প্রাথমিকভাবে সবাই বলছেন যে কর্মক্ষেত্রে একটি নতুন অভ্যাস ছড়িয়ে পড়ছে, তা হল জাল উৎপাদনশীলতা, বিষয়টি আর কিছুই নয়, প্রচণ্ড চাপের মুখে কাজ এড়িয়ে ব্যস্ত থাকার প্রবণতা। সাম্প্রতিক একটি সূত্র ওয়ার্কহিউম্যান জরিপে দেখা গিয়েছে যে যুক্তরাজ্যের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি কর্মচারী (৩৬%) টাস্ক মাস্কিংয়ের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন, যা ক্রমাগত সক্রিয় থাকার এবং কর্মজীবন-ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য রক্ষার চাপের কারণে ঘটে। সাধারণ কর্মীদের অবস্থা যদি এই হয়, তো টিমলিডাররা উৎপাদনশীলতা নিয়ে উদ্বেগে ভুগছেন: মাইক্রোসফটের ওয়ার্ক ট্রেন্ড ইনডেক্স রিপোর্ট করেছে যে ৮৫% টিমলিডার বলেছেন হাইব্রিড কাজের পদ্ধতিতে উৎপাদনশীলতার উপর আস্থা রাখা কঠিন, এটি এমন একটি বিষয় যা কর্মক্ষমতা এবং ব্যস্ততার পারস্পরিক সম্পর্কে তৈরি হয়েছে।
advertisement
টাস্ক মাস্কিং কেন বাড়ছে
সহজ উত্তর হল কর্মক্ষেত্রে সব সময়ে সক্রিয় থাকার চাপ! সঙ্গে রয়েছে কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাওয়ার চাপ, ফিরে গিয়ে বসের নজরদারিতে পড়ার চাপ! মাইক্রোসফট দেখায় যে লোকেরা ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি এখন টিম মিটিংয়ে যোগ দেয়, আবার, অ্যাটলাসিয়ানের স্টেট অফ টিমসের রিসার্ট রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে ঘন ঘন সোশ্যাল মিডিয়ায় পিং, সেরকম দরকার না থাকলেও মিটিংয়ে যোগদানের কারণে প্রতি বছর কয়েক বিলিয়ন কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়।
শক্তিক্ষয়ের শিকার হচ্ছেন কর্মীরা
কেন কাজের চাপ এখন বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে আগের তুলনায়, সেই বিষয়টির মধ্যে দিয়ে অনেকেই যাচ্ছেন, কিন্তু খেয়াল করছেন না। একটু আগেই বলা হয়েছিল হাইব্রিড পদ্ধতিতে কাজের কথা। এতে ঘন ঘন সোশ্যাল মিডিয়ার মেসেজ দেখা, ভিডিও কলে যোগদান করা ইত্যাদি চোখে আর মস্তিষ্কে চাপ ফেলছে, ফলে খুব সহজেই কর্মীরা ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। জার্নাল অফ অকুপেশনাল হেলথ সাইকোলজির গবেষণা অনুসারে ঘুমের অভাব, অতিরিক্ত ক্লান্তি এবং কর্মজীবনের ভারসাম্যের অবনতির কারণে এই টাস্ক মাস্কিংয়ের জন্ম হয়েছে। ক্লান্তি নিয়ে কাজ করা সহজ নয়, তবে কাজের ভান দেখানো সহজ!
আরও পড়ুন : ছেলেদেরও হয় স্তন ক্যানসার! লক্ষণ কী কী? জানুন কখন মারণ রোগ বাসা বেঁধেছে আপনার শরীরে
কীভাবে কাজের ভান দেখানো হচ্ছে
সহজ ভাবে বললে এ এমন আচরণ যা পরিশ্রম করার ইঙ্গিত দেয়, যেমন- জোরে জোরে টাইপ করা, মিটিংয়ে দ্রুতগতিতে যাওয়া, সর্বত্র ল্যাপটপ বহন করা এবং আদতে আসল কাজ এড়িয়ে চলা। এই আচরণ এখন অনেক অফিসেই ছড়িয়ে পড়েছে। ওয়ার্কহুম্যানের অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে যে যুক্তরাজ্যের ৩৬% কর্মী উৎপাদনশীলতার ভান করার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন, প্রায়শই ক্লান্তি বা কর্মক্ষেত্রের অবাস্তব প্রত্যাশা এড়াতেই তাঁরা এমন আচরণ করে থাকেন।
Male Breast Cancer Symptoms: ছেলেদেরও হয় স্তন ক্যানসার! লক্ষণ কী কী? জানুন কখন মারণ রোগ বাসা বেঁধেছে আপনার শরীরে
কর্মপদ্ধতি কীভাবে প্রভাবিত করছে এমন আচরণ করতে
মনোবিজ্ঞানের একাধিক গবেষণায় এই আচরণকে ঘুমের অভাব, অতিরিক্ত ক্লান্তি এবং কর্মজীবন-ব্যক্তিগত জীবনের সীমানা ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। তবে চাপটি কেবল টেক্সট পিং, ভিডিও কল এবং ই-মেলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়- আসল কারণ হল কাজে উপস্থিত তথা সক্রিয় থাকার বাধ্যবাধকতা।
আগে বলা হয়েছে যে মাইক্রোসফটের ২০২৩ সালের ওয়ার্ক ট্রেন্ড ইনডেক্স অনুসারে মহামারির আগের তুলনায় কর্মীরা এখন প্রায় তিনগুণ বেশি টিম মিটিংয়ে যোগদান করেন। কারণ তাঁদের কাজে সক্রিয়তা দেখাতে হবে, সে শারীরিকভাবে অসুস্থ বোধ করলেও! যেমন, ২০২২ সালের এক গবেষণা দেখিয়েছে যে রিমোট ওয়ার্কে ৮১ শতাংশ কর্মী সক্রিয় থাকেন, অন্য দিকে, অফিসে কাজে সক্রিয় থাকেন ৬৫ শতাংশ। এই সক্রিয় থাকার চাপ টাস্ক মাস্কিংয়ের প্রবণতা বাড়িয়ে তুলেছে।
শেষ পর্যন্ত যা হয়
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গবেষণা দেখিয়েছে যে টাস্ক মাস্কিং শেষ পর্যন্ত কর্মীদের কাজ ছেড়ে দেওয়া বা সঠিকভাবে বললে নীরবে সক্রিয় থাকার ভান করে নতুন কাজ খোঁজার দিকে পরিচালিত করে। বিশেষ করে জেন জেডের মধ্যে এই প্রবণতা বাড়ছে, তারা যা অর্থহীন বলে মনে করে, তা নিয়ে পড়ে থাকতে চায় না বলে! অন্তত গবেষণাগুলো এ হেন মানসিকতার কথাই তুলে ধরছে। তার জন্য দায়ী করছে টিম লিডারদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর চাপ দেওয়াকে, সব মিলিয়ে টিকে থাকার জন্যই অফিসে অফিসে বাড়ছে টাস্ক মাস্কিং!