এই সমস্যার পিছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। যার মধ্যে অন্যতম ডায়াবেটিক ম্যাকিউলার এডেমা বা DME। যাঁরা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাঁদের এই ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথির সমস্যা হতে পারে। যা চোখের পিছনের অংশ বা রেটিনাতে প্রভাব ফেলে। ভারতে এমন প্রায় ৭ কোটি ৭০ লাখেরও বেশি ডায়াবেটিস রোগী এই সমস্যায় ভুগছেন। প্রসঙ্গত, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ডায়াবেটিক রোগী আমাদের দেশে রয়েছে (Timely diagnosis and treatment of Eye)।
advertisement
এবিষয়ে নেত্রালয়ম ও BB আই ফাউন্ডেশনের সিনিয়র কনসালটেন্ট চিকিৎসক অনিরুদ্ধ মাইতি বলেন, এর থেকে বাঁচতে বা নিজেকে সচেতন রাখতে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যাঁদের বাড়িতে ডায়াবেটিসের হিস্টরি রয়েছে, বাবা- মা বা পরিবারে ডায়াবেটিক রোগী রয়েছে, তাঁদের প্রতি ৬ মাস অন্তর ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা উচিত এবং যাঁরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের ৬ মাস অন্তর রেটিনা পরীক্ষা করা উচিত। যদি কোনও উপসর্গ নাও থাকে তা-ও পরীক্ষা করা প্রয়োজন। যেহেতু ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি অন্ধত্বের সবচেয়ে বড় কারণ তাই এটির প্রাথমিক পর্যায়েই চিকিৎসা হওয়া প্রয়োজন।
এবিষয়ে জয়পুর অপথানোলজিক্যাল সোসাইটির সেক্রেটারি, সিনিয়র চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও ভিট্রিও রেটিন্যাল সার্জেন, চিকিৎসক বিশাল আগরওয়াল বলেন, বিশ্বে চোখের সমস্যা এবং অন্ধত্বে ভুগছেন এমন মানুষের একটা বড় অংশ আমাদের দেশে রয়েছে। প্রায় ৯০ শতাংশ এমন সমস্যা চিকিৎসাযোগ্য এবং আগে থেকে সচেতন থাকলে তা আটকানো সম্ভব। যদি চোখের ছোট ছোট বিষয়েও ছোট্ট বিনিয়োগ করা যায় জীবন অনেক ভালোভাবে কাটতে পারে। জীবনে ভালো থাকার, উন্নতির এবং লক্ষ্যপূরণের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক ভালো দৃষ্টি শক্তি। চোখের সমস্যা সাধারণত হয়, রিফ্র্যাক্টিভ এরর (চশমা ব্যবহার না করলে), ক্যাটারাক্ট, গ্লুকোমা ও বিভিন্ন রেটিনাজনিত রোগ যেমন ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি ও বয়সজনিত ম্যাকিউলার ডিজেনারেশন থেকে হয়। এগুলির জন্য পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলতে পারেন, একজন তাই সমস্যা হলেই চিকিৎসকরে পরামর্শ নিতে হবে। প্রাথমিত স্তরে চিকিৎসা হলে এগুলি সেরে যাওয়া সম্ভব।
আরও পড়ুন-Viral Video: রোম্যান্টিক ভিডিও থেকে কমেডি! ডান্স ফ্লোরে ধরাশায়ী হলেন স্বামী-স্ত্রী!
গ্যালাক্সি স্পেশ্যালিটি সেন্টারের কনসালট্য়ান্ট অপথামোলজিস্ট ও জয় আই কেয়ার সেন্টারের ডিরেক্টর ড. পুনম জৈনের মতে, ছ'মাস অন্তর নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করা উচিত। যদি কারও এই চোখের সমস্যা থাকে তা হলে তো ঘন ঘন পরীক্ষা করা উচিত। DME-র ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই হয়, রোগীরা জানেনই না এই পরীক্ষা করানো উচিত এবং ৬ মাস অন্তর করানোর উচিত। অনেক সময় যতক্ষণ না বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছায় ততক্ষণ পর্যন্ত রোগীরা বুঝতেই পারেন না তাঁরা এই রোগে আক্রান্ত।
খুব সাধারণ কিছু উপসর্গ-
১. চোখে ঝাপসা দেখা বা সব কিছু ঠিক মতো দেখতে না পাওয়া
২. চোখে সমস্ত রঙ ঠিক মতো দেখতে না পাওয়া
৩. রঙ বুঝতে না পারা বা হালকা হয়ে আসা
৪. দেখার সময় কালো স্পট দেখা গেলে
৫. কোনও সোজা লাইন যদি বাঁকা লাগে
৬. দূরের জিনিস দেখতে সমস্যা
চোখের সমস্যার চিকিৎসা-
যাঁরা ৬ মাস অন্তর চক্ষু পরীক্ষা করাবেন তাঁরা তো বুঝতেই পারবেন চোখে কোনও সমস্যা হলে। যাঁরা পরীক্ষা করান না বা করাবেন না তাঁদের যদি উপসর্গ থাকে তা হলে তড়িঘড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আর এটাই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রথম পদক্ষেপ। এর পর এই ধরনের রোগের একাধিক চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। এর জন্য Ophthalmologist-এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে লেজার ফটোকোগুলেশন (Laser Photo-coagulation), অ্যান্টি-ভিইজিএফ (Anti-VEGF- Vascular Endothelial Growth Factor) বা ইনজেকশন, সার্জারি ইত্যাদি।
এ সবের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইলও মেনে চলতে হবে।