড়ুন: ডিম আমিষ নাকি নিরামিষ কখনও ভেবে দেখেছেন? উত্তর জানলে চমকে যাবেন
ত্রুটিপূর্ণ হার্টের ভালভও পরবর্তী কালে হার্ট ফেলিওর-এর দিকে নিয়ে যেতে পারে। কার্ডিওমায়োপ্যাথি এমন একটি অবস্থা যেখানে হৃদপিন্ডের পেশি দুর্বল হয়ে যায়। যে কোনও অজানা কারণে এটা হতে পারে অথবা অ্যালকোহল, ভাইরাল মায়োকার্ডাইটিসের মতো সংক্রমণ, ক্যানসারের ওষুধ, কোকেনের মতো ওষুধ ইত্যাদির কারণেও হতে পারে।
হার্ট ফেলিওর-কে ‘ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম’ বা টাকোটসুবো কার্ডিওমায়োপ্যাথি বলা হয়। জন্মের সময়ই হৃদপিন্ড সুগঠিত না থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়ে।
হার্ট ফেলিওর নির্ণয় করা সহজ। পারিবারিক ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা, এক্স-রে, ইসিজি এবং ইকোকার্ডিওগ্রাম হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা জানাতে পারে। কখনও কখনও সিটি স্ক্যান এবং এমআরআই প্রয়োজন হতে পারে।
আরও পড়ুন: দিনে এক কাপ এই চা কোলেস্টেরল-হাই প্রেশার-ওজন কমাবে, খেয়েই দেখুন না!
বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে, ওষুধ খাওয়া এবং সাধারণ কিছু ব্যবস্থার মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। প্রয়োজন হলে তবেই হাসপাতালে ভর্তি এবং ইনজেকশন দেওয়া হয়। রোগের আসল কারণ দূর করতে অনেক সময় অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
অনেক সময় পরিস্থিতি এমন হতে পারে যে ওষুধ কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে। একে টার্মিনাল হার্ট ফেলিওর বলে। তবে এধরনের রোগীর জন্যও চিকিৎসা রয়েছে। তা হল হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন। এমনকী উপযুক্ত হৃদযন্ত্র পাওয়া গেলে কৃত্রিম হৃদযন্ত্রও বসানো যেতে পারে। তবে এগুলি শরীরের বাইরে বসানো হয়। আগামী দিনের উন্নত প্রযুক্তি এগুলিকে সম্পূর্ণ প্রতিস্থাপনযোগ্য করে তুলবে বলেই আশা।
তবে ‘প্রতিরোধই সর্বোত্তম প্রতিকার’, বলছেন ডা. রাজেশ। সুস্থ জীবনযাপন করতে প্রচুর ব্যায়াম ও সক্রিয়তা রাখতে হবে। অলস জীবন ধূমপানের মতোই খারাপ! খাদ্যাভ্যাসে গোটা শস্য, ফলমূল এবং শাকসবজি রাখতে হবে যাতে ওজন স্থির থাকে। ধূমপান এড়িয়ে চলতে হবে। অ্যালকোহল সীমিত করতে হবে।
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, উচ্চ কোলেস্টেরল থাকলে যথাযথ চিকিৎসা করতে হবে। মানসিক চাপ কমানো প্রয়োজন। নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করা দরকার। কোনও সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।
নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের দিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখা জরুরি।